• ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে ব্যবসায়ীর টাকা ‘আত্মসাৎ’

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
সিলেটে ব্যবসায়ীর টাকা ‘আত্মসাৎ’

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন :
ব্যবসায়ীর টাকা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন দুই পার্টনার:
পথে বসিয়েছেন নন্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর এলাকায় একটি ব্রিক ফিল্ড ব্যবসায়ীর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তাঁর দুই পার্টনারের বিরুদ্ধে। পরে এ দুজনের সঙ্গে আঁতাত করে ব্রিক ফিল্ডটি দখল করে ওই ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান আমিরুল।  শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ তুলে ধরেন সিলেট মহানগরের কাজিটুলা এলাকার ৫ নং বাসার (চৌধুরী ভিলা) বাসিন্দা অ্যাডভোকেট হাসিনা মমতাজ।  লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- ‘আমার স্বামী মাহবুবু রহমান ২০১৮ সালে সালুটিকর এলাকার নওয়াগাঁয়ে দু’জন পার্টনারকে নিয়ে ‘মেসার্স রূপালী ব্রিকস’ নামে একটি ব্রিক ফিল্ড গড়ে তুলেন। পার্টনার দুজন হলেন- মাদারীপুর জেলার রাজৈব থানার দক্ষিণ হোগলা গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে মো. শিপন খান ও নওয়াগাঁয়ের মৃত আব্দুস সুবহানের ছেলে নাসির উদ্দিন। এর মধ্যে শিপন আমার স্বামীর আত্মীয়। ব্রিক ফিল্ড স্থাপনকৃত জামির মালিক সানজিদা ইসলাম শিপন খানের স্ত্রী। আমার স্বামী ২০১৯ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত জমি ভাড়া বা লিজের চুক্তিপত্র করেন। পাশাপাশি ব্রিক ফিল্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র তার নিজের নামেই করেন আমার স্বামী। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহিন ও নাসিরের সঙ্গে লিখিত চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হন তিরি। কিন্তু ওই সময় একটি দুর্ঘটনায় আমার স্বামীর বাম পা ভেঙে যায়। ফলে দুই মাস ব্রিক ফিল্ডে যেতে পারেননি। আর এই সুযোগে শিপন খান ও নাসির উদ্দিন ব্রিক ফিল্ডের ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা দামের ২৬ লক্ষ ইট বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেন। পরবর্তীতে আমার স্বামী দুজনের কাছে বাৎসরিক হিসাব চাইলে তারা টাকা না দিয়ে উল্টো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ব্রিক ফিল্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ঋণ ছিলো। অর্জিত টাকা থেকে ঋণ পরিশোধেরও কথা থাকলেও ওই ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা শিপন খান ও নাসির উদ্দিন আত্মসাৎ করায় আমার স্বামীর উপর ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকে।   উপায়ন্তর না দেখে আমার স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিচার চাইলে পরবর্তীতে তাদের উপস্থিতি ও সহযোগিতায় ৫-৬ বার বিচার-সালিশ হলেও শিপন খান ও নাসির উদ্দিন আমার স্বামীর ভাগের টাকা পরিশোধ করেননি। একপর্যায়ে ঋণের বোঝা থাকায় ও কয়লার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে ব্রিক ফিল্ডের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন আমার স্বামী। ব্রিক ফিল্ড বন্ধ থাকা অবস্থায় শিপন খান ও নাসির উদ্দিনের সহযোগিতায় কাগজপত্র জালিয়াতি করে ‘মেসার্স রূপালী ব্রিকস’ নাম পরিবর্তন করে ওই স্থানে ‘মেসার্স নওয়াগাঁও ব্রিকস’ নামে ব্যবসা গড়ে তুলেন স্থানীয় নন্দিরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান আমিরুল।   বিষয়টি জানতে পেরে আমার স্বামী পরিবেশ অধিদপ্তরে ‘মেসার্স নওয়াগাঁও ব্রিকস’ নামের ব্রিক ফিল্ডের ছাড়পত্র বাতিল করার আবেদন করলে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি শুনানি শেষে এ ছাড়পত্র বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক তাদের ছাড়পত্র বাতিলের পরও তারা জোর করে অবৈধভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। আর বিদ্যুৎ লাইন এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর নামে থাকায় তাঁর নামেই বিল জমা হচ্ছে। এতে তাঁর ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিকবার যোগাযোগ করেও তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এ ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান প্রভাব খাটাচ্ছেন।   সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট হাসিনা মমজাত আরও বলেন- ‘সানজিদা ইসলামের কাছ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত আমার স্বামী ব্রিক ফিল্ডের জমি ভাড়া বা লিজ নিলেও সেটির মেয়াদ বহাল থাকলেও তিনি অধিক টাকার লোভে পড়ে অবৈধভাবে অভিযুক্ত তিনজনকে নতুন চুক্তিপত্রে ফের ভাড়া দিয়েছেন। এ বিষয়ে সুবিচার পেতে আমি বাদী হয়ে সিলেট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এছাড়া অবৈধভাবে চলা ব্রিক ফিল্ডের কার্যক্রম বন্ধে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে রিট করেছি। এদিকে, এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরে শুনানির দিন ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান আমিরুল আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং আমাকে প্রাণে মারার হুমকি প্রদান করেন। এ বিষয়ে সিলেটের মোগলাবাজার থানায় আমি গত ২৬ জানুয়ারি জিডি করেছি।  অপরদিকে, আমার স্বামীর টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি শিপন খান ও নাসির উদ্দিন ব্রিক ফিল্ড পরিচালনার সব কাগজপত্র, হিসাব বই, আমার স্বামীর নামীয় অ্যাকাউন্টের ব্ল্যাংক চেকের পাতা ও অলিখিত স্টাম্প তাদের কব্জায় রেখে দিয়েছেন। এসব চেক, স্টাম্প ও কাগজপত্র ব্যবহার করে তারা আমার স্বামীকে বিপদে ফেলার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এসব উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে আমি বাদী হয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মাননীয় সিলেট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদারতে মামলা দায়ের করেছি।   হাসিনা মমজাত বলেন- অভিযুক্ত তিনজনই স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী। ফলে তারা সব মহলেই তাদের অবৈধ প্রভাব খাটাচ্ছে। এ অবস্থায় আমার পরিবার জান-মালের হুমকিতে রয়েছি। সার্বিক বিষয়ে আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি এবং হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।