সিলেটি ভাষায় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এক আলোচিত নাম বেলাল আহমদ মুরাদ। তিনি পেশায় একজন নকল নবীশ। এবার সিলেট সাব রেজিস্ট্রারকে হুমকি দিয়ে অন্যরকম এক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন মুরাদ।
এ অভিযোগে গতকাল সোমবার (৯ অক্টোবর) বহিষ্কার আদেশ প্রদান করেন সিলেট জেলা- রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান এবং পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বালাম বহিতে নকল লিখার কাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে তাকে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা-রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান।
জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর অফিস থেকে একটি আদেশ আসে দেশের সকল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। তাতে বলা হয়-বালাম বহিয়ের লিপিবদ্ধ কাজে উদাসীনতা, কাজে দায়িত্ব পালন না করা, মাসিক কার্যবিবরনি প্রস্তুত না করে মাসিক পারিশ্রমিক নিচ্ছেন এমন নকল নবীশদের সনাক্ত করার। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবীশদের প্রতিদিন ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা দৈনিক বালাম বহিয়ে লিপিবদ্ধ করা এবং দৈনিক কার্য সম্পাদনের ডায়েরী লিখা বাধ্যতামূলক।
এমন আদেশে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান স্বারক নং-৩৬৫ এর মাধ্যমে কার্যালয়ে নিয়োজিত নকল নবীশদের ১২ মাসের পৃথক কার্য তালিকা তৈরীর আদেশ প্রদান করেন।
তবে সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নিয়োজিত সকল নকল নবীশদের পৃথক কার্য তালিকা মিললেও নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের কার্য তালিকায় মিলে ভিন্ন তথ্য। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বহিতে প্রতিদিনের ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা লিপিবদ্ধ করেননি। এছাড়াও দৈনিক কার্য সম্পাদনের ডায়েরী লিখেননি! এমতাবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ন একটি অফিসে কর্মরত আছেন। এ ঘটনায় নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের বেতন বিল বন্ধ করেন সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান।
গত ২৫ জুন দুপুর ২টায় নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে সিলেট সদর সাব- রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান তার কক্ষে অবহিত করেন আপাতত তার বেতন প্রদান করা যাবে না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুরাদ সাব- রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমানের সাথে অশালীন আচরণ করেন। তিনি কিভাবে অফিস করেন তা তিনি দেখে নিবেন বলে হুমকি প্রদান করেন।
পরে এ ঘটনায় সাব- রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান গত ২৬ জুন স্বারক নং- ৩৪৬ এর মাধ্যমে সিলেট জেলা- রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমানের কাছে অভিযোগ করেন। এছাড়াও এই অভিযোগের অনুলিপি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর অফিস সহ সরকারের বিভিন্ন অফিসে প্রেরণ করেন।
তাকে হুমকির পাশাপাশি তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদের কথা মতো অফিস না চললে এই অফিসে বড়ধরনের দাঙ্গা সৃষ্টি বা নাশকতা করবেন বলে সাব- রেজিস্ট্রার সহকারি আব্দুল মালিককে হুমকি প্রদান করেন। বেলাল আহমদ মুরাদের এমন আচরণ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিরাপত্তা, সুষ্টু পরিবেশ ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অফিসের দলিল ও রেকর্ডপত্রের নিরাপত্তা বিধানের মারাত্মক হুমকি স্বরুপ।
এদিকে এ ঘটনায় সিলেট জেলা- রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান গত ৪ জুলাই বালাগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমানকে সভাপতি, বিশ্বনাথের সাব রেজিস্ট্রার মেসবাহ উদ্দিন আহমদকে সদস্য ও কোম্পানীগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার মো. আখলাকুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন প্রদান করার নির্দেশ দেন।
পরে ১৬ জুলাই তদন্ত কমিটির সভাপতি বালাগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমান স্বারক নং- ১০৭ এর মাধ্যমে ১৯ জুলাই নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদ বক্তব্য ও অন্যান্যকে তদন্তে সহযোগীতার জন্য জানান। এসময় মুরাদ তার লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।
পরে তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতাসহ নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বহিতে প্রতিদিনের ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা লিপিবদ্ধ করেননি এবং দৈনিক কার্য সম্পাদনের ডায়েরীও লিখেননি এর সত্যতা পায় এবং এসকল প্রমানসহ সিলেট জেলা- রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান কাছে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করে।
এরই প্রেক্ষিতে নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদকে অফিস থেকে সাময়িক বহিস্কার (পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বালাম বহিতে নকল লিখার কাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ) প্রদান করেন সিলেট জেলা- রেজিস্ট্রার মুন্সী মোখলেছুর রহমান।
হুমকির বিষয় অস্বীকার করে নকল নবীশ বেলাল আহমদ মুরাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল কাজ করছে। আমি আমার লিখিত বক্তব্য আমি তদন্ত কমিটির কাছে দিয়েছি।
দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বহিতে প্রতিদিনের ১২ পৃষ্ঠা করে মাসিক ৩০০ পৃষ্ঠা লিপিবদ্ধ করা হয়নি, এছাড়া দৈনিক কার্য সম্পাদনের ডায়েরী লিখেননি কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নকল নবীশের পাশাপাশি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কাজের জন্য আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। তাই এসব কাজ করতে পারিনি। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, তিনি তার কাজের জন্য অফিস থেকে কোনো ছুটির আবেদন করেননি!