স্টাফ রিপোর্টার : ‘প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা দ্যাই, আমারে সরাইব ক্যাডা। রকিব ভাই আছে হ্যাতেরে জিজ্ঞেস করেন। পুলিশরে ডরাইনা, রকিব ভাই আমাগো নেতা।’ এভাবেই দাপটের সাথে এ প্রতিবেদককে কথাগুলো বলে নগরীর হাসান মার্কেটের সামনের ফুটপাত দখল করে বসে থাকা লিচু বিক্রেতা হিজবুল শেখ। হিজবুল আরো বলে, ‘এখানে আমরা যারা ব্যবসা করি হক্কলেই টাহা দেই নিয়মিত। আমাগো সরাবার ক্ষমতা কারো নেই। হিজবুলের পাশে বসেই আম বিক্রি করছে সেবুল মিয়া। সেবুলের সহজ জবাব ভাই আমরা গরীব মানুষ। ফুটপাত ছাড়া বসে ব্যবসা করার মত জায়গা কিংবা অর্থ আমাদের নেই। সিটি কর্পোরেশনের গেইটের সামনে বসে তরকারি বিক্রি করছেন দক্ষিণ সুরমার শহীদ মিয়া। তারও একই কথা টাকা দিয়ে বসে ব্যবসা করছি। তাড়িয়ে দেবে কে? তবে কাকে টাকা দেন এমন প্রশ্নে শহীদ মিয়া রাগান্বিত হয়ে বলেন, তা দিয়ে আপনি কি করবেন।
সিলেট নগরীর ব্যস্ততম এলাকা বন্দর বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ক্বীনব্রীজ পাড়ি দিয়ে বন্দর বাজার হয়ে শহরে প্রবেশ করেন। কিন্তু ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলা করার কোন উপক্রম নেই। প্রধান ডাকঘরের সীমানা হতে (নগর ভবন, জেলা পরিষদ কার্যালয়, আদালত চত্ব পাড়ি দিয়ে ক্বীনব্রীজের উপর পর্যন্ত হকারদের দখলে। ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার অর্ধেক অংশ দখল করে দাপটের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। হাসান মার্কেটের সামনে অর্ধেক রাস্তা জুড়ে হকার। প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাস্তার উপর বসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। হাসান মার্কেটের সামনের জুতার দোকানগুলোও রাস্তার উপর আলাদা পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। সিলেট পোস্ট অফিসের সামনের রাস্তা এবং ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরে হকারদের দখলে থাকলেও কারো মাথা ব্যথা নেই। খোদ নগর ভবনের সামনে বসেছে অস্থায়ী সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড এবং অবৈধ সবজি বাজার। এগুলো যেন কারো চোখে পড়ে না। এ্ই সড়ক দিয়ে মানুষের পায়ে হাঁটার পথ প্রায় বন্ধ। কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের গেইটের সামনে হকার আর সিএনজি অটোরিক্সার কারণে মুসল্লিদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। অপরদিকে আদালত ভবনের সামনের ফুটপাত এবং জেলা পরিষদের সামনের ফুটপাত একশ্রেণীর দাপুটে হকারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন দীর্ঘদিন থেকে। অথচ সামনেই বন্দর বাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পুলিশ চাইলে হকারদের উচ্ছেদ সময়ের ব্যাপার মাত্র-এমনটি বলছেন ভুক্তভোগীরা।
একই চিত্র নগরীর জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, স্টেডিয়াম মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার। তবে ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রি মাঠ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে আঁকড়ে রেখেছে একটি শক্তিশালী চক্র। সম্প্রতি রেজিস্ট্রি মাঠ দখল নিয়ে দলিল লেখক ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। রেজিস্ট্রি মাঠ দখল নিয়ে ফের আলোচনায় আসেন হকার্সলীগ নেতা রকিব। অভিযোগ রয়েছে রকিবের নেতৃত্বেই দলিল লেখকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ভাই হকারদের নিয়ে বড় বিপদে আছি। সরিয়ে দিয়ে আসলে আবার চলে আসে। তবে সোমবার সিরিয়াস অভিযান চালাবো। নগর ভবনের সামনের অবৈধ স্ট্যান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, সিটি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করে। এটা তাদের কাজ।
মধুবন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী নেতা আলহাজ্ব তুরন মিয়া বলেন, ২০/২৫ বছর ধরে এই হকারদের সরানোর জন্য দাবী জানিয়ে আসছি। ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করেছেন। রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। পুলিশ লোক দেখানো অভিযান চালায়। পরদিন আবার চলে আসে। এর চেয়ে হকারদেরকে ফুটপাত আর অর্ধেক রাস্তা লীজ দিয়ে দিলে ভাল হবে। সরকার লাভবান হবে। এতে জনগণের দুর্ভোগ হলেও কিছু করার থাকবে না।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তিনদিন ধরে মাইকিং করে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে ফুটপাত ছেড়ে দিতে। নগর ভবনের সামন হতে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত এলাকায় কোন হকার থাকতে পারবে না। ব্যবসায়ীরাও রাস্তায় কোন পণ্য রাখতে পারবেন না। অবৈধ স্ট্যান্ড থাকবে না। আগামী ১৮ মে থেকে অভিযানে নামবে সিটি কর্পোরেশন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।