সাদেক আহমদ শিকদার,বার্সেলোনা থেকে : সামজিক সংগঠন বলতে সেই সংগঠন সমুহকে বুঝায়, যা কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের সমন্বয়ে শিক্ষা, সংষ্কৃতি ইতাদি সহ সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন কল্পে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত হয়। দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত অনেক গুলি সামাজিক সংগঠনের গঠনতন্ত্র পড়ে দেখছি এদের সবকটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমুহ মুলত একই – বিভিন্ন ভাবে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করা।
একথা ধ্রুব সত্য যে, এসব সংগঠন গুলি যদি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করতো তাহলে, শিক্ষা, সংষ্কৃতি, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারতো। ফলশ্রুতিতে সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন হতো, এমন কি সামজিক শান্তি শৃংখলা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেত। এক কথায় বলা যায় সামাজিক উন্নয়নে, সামাজিক সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারতো; যদি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করতো।
কিন্তু বেশীরভাগ সংগঠনের ক্ষত্রেই বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বৃটেনে ও ইউরোপীয় প্রবাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জেলা, থানা, ইউনিয়ন, এমন কি গ্রাম ভিত্তিক সংগঠনের অভাব নাই। এমন কি অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে একই জেলা, থানা, ইউনিয়ন ভিত্তিক একাধিক সংগঠন ও রয়েছে। আবার দেশেও একই এলাকায় একাধিক সংগঠন রয়েছে। একটু ভাবুন, সকলের উদ্দেশ্য যদি হয় সামাজিক উন্নয়ন, তাহলে একই জেলা, থানা বা ইউনিয়িনের একাধিক সংগঠন কেন?বৃটেনে ও ইউরোপে অনেকগুলি সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছি। আবার ফেইসবুকের মাধ্যমে এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলাপ করে দেশের অনেক সংগঠন সম্পর্কে জেনেছি। এই আলোকেই আমার এই লিখা।
১। বেশীরভাগ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের অলিখিত মূখ্য উদ্দেশ্য থাকে পদবী লাভ করা। সভাপতি, সেক্রেটারি বা কার্যকরী কমিটিতে একটি পদ চাই! এদের ধারণা এসব পদবীর প্রচারে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সংগঠনে পদবী থাকার কারনে দেশে বিদেশে সমম্বর্ধনা পাওয়া যায়। আর যখই এই কাংখিত পদবী পাওয়া যায় না, তখনই উন্নয়নের উদ্দেশ্য চলে যায় ডাস্টবিনে। শুরু হয় গ্রুপিং, ফলশ্রুতিতে একই থানা বা ইউনিয়ন ভিত্তিক আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাও সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ ।
২।অনেক সংগঠনে নীতিমালা অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা না করায় সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় । সংগঠন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সংগঠনের সভাপতি, সেক্রেটারি ও কার্যকরী কমিটির নীতিমালা ও লক্ষ্য উদেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা ।
৩। অনেক সংগঠন আবার সামাজিক উন্নয়নের পরিবর্তে সম্মাননা ও পদবী বানিজ্যে লিপ্ত। এদের সম্মাননা পদবী বানিজ্যের চাপে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে অপসংষ্কৃতি। বেশীর ভাগ ক্ষত্রেই মোটা অংকের দানের বিনিময়ে বা ব্যক্তিগত পরিচয়ের কারণে নির্বিচারে বিভিন্ন উপাধি দেওয়া হয়; যোগ্যতার বিচারে নয়। কৃতি, বিশিষ্ট, সমাজপতি, শিল্পপতি থেকে শুরু করে রত্ন, সাগর, আকাশ, বাতাস… যা ইচ্ছা তাই সম্মাননা পদবী দিতে পারে। অসুবিধা নেই, ক্লিনার, ড্রাইভার, বাবুর্চি যে কেউ টাকা দিলেই এসব সংগঠন থেকে যে কোন সম্মাননা উপাধী পেতে পারে। এখানে একটি কথা বলতে চাই, প্রকৃত গুণীজন বা যগ্যতম দেরকে সম্বর্ধিত করতে আমি উৎসাহী, এতে অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি পায়।আশার আলো একেবারে নিভে যায় নাই; কয়েকটি সংগঠন যে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করছে না, তা কিন্তু নয়। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম।
উন্নয়নের পারস্পরিক সম্প্রতির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেলে সামাজিক সংগঠন সত্যিকার অর্থেই সার্বিক সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। তাই আমদের সকলের উচিৎ হবে, সভাপতি, সেক্রেটারি ইত্যাদি পদবীর লোভ বিসর্জন দিয়ে, সম্মাননা উপাধী বানিজ্যের চিন্তা না করে; সত্যিকার উন্নয়নমূলক কাজের সংকল্প নিয়ে সংগঠন করা। তা করতে পারলেই সম্ভব হবে সমাজের উন্নয়ন করা।