• ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বোহেমিয়ান যুবলীগ : শুদ্ধ নেতৃত্বে ফিরবে গৌরব

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ২৮, ২০১৯
বোহেমিয়ান যুবলীগ : শুদ্ধ নেতৃত্বে ফিরবে গৌরব

জয় চৌধুরী :::::
বোহেমিয়ান এক সময় যাচ্ছে যুবলীগে। চলমান শুদ্ধি অভিযানে সবচেয়ে আলোচনায় এখন দেশের প্রথম এই যুব সংগঠনটি। কি হচ্ছে, কেনএমন হচ্ছে এমন ভাবনায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীীরা। অনেকটা পিলে চমকে গেছে যুবলীগকে ব্যবহার করে টাকার কুমির বনে যাওয়া নেতাদেরও। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে দলের খুদ চেয়ার পার্সন ওমর ফারুক চৌধুরীকে। দোর্দা- প্রতাপে গত সাত বছর যিনি যুবলীগের চেয়াম্যান ছিলেন।
ভুল নেতৃত্বে গৌরবের ইতিহাস হারিয়েছে যুবলীগ। আর এই ভুল নেতৃত্বের অভিযোগের আঙ্গুল সবচেয়ে বেশী উঠছে দীর্ঘ সময় চেয়ারম্যান থাকা ওমর ফারুক চৌধুরীর দিকেই। যুবলীগকে ইচ্ছে-স্বাধীন ব্যবহার করেছেন ওমর ফারুক। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই জাতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী। এ পদ পেয়েই আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন তিনি। আদর্শের এই সংগঠনটিকে দানব সংগঠনে রূপ দিয়েছিলেন । দিকভ্রান্ত পথে যুবলীগকে নিয়ে গেছেন তিনি। নানা অভিযোগের শেষে ক্যাসিনু কা-ে যে দানবীয় রূপ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে পুরো দেশের সামনে। কী করেননি ওমর ফারুক? দলীয় পদ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, ইচ্ছামাফিক পদ দেয়া-পদ বাতিল করা, দেশব্যাপী চাঁদাবজি, টে-ারবাজি, নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণের-এমন শত অভিযোগের অন্ত নেই তার বিরুদ্ধে। ভয়ে কেউ কোন কথা বলতোনা। সবচেয়ে আশ্চর্যের তথ্য- ৭১ বছর বয়সী এ নেতা দীর্ঘ সাত বছর চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে ছিলেন সংগঠনটির। তিন বছর মেয়াদি যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব টেনে অর্ধযুগ পার করেছেন। নানা অজুহাতে যথাসময়ে সম্মেলন করেননি তিনি। নিজেকে তরুণ ভাবাপন্ন ৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একক ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। শুরুতে সাবেক নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই একটি ঢাউস কমিটি গঠন করেন তিনি। নানা বিতর্কিত কর্মকা- ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি অনেক নেতাকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন-এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ফ্রিডম পার্টি ও যুবদলের অনেকে টাকার বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। ওমর ফারুক চৌধুরীর বিষয়ে অভিযোগের অন্ত নেই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে এসে অনেকটাই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। একসময় তামাকের বিকল্প টেন্ডুপাতার ব্যবসা করা ওমর ফারুক যুবলীগের রাজনীতির সুবাদে এখন অঢেল সম্পদের মালিক। এসব করেও পার পেয়ে যাচ্ছিলেন ওমর ফারুক। অবশেষে ধরা খান ক্যাসিনোকা-ে। ঢাকার ক্লাব ব্যবসার আড়ালে যারা অবৈধ জুয়ার ব্যবসা করে আসছেন, তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সখ্য ওমর ফারুকের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, সহসভাপতি এনামুল হক আরমানের ক্যাসিনো ব্যবসার সুবিধাভোগী ছিলেন তিনি। ওমর ফারুকের প্রত্যক্ষ মদদেই ঢাকায় ক্যাসিনোর স্বর্গরাজ্য তৈরী করেছিলেন স¤্রাট-খালেদরা। রিমান্ডে দেয়া জিজ্ঞাসাবাদে এসবের সত্যতাও স্বীকার করেছেন সম্রাট ও খালেদ। ক্যাসিনো দিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছেন ফারুক। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সবকিছরই একটি শেষ আছে। ওমর ফারুকেরও নৈরাজ্যের অন্তিম পরিনতি হয়েছে। ক্যাসিনোকা-ের পর থেকে নিভৃতবাসী হয়ে গেছেন যুবলীগের প্রতাপশীল এই চেয়ারম্যান। তার পাশে এখন আর কেউ নেই। কিছুই নেই। অন্তিম এক হাহাকার ঘিরে ধরেছে থাকে।
এমন শুদ্ধি অভিযানে চোখ-কান খুলে দিয়েছে সবার। পাপের পরিনতি সবসময়ই ভয়াবহ এমন দ্রুব সত্য চোখে আঙ্গুল তুলছে ক্ষমতার অপব্যাবহারকারীদের দিকে। পুরো দেশের মানুষ এই শুদ্ধ অভিযানকে সাবাস দিচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী-যার রক্তে সর্বকালের সেরা বাঙালির রক্ত বহমান, মানবতার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে এখন পুরো বংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর যেমন দীর্ঘদিনের নির্যাতনের যাতাকল থেকে এই দেশ আর মানুষকে মুক্তির আকাশ দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এই দেশ উন্নয়নের সোপানে পৌছাবে এই প্রত্যাশাই এখন পুরো দেশের মানুষের। দুর্ণীতির যাতাকলে পিষ্ট দেশর রাজনীতিও ফিরবে আদর্শের পথে।
আর ক’বছর পরই অর্ধশত বছরে পা দেবে যুবলীগ। আদর্শের এই সংগঠনটি কিছু ভুল নেতৃত্বে পথ হারা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। অথচ সেবার লক্ষ্যেই শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো দেশের প্রচীনতম দল আওয়ামীলীগের প্রধান এই অঙ্গসংগঠনটি। অতীতে এই দেশ আর গণতন্ত্র যখনই পথ হারা হয়েছে, আন্দোলন সংগ্রামে যুবলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে অগ্রভাগে। স্বৈরাচার বিরোধী সেই উনোসত্তেরের উত্তাল সময়ে বুকে গণতন্ত্র মুক্তিপাক লিখে রাজপথে শহীদ হওয়া নূর হোসেন এই যুবলীগেরই সদস্য। আর তাই যে সংগঠনে নূর হোসেনর রক্ত বইছে, সেই সংগঠন কখনই বিপথগামী হতে পারেনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালে যে আদর্শের প্লাটফর্ম থেকে যুবলীগের জন্ম , শুদ্ধি অভযান থেকে ফের সেই গৌরবে ফিরবে দেশের প্রথম আর বুনেদি এই যুব সংগঠনটি-এমন প্রত্যাশা এখন সবার।