• ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ওসমানীনগরে প্রবাসীর জায়গা দখলচেষ্টার অভিযোগ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত নভেম্বর ৩, ২০২৪
ওসমানীনগরে প্রবাসীর জায়গা দখলচেষ্টার অভিযোগ

সিলেটের ওসমানীনগরে এক প্রবাসীর ৩৬ শতক জমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামীপন্থী ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলের মদদে তৈরি একটি চক্র এসব জমি দখলের অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা আড়াইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলে ধরেন প্রবাসীর ভাতিজা ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকার গদিয়ারচর গ্রামের মৃত আহমদ আলীর ছেলে মো. সাকার আলী।

তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান- তার প্রবাসী চাচা আব্দুল মোতালিব বারী (৪৮) ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার এলাকার দত্তগ্রাম (কালসারা)-এর মৃত আব্দুল বারীর ছেলে। পরিবার নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। আব্দুল মোতালিবের বাবা আব্দুল বারী ১৯৬৬ সালে স্থানীয় নিরুপমা দেব নামে সনাতনধর্মী এক নারীর কাছ থেকে গোয়ালাবাজারের পাশেই কালাসারা দত্তগ্রাম জামে মসজিদের পশ্চিমে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কসংলগ্ন ৩৭ শতক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে আব্দুল বারী মারা গেলে ২০০৫ সালে বাটোয়ারানামা দলিলের মাধ্যমে এই জমি ছেলে আব্দুল মোতালিবের অংশে পড়ে। আব্দুল মোতালিব দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় বি.এস জরিপের কাজ শুরু হলে এই ৩৬ শতক ভূমি সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। প্রবাসে থাকায় বিষয়টি আব্দুল মোতালিব জানতে পারেননি। এই সুযোগে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা, গোয়ালাবাজার এলাকার ব্রাহ্মণগ্রামের মো. মজনু মিয়া এবং তার ছেলে মো. শারদুল মিয়ার (৪৫) চক্রান্ত ও মদদে তাদের ঘনিষ্ঠ লোক ব্রাহ্মণগ্রামের মো. মাসুক আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা মো. হেলাল মিয়া (৩৮) প্রবাসী মোতালিবের ওই ৩৬ শতক জায়গা আত্মসাতের পাঁয়তারা শুরু করেন। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও উত্তরাধিকারী সনদপত্র তৈরি করে হেলাল তার গোয়ালাবাজারস্থ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিরত পিতবাস কপালী সরকার (২৯) নামে একজনকে পরিতোষ দেব নাম দিয়ে নিরুপমা দেবের ছেলে সাজিয়ে জায়গা জবরদখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে সাকার আলী জানতে পারেন- আওয়ামী লীগ নেতা মো. মজনু মিয়া ও তার ছেলে মো. শারদুল মিয়ার চক্রান্ত ও মদদে তাদের ডানহাত খ্যাত যুবলীগ নেতা মো. হেলাল মিয়া জাল কাগজাদি তৈরি করে তার দোকানে কর্মরত পিতবাস কপালী সরকারকে নিরুপমা দেবের ছেলে পরিতোষ দেব সাজিয়েছেন। এ লক্ষ্যে কপালী সরকার ওরফে পরিতোষের জন্ম ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি হয়েছে মর্মে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এছাড়া একইভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯ সালে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের (তৎক্ষালীন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সামাদ ও ইউনিয়নের সংরক্ষিত (নারী) ওয়ার্ড মেম্বার দিপ্তী রানি দেবের স্বাক্ষরে কপালী সরকার ওরফে পরিতোষকে নিরুপমা দেবের ছেলে বলে উত্তরাধিকার সনদপত্র বের করে নেন। এসব ভুয়া কাগজাদির মাধ্যমে কপালী সরকার ওরফে পরিতোষের কাছ থেকে হেলাল মিয়া নিজের নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামাও বাগিয়ে নেন। সেই আমমোক্তারনামার বলে হেলাল ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মো. শারদুল মিয়ার কাছে ৬ শতক, ২০২১ সালে ব্রাহ্মণগ্রামের হেলাল আহমদ মধু নামের একজনের কাছে ৬ শতক ও ২০২২ সালে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের মো. তারেক আহমদ নামের একজনের কাছে ৩ শতক ভূমি বিক্রয় করে দেন। এভাবে ৩৬ শতক জমিই বিক্রয় করে দেওয়ার পায়তারা করেন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে শারদুল ও যুবলীগ নেতা হেলাল।

এ অবস্থায় প্রবাসী মোতালিব ২০২২ সালে সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি ১নং আদালতে মামলা দায়ের করেন। তদন্তের জন্য আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশ দেন। পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত করে ভুয়া কগজাদি তৈরি ও কপালী সরকার ওরফে পরিতোষ নিরুপমা দেবের ছেলে নয় বলে প্রমাণ পায়। এ মর্মে আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে পিবিআই। মামলায় এক পর্যায়ে অভিযুক্ত শারদুল ও হেলালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে তারা জামিন নিয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাকার আলী আরও জানান- পিতবাস কপালী একপর্যায়ে যুবলীগ নেতা হেলালকে প্রধান আসামি করে কয়েকজনের বিরুদ্ধে সিলেট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি ১নং আদালতে (ওসমানীনগর) প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিলেটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশকে দায়িত্ব দেয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং এ মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। পিতবাস কপালী ছাড়াও আরও দুটি ভূমি দখল ও জালিয়াতি মামলা রয়েছে হেলালের বিরুদ্ধে। এই দুই মামলায় প্রায় ৬ মাস করে জেলও খেটেছেন তিনি।

সাকার আলী বলেন- ‘গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মজনু মিয়া এবং তার ছেলে মো. শারদুল মিয়ার চক্রান্ত ও মদদে তাদের ঘনিষ্ঠজন যুবলীগ নেতা মো. হেলাল মিয়ার অপকর্মে আমার প্রবাসী চাচা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতিতে পড়েছেন। অভিযুক্তরা গত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের হওয়ায় আমার চাচা বা আমরা মুখ খুলতে পারেনি। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।

প্রবাসী পরিবার যাতে এই ভূমিখেকো চক্রের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।