সিলেট সুরমা ডেস্ক : হযরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার ও খাদেমদের উপর হামলার হুমকী দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে রোববার (১৮ এপ্রিল) শাহপারণ থানায় সাধারণ ডায়রি নং ৮৭৯ দাখিল করেছেন খাদিম আব্দুল আজিজ। সোমবার (১৯ এপ্রিল) মাজার, মসজিদ-মাদ্রাসায় চাঁদাবাজ, দুষ্কৃতিকারী, সন্ত্রাসী ও ভূমিখেঁকোদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে আবেদন করেছেন মাজারের খাদিম, মোতওয়াল্লি ও কর্তৃপক্ষ।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মাজারের পরিবেশ বিনষ্ট এবং আগত ভক্ত-আশেকানগণকে হয়রাণি করে যাচ্ছে স্থানিয় চাঁদাবাজ ও দুষ্কৃতিকারী চক্র। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি হযরত শাহপরাণ (রহ.) দরগা ওয়াক্ফ কমিটির পক্ষ থেকে ওয়াক্ফ প্রশাসক বাংলাদেশ বরাবরে ৭৭৭৭ নম্বর ডায়রিতে লিখিত আবেদন করলে বাংলাদেশ ওয়াক্ফ স্টেট তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ওয়াক্ফ প্রশাসক, বাংলাদেশের অতিরিক্ত সচিব এস,এম, তারিকুল ইসলাম ২০২০ সালের ২৭ জুলাই ( স্মারক নং: ওঃপ্রঃসিঃ সুঃ/২৬ (১)) আদেশে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে পত্র প্রেরণ করেন। এতে মাজারে আগতদের সার্বিক নিরাপত্তা ও মাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়।
এরপূর্বে ২০০৯ সালের ৫ জুলাই বদরুল ইসলাম গং খাদিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লক্ষে ও মোতওয়াল্লী নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যে বর্ণনায় বাংলাদেশ ওয়াক্ফ স্টেট বরাবরে ৪ টি পৃথক দরখাস্থ দাখিল করেন। ওই দরখাস্থগুলো শুনানী শেষে ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর অআদেশে উল্লেখ করেন, উভয় পক্ষের সক্ষ্য, জেরা জবাব এবং উপস্থাপিত কাগজপত্র পরিক্ষা ও পর্যালোচনান্তে মোতওয়াল্লী সৈয়দ মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহহতীতভাবে প্রমানিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মোতওয়াল্লীর পদ থেকে অপসারণের আবেদন না-মঞ্জুর করা যেতে পারে। এছাড়া মাজারের কবরস্থানসহ টিলার জায়গা দখলের জন্য মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মো. গৌছ উদ্দিন পাঁখি মেম্বার জাল কাগজ সৃষ্টি করে সম্পূর্ণ মিথ্যা বর্ণনায় অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালত, সিলেটে স্বত্ত মোকদ্দমা নং ৫৬/৯৫ ইং দাখিল করে। মামলাটি দীর্ঘদিন শুণানী শেষে আদালত কোন সত্যতা না পেয়ে ২৩/০৮/১৯৯৮ ইং সালে খারিজ করেন।
মিথ্যে তথ্য দিয়ে মামলা দাখিল করে হেরে গিয়ে গৌছ উদ্দিন পাঁখি, বেলাল, বদরুল তাদের বাহিনী নিয়ে শাহপরাণ (রহ.) মাজার ওয়াক্ফ স্টেট’র জয়াগা দখল ও চাদঁবাজির জন্য গত কয়েক বছর থেকে নানা ধরণের কৌশল করে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিগত এক মাস থেকে মাজার কর্তৃপক্ষের কাছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে লালখাটঙ্গি গ্রামের বেলাল, বদরুল ও তাজুল। তাদেরকে চাঁদা না দেয়ায় ১৩ এপ্রিল তারাবির নামাজ শেষে মাজারে হামলা ও লুটপাট করে লালখাটঙ্গি গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে বেলাল আহমদ(৪৭), মৃত ফজল মিয়ার ছেলে বদরুল ইসলাম(৩৫), গৌছ উদ্দিন পাঁখি মেম্বারের ছেলে ইমন(২৫), মৃত ফজল মিয়ার ছেলে তাজুল ইসলাম তাজ(৪০), নজমুল (২৬), আনোয়ার মিয়ার ছেলে আলী আহমদ(২৪) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জন। এসময় মসজিদের দান বাক্স ভেঙ্গে প্রায় ১ লক্ষ টাকা, গদ্দিঘরে ভাংচুর করে মোসাফিরের জন্য রাখা প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা লুট হয়। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানার মাজারের খাদিম আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
আবেদনে আরও উল্লেখ্য করা হয়, বেলাল ও বদরুল বাহিনীর কার্যকলাপে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত শাহপরাণ (রহ.) দরাগাহ শরীফ, মসজিদ ও মাদ্রাসার সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিনিয়তই মাজার প্রাঙ্গণে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে ওই বাহিনী। বেলাল ও বদরুল বাহিনীর কারণে মাজারে আগত ভক্ত-আশেকানগণ এবং মাজার, মসজিদ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই মাজারে পরিবেশ এবং শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে,১৩ এপ্রিলের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করায় ওই অভিযোগটি তুলে নেয়ার জন্য নিয়মিত হুমকী দিয়ে যাচ্ছে বেলাল, বদরুল ও তাজ। আর গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) মাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিকেলে খাদিম আব্দুল আজিজের উপর হামলা কওে ওই ৩ জন। এসময় মাজারে হামলা ও কাদেমদেও প্রাণে হত্যার হুমকী দেয়া হয় । এ ঘটনায় রোববার শাহপরাণ থানায় ৮৭৯ নং সাধারণ ডায়রি করেন আব্দুল আজিজ।