• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকার কাউন্সিলর মিজান আটক, বাসায় কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র উদ্ধার

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১২, ২০১৯
শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকার কাউন্সিলর মিজান আটক, বাসায় কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র উদ্ধার

সিলেট সুরমা ডেস্ক ::
ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে এক কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করেছে র‌্যাব। পাশাপাশি তার স্বাক্ষর সম্বলিত বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বেশ কয়েকটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোতে লেখা টাকার অঙ্ক যোগ করে মোট ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার হিসাব পাওয়ার কথা র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানকে নিয়ে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে লালমাটিয়ায় তার অফিসে এবং মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডের বাসায় তল্লাশি শুরু করে র‌্যাব। সন্ধ্যা ৬টার পর অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার হেফাজত থেকে উদ্ধার সামগ্রীর তথ্য জানান। এর আগে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে কাউন্সিলর মিজানকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের গুহ রোড এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের বাসা থেকে থেকে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের পর মিজানকে রাতেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান, শ্রীমঙ্গল র‌্যাব ক্যাম্পের ডিএডি মো. আব্দুল জব্বার। এর আগে সোমবার রাতে মিজানের খোঁজে আওরঙ্গজেব রোডের ওই বাসায় গিয়ে বিফল হয়েছিলো র‌্যাব।
র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, বাসা থেকে এফডিআর ও চেক উদ্ধারের আগে শ্রীমঙ্গলে গ্রেপ্তারের সময় মিজানের কাছে নগদ দুই লাখ টাকা এবং চার রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল পাওয়া যায়। তার চেক দিয়ে গতকাল ব্যাংক থেকে নগদ ৬৮ লাখ টাকা তুলেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলে প্রয়াত এক বন্ধুর স্ত্রীর বাসায় ছিলেন হাবিবুর রহমান মিজান। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার তিনটি বাড়ি রয়েছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসেও তার একটি বাড়ি রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। টেক্সাসের ওই বাড়ি এবং মিজানের বিরুদ্ধে ফ্রিডম পার্টি সংশ্লিষ্টতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। মিজানকে এখন শ্রীমঙ্গলে নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মুদাপাচার আইনে দুটি মামলা হবে।
শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার গুহ রোডের বাসিন্দা মৃত ফজলুর রহমানের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, মিজান তার মেয়ে জামাইয়ের বন্ধু ছিল। তার মেয়ের জামাই মোস্তাক আহম্মেদ সাত বছর আগে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিজান তাদের বাসায় আসে। এ সময় তার হাতে শুধু একটি ব্যাগ ছিল। এক রাত থেকে পরের দিন (শুক্রবার) সে সিলেটে মাজারে যাবে বলেছে। তিনি বলেন, গত বছরও সে একবার এসেছিল এক রাত থেকে পরের দিন মাজারে গিয়েছিল। সে খারাপ লোক এ কথা জানলে আমরা তাকে বাসায়ই ঢুকতেই দিতাম না।
নূরজাহান বেগমের মেয়ে শিউলি বলেন, মিজান আমার স্বামীর বন্ধু ছিল। এই সুবাদে কয়েকবারই সে আমাদের বাসায় এসেছিল। তার কাছে হানিফ বাসের টিকেট দেখে বুঝা গেছে এবার সে বাসে করে এসেছে। আগে সে গাড়ি নিয়ে আসতো।
মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকের কারবার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যে হঠাৎ করেই লাপাত্তা হন ক্ষমতাসীন দলের নেতা মিজান।
মোহাম্মদপুরের অনেকে এই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে চেনেন ‘পাগলা মিজান’ হিসেবে। কথিত আছে, কয়েক দশক আগে একবার পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে নেমেছিলেন মিজান। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে পরনের পোশাক খুলে রেখে তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেন, সেই থেকে তার ওই নাম।