ডেস্ক নিউজ ::: সিলেট সদর উপজেলার বড়শলা গ্রাম। এখানে বসবাসকারী মানুষরা অনেকটা সু-শৃঙ্খল ও শান্তি প্রিয়। কিন্তু এই গ্রামে বতুশা বাহিনীর নানা ধরণের অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রামবাসিরা। এ নিয়ে তারা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) বিমানবন্দর থানায় ৫টি সাধারণ ডাইরি করাসহ র্যাব-৯এ এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বরাবরে ২০টি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তবে এর পরও এ বাহিনীর দৌরাত্ব এখনো অব্যাহত আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রামবাসীর সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী ফয়জুল হক বতুশা তার নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের জায়গা দখল, জাল দলিল তৈরি, মারপিট, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকী ও মসজিদের ফান্ডের কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তার এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তার আর রক্ষা নেই। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবাদকারীকে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে মারপিট করাসহ নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে নানা ধরণের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, বতুশা’র এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করেন কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা।
বড়শলা গ্রামবাসী জানান, বতুশা’র বাড়ি হচ্ছে বড়শলা গ্রামের সম্মুখে। তার বাড়ির সামনে দিয়ে সিলেট বিমানবন্দর সড়কে চলাচল করতে হয় গ্রামবাসীদের। ফলে বতুশা গ্রামের মূল সড়কের উপর খুঁটি দিয়ে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে গ্রামের সকল লোকের গতিবিধি লক্ষ করেন এবং সে অনুযায়ী সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাও করেন তিনি।
গ্রামবাসী আরো জানান, বতুশা তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বড়শলা মসজিদের সাধারণ সম্পাদকের পদ ধরে রেখেছেন। স্বঘোষিত এই সাধারণ সম্পাদক মসজিদের ফান্ডের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম কওে যাচ্ছেন। তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে গত বছরের ১৭ নভেম্বর (স্মারক নং-৬১) সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে এলাকাবাসী অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর থেকে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার ছেলে রাফি, তার ভাগনা পারভেজ ও তার বাহিনীর সদস্যরা এখন অপ্রতিরোধ্য। কম নয় বতুশা বাহিনীর সদস্য হেলাল ও চৌকিদেখির রোমান আহমদ মুন্নাও। এদের বিরুদ্ধে ৮ টি করে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, হত্যা, দুদুকের মামলা, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ অস্ত্র আইনের মামলাও রয়েছে। এরা পুলিশ ও র্যাব-৯এর হাতে একাধিকবার গ্রেফতারও হয়ে আবার কারগার থেকে মুক্ত হন।
সূত্র জানায়, বড়শলা গ্রামবাসীর অনুরোধে বতুশা’র কাছে মসজিদের হিসেব চান একই গ্রামের বাসিন্দা ও ক্রিসেন্ট মেডিকেল সার্ভিসের মালিক এবং সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাকির আহমদ চৌধুরী। হিসেব চাওয়ার কারণে ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর রাত প্রায় ১১ টায় বতুশা তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চৌকিদেখির বিলাস কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জাকির আহমদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি বেঁচে গেলেও তার গাড়ি সম্পূর্ণ ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে ওই এলাকার কাউন্সিলর অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন জাকির। সেই মামলায় বতুশা ও তার বাহিনীর আরো ৬ জন উচ্চ আদালত থেকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর (৭০১৭৮ নম্বর মিসকেইস) দুই সপ্তাহের জামিন লাভ করেন।
বড়শলা এলাকাবাসী তাদের মসজিদের নতুন কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সদস্যদেরকেও অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছিলেন বাতুশা। এ বিষয়ে জাকির আহমদ চৌধুরী বতুশার বন্দুকের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করলে, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বিমানবন্দর থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রবাস কুমার সিংহের ২৩ মার্চ ২০ ইং তারিখের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ মে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স নং ৮৩২/১৬৮৭, দোনালা বন্দুক নম্বর ১৯৫২২ জব্দ করেন। এরপর থেকে বতুশা ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে জাকির আহমদ চৌধুরী ও মসজিদ কমিটির বর্তমান সকল সদস্য এবং নিরীহ গ্রামবাসীদেও বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট কল্প কাহিনী সাজিয়ে তার বাহিনীর লোকদের দিয়ে পুলিশের সাথে যোগসাজসে নানা ধরণের মিথ্যা মামলা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাতুশা। ফলে বড়শলা এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
কমিউনিটি পুলিশের ওয়ার্ড সভাপতি সামাদ আহমদ জানান, বতুশা বিভিন্নজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। তার ব্যবহৃত বন্দুক জব্দ হওয়ার পর। সে তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার সাকির আহমদ জানান, বতুশা ও তার বাহিনী বর্তমানে বড়শলার আতঙ্ক। সে তার বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন লোকজনকে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জড়িত করে।
৩ নম্বর খাদিমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তারা মিয়া জানান, বতুশা একটা সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। সে তার বাহিনী দিয়ে জায়গা দখল, দালালি ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া এলাকার লোকজনকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বতুশা এখন একটা আতঙ্কই বলা চলে।
এলাকাবাসীর সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে ফয়জুল হক বতুশা জানান, তার নাম ফয়জুল হক খান। বড়শলা মসজিদের কমিটি ও হিসেব নিকাশি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। তিনি জানান, তার লাইসেন্সকৃত বন্দুক বর্তমানে পুলিশের কাছে জব্দ রয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, যে কারো বিরুদ্ধে অন্যায়-অনিয়ম, দূর্নীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ উঠলে তার তদন্ত করা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।