৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে ‘নিহত’ দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। ঢাকার আশুলিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার ওই নারীর নিহত স্বামী আল-আমিন (৩৪) হাজির হন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায়। তিনি জানান, গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এবং স্ত্রী কুলসুম বেগম (২১) ছিলেন মৌলভীবাজারের বড়লেখায়।
স্ত্রীর মিথ্যা মামলার প্রতিকার চাইলেন আল-আমিন। তার পরিবারের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য উজাড় করা ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছেন দেশবাসী। কারও প্ররোচনায় সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বিচ্ছেদ হওয়ায় জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ভুল ঠিকানায় দিয়ে মামলা করেন ওই নারী।
আল-আমিন লালমনিরহাট সদরের নুরনবী মিয়ার ছেলে। নুরনবী দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুরের বসবাস করেন। আর কুলসুম বেগম মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাংগালার আব্দুল খালেকের মেয়ে।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাভারের আশুলিয়া থানায় যে হত্যাযজ্ঞ হয়, তাতে একজনের পরিচয় এখনো অজানা। তাকেই নিজের স্বামী আল আমিন দাবি করে গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন কুলসুম বেগম। আদালতের নির্দেশে গত ৮ নভেম্বর মামলাটি এফআইআরভুক্ত করে আশুলিয়া থানা। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানা সাব-ইন্সপেক্টর মো. রকিবুল হোসেনকে।
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করলেও কুলসুমের আচরণ ছিল সন্দেহজনক। অভিযোগ উঠে, কারও কারও কাছ থেকে টাকা চেয়ে আসামির তালিকা থেকে নাম কাটানোর প্রস্তাব দেয় ওই নারী। তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, আল-আমিন পরিবারসহ সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় থাকেন। তাকে খুঁজে বের করতে সহায়তা নেওয়া হয় র্যাব-৯ এর। খোঁজ মিলে আল-আমিনের ভাই জাহাঙ্গীর আলমের।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘র্যাবের সদস্যরা জানতে চান আল-আমিন কোথায়? তাদের বলি-যেখানেই থাকুক আমার ভাই সেইফ আছে। তারা বলেন, সেইফটাই আমাদের দরকার। তখন তারা ঘটনা জানানোর পর আমার ভাইকে নিয়ে থানায় এসেছি।’
কথা হয় আল আমিনের সঙ্গে। বাদীর ছবি দেখালে তিনি নিশ্চিত করেন এই নারীই তার স্ত্রী কুলসুম, তার বাবা নুরনবী মিয়াও ছবি দেখেই চিনে ফেলেন।
এ সময় আল আমিন বলেন, ‘কুলসুম আমার স্ত্রী। ১২ আগস্ট পর্যন্ত কুলসুম আমার সঙ্গে মৌলভীবাজারের জুড়িতে ছিল। একটা পারিবারিক ঝামেলার কারণে রাগারাগি হয় ওর সঙ্গে। ও চলে যায় তার বাপের বাড়ি। এরপর থেকে আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নাই। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে দু’তিন দিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে থানায় আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ও (কুলসুম) আমাকে মৃত দেখিয়ে এতগুলো মানুষকে হয়রানি করছে। তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আমিতো জীবিত। যখন আমি জীবিত তারা জানবে, তখন তো আমার ওপর প্রেসার আসবে। এ জন্য ভয়ে আমি থানায় এসেছি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চেয়ে আল-আমিন স্ত্রীর এই কর্মকাণ্ডের বিচার চান।’
এ ব্যাপারে জানতে মামলার বাদী কুলসুমের এজাহারে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল দিলে রিসিভ করেন কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। তিনি একজন কৃষক। কুলসুম নামের কাউকে চিনেন না।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিহুর রহমান সোহেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা কাজ করেছি। পরে ওই ভিকটিম নিজেই থানায় গিয়ে হাজির হয়।’
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন বলেন, ‘আল-আমিন তার ভাই ও বাবাকে নিয়ে থানায় এসে ঘটনা জানায়। তখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টরকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং আল-আমিনকে তাদের হাওলা করেছি।’
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. রকিবুল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’