• ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দাউদপুরে নরসুন্দর পরিবারের বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে টাকা দাবি : মামলা দিয়ে হয়রানি

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জুন ৩, ২০২০
দাউদপুরে নরসুন্দর পরিবারের বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে টাকা দাবি : মামলা দিয়ে হয়রানি

সিলেট সুরমা ডেস্ক :  সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারের দাউদপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে এক নিরীহ দরিদ্র নরসুন্দর পরিবারের বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে টাকা দাবি ও প্রতিবাদ করায় একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার দুপুর ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পাড়ার এলাকাবাসীর পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সাবেক ইউপি সদস্য ও দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মো. সুরুজ আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের বৃহত্তর দাউদপুরের একমাত্র নরসুন্দর পরিবার শিপুল চন্দদের বাড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামে। একই গ্রামের মৃত বীরেন্দ্র পালের পুত্র সুরেন পাল ও তার ভাই-ভাতিজারা লোভী এবং অসৎ প্রকৃতির লোক। গ্রামের পালবাড়ির মধ্যে একমাত্র ওই পরিবারটিই বেপরোয়া ও উগ্র চরিত্রের। সুরেন পাল ও তার ভাই-ভাতিজারা নিতান্ত অন্যায়ভাবে শিপুল চন্দদের নানাভাবে নির্যাতন করছে। এর প্রতিবাদে শিপুল চন্দরা বারবার এলাকাবাসীর কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছে। প্রতিবারই চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি সালিশে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এলাকাবাসীর সামনে সুরেনরা তা মেনেও নিয়েছে। কিন্তু ধুরন্ধর সুরেন পালের গোয়ার্তুমি, পরধন লোভী মনোভাবের কারণে শিপুল চন্দের পরিবার বরাবরই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, দাউদপুর চৌধুরীবাজার প্রান্ত থেকে শিপুল চন্দদের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫ শ’ ফুট হবে। শেষাংশের ভূমি শিপুল চন্দদের পরিবারের। ২০-২২ বছর পূর্বে পালবাড়ি ও শিপুল চন্দের পরিবারসহ এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে এই রাস্তাটি নির্মাণ করেন। রাস্তাটি নির্মাণকল্পে গ্রামের চৌধুরী পরিবার, রঞ্জিত দাশের পরিবার, পালবাড়ি ও শিপুল চন্দের পরিবার স্বেচ্ছায় ভূমি দিয়েছেন। সুরেন পালের বাড়ির সামনে রাস্তার পরিমাণ লম্বায় মাত্র ১৮ ফুটের মতো হবে। মোটামুটি ১০/১২ ফুটের চওড়া রাস্তায় বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছরে এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে টিআর ও কাবিখার মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ হয়। পালবাড়ি ও চন্দবাড়ির লোকজনসহ এলাকার যেকোন মানুষ প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করেন। কিন্তু শুরু থেকেই সুরেন এই রাস্তা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন।

তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সুরেন পালদের পরিবার শিপুলদের পরিবারকে এ রাস্তা ব্যবহারে বাঁধা দেয়। নিরীহ শিপুলরা কারণ জিজ্ঞেস করলে সুরেন বলে, তাদের জায়গার উপর দিয়ে সে শিপুলদের রাস্তা দেবে না। এই রাস্তা ব্যবহার করতে হলে তাকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিতে হবে নতুবা যাতায়াত বন্ধ। বাধ্য হয়ে শিপুল আমাদের বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পঞ্চায়েত যেমন, পশ্চিম দাউদপুর, পূর্ব দাউদপুর, দাউদপুর গাংপার, দাউদপুর মাঝপাড়া ও দাউদপুর কোনারপাড়ার মুরব্বিয়ান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি অবগত করে বিচার চায়। ৫ পাড়ার মুরব্বিয়ানদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে সুরেন ভবিষ্যতে আর কোনদিন রাস্তায় এমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না মর্মে সে প্রতিশ্রুতি দেয়। আর সুরেন পালের আপন চাচাতো ভাই অজিত পাল এবং বিজিত পালও নরসুন্দর পরিবারকে রাস্তা ব্যবহার করতে দেয়ার পক্ষে মত দেন। কিন্তু, সুরেন পাল কয়েকদিনের মধ্যেই সালিশ বৈঠকে মুরব্বিয়ানদের সামনে দেয়া অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়। সে অর্থলোভে আবারও শিপুলদের রাস্তা ব্যবহারে বাঁধা দেয়। কিন্তু তার মৌখিক বাঁধা উপেক্ষা করে শিপুলরা যাতায়াত করতে থাকলে, সে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাড়ির সীমানা বরাবর রাস্তায় ঘর তুলে নেয়। শুধু তাই নয়, শিপুলরা যাতে এই রাস্তা আর কোনভাবেই ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে দাখিল মাদ্রাসার দানকৃত রাস্তার ভূমিও তার নতুন নির্মাণাধীন ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়।

তিনি আরো বলেন, সুরেন পালরা স্থানীয় মুরব্বিদের দেয়া সালিশের রায় না মানায় বাধ্য হয়ে গত ৫ এপ্রিল শিপুল চন্দ মোগলাবাজার থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করে (জিডি নং-২৫০/২০, তারিখ: ০৬/০৪/২০২০)। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত করে সুরেন পাল ও তাঁর ভাই ভাতিজা কর্তৃক রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সত্যতা পায় এবং ভবিষ্যতে রাস্তা বন্ধ না করার জন্য সুরেন পালদের কঠোর সতর্ক করে। এই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ গত ৬ এপ্রিল ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭/১১৭ (সি) ধারায় আদালতে প্রসিকিউশন রিপোর্ট দাখিল করে (রিপোর্ট নং-৩৫/২০২০)। কিন্তু পুলিশের এই নির্দেশের পরও সুরেন পালরা গায়ের জোরে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করেনি। শিপুলদের কান্নাকাটি ও আহাজারিতে শেষপর্যন্ত এলাকার মুরব্বিয়ান ও জনপ্রতিনিধিরা গত ৩ মে সকালে সুরেন পালদের বাড়িতে যান এবং রাস্তার উপর থেকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণের আহবান জানান। কিন্তু চতুর সুরেন পাল মুরব্বিয়ানদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন কল দিলে মোগলাবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পুলিশ এলাকাবাসীর কথা শুনে সুরেন পালকে কঠোরভাবে বললে সে রাস্তার উপর অবৈধভাবে নির্মিত বাঁশ-পালার ঘর তুলে নেয়। ফলে রাস্তা আবারও জনসাধারণে চলাচলের উপযোগী হয়। কিন্তু, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুরেন পাল ষড়যন্ত্রমুলকভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রূপ দিতে সে বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পাড়ার পঞ্চায়েতের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর অপপ্রচার চালায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে এবং আমাদের এলাকার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষার্থে গত ৯ মে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে সুরেন পালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এলাকার হিন্দু-মুসলমানের স্বাক্ষরে থানায় একটি দরখাস্ত দেন। কিন্তু পুলিশ এখনও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে বিগত ৩ মে রাস্তার উপর থেকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সন্ধ্যায় সুরেন পালের ছোট ভাই নিরঞ্জন পাল বাদী হয়ে শিপলু চন্দসহ এলাকার মুরব্বিয়ানদের বিরুদ্ধে তার বাড়িঘর লুটপাট ও গাছ-গাছালি কেটে নেয়ার অভিযোগে মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করে (মামলা নং-০৪/৬০, তারিখ ০৪/০৫/২০২০ খ্রি.)। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। কিন্তু মামলা দেয়ার পরও পুলিশ শিপুল চন্দ এবং এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সুরেন পাল ও তার ভাই-ভাতিজারা মিলে ওই দিন-ই রাত প্রায় ২ টার দিকে শিপুল চন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে। নিরীহ মহিলাদের শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে রাস্তায় চলাচল করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় পরদিন শিপুলদের চাচাতো বোন রিনা রাণী চন্দ বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করে (মামলা নং-০৬/৬২, তারিখ. ০৭/০৫/২০২০ খ্রি.)। মামলার পুলিশী তদন্ত চলছে। এ ঘটনার পর থেকে সুরেন পালের পরিবার বিভিন্নভাবে শিপুল চন্দদের এবং মানবিক কারণে তাদের সহায়তাকারী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাঁদেরকে মিথ্যে মামলা জড়িয়ে হয়রানির অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০১/০৬/২০২০ খ্রি. তারিখে সুরেনের ভাই সুরঞ্জন পালের স্ত্রী সুমিত্রা রাণী পাল বাদী হয়ে শিপুল চন্দসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে নতুন করে আরো ১টি লুটপাট ও মহিলাদের শ্লীলতাহানীর মিথ্যা মামলা রুজু করেছে (মামলা নং-০২/২০২০)। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ অবস্থা কোন সুশীল বা সভ্য সমাজ এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের কাম্য হতে পারে না। আমরা এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করে যাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর দাউদপুর ৫ পাড়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মো. মোবারক আলী, মো. আলাউদ্দিন মিয়া, মো. হেলাল উদ্দিন, বিজিত পাল, শিপুল চন্দ, মো. উস্তার আলী, সুভাষ চন্দ, মো. গোলাম মিয়া, ভজন দাশ, লিহিন আহমদ, মো. মুহিবুর আলী, আব্দুল কাইয়ুম, আলী আহমদ প্রমুখ।