• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

৯৩,৮০০ কোটি টাকার আরও দু’টি মেট্রোরেল প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১৫, ২০১৯
৯৩,৮০০ কোটি টাকার আরও দু’টি মেট্রোরেল প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

সিলেট সুরমা ডেস্ক : রাজধানীতে যানজট নিরসনসহ গতিশীলতা বাড়াতে আজ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও দু’টি মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন করছে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
একনেকের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের এক সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে আনুমানিক মোট আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১লাখ ২৫.২৩ কোটি টাকা।
তিনি জানান, ‘মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৩০ হাজার ৪৬৬.০২ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে, ৫১৫.৮৪ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে এবং ৬৯ হাজার ৪৩.৩ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যানজট নিরসনে আনুমানিক ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাস্ র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (এমআরটি) লাইন ১ ও ৫ বাস্তবায়ন করা হবে।
দু’টি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ২৫ হাজার ২৩২.৬০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসবে এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-র কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৮ হাজার ৫৬৭.৩২ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। ঢাকা মাস্ ট্রানজিট সংস্থা লিমিটেড দু’টি প্রকল্পই বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক বৈঠকে জানানো হয়েছে যে, দুটি মেট্রো লাইন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা ও আনুমানিক ব্যয়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ৫৬১.৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১১.১১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে আসবে এবং বাকি ৩৯ হাজার ৪৫০.৩২ কোটি টাকা জাইকার কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
‘এমআরটি লাইন-১’ হবে ৩১.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ১৬.২১ কিলোমিটার হবে আন্ডারগাউন্ড। আর কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ১১.৩৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেট। এছাড়াও নতুন বাজার থেকে কুড়িল পর্যন্ত ৩.৬৫ কিলোমিটার আন্ডারগাউন্ড ট্রানজিশন লাইন থাকবে।
অন্যদিকে, এমআরটি লাইন-৫ উত্তর ও দক্ষিণ দু’টি রুটে বিভক্ত। এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮.৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার ১২১.৪৯ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও অনুদান থেকে এবং জাইকার কাছ থেকে প্রকল্পের সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।
উত্তরের রুটের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার যার মধ্যে ৬.৫০ কিলোমিটার হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত হবে। এবং আমিনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩.৫০ কিলোমিটার আন্ডারগাউন্ড হবে। এই প্রকল্পটি ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমআরটি লাইন-৫ হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে আমিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-১ এবং নতুনবাজার হয়ে ভাটারা গিয়ে শেষ হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্প রাজধানীর যানজটকে অনেকাংশে সহজ করবে। এতে পরিবেশ-বান্ধব, আধুনিক ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।

সরকার বর্তমানে দিয়াবাড়ি, উত্তরা-মতিঝিল এমআরটি লাইন ৬ নির্মাণ করছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (ত্রৈমাসিক) পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের সার্বিক অবস্থা প্রকাশকালে মান্নান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো এডিপি বরাদ্দের ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ ব্যয় করতে পারে, যার পরিমান ১৭ হাজার ৩ শ’ ৪৪ কোটি টাকা। একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, এতে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৯ শ’ ২৭ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে এমআরটি পদ্ধতিতে সড়ক ও রেলের ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি এমআরটি লাইন ১ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় হাতিরঝিলের সৌন্দর্যে ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন।
শেখ হাসিনা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় শৃঙ্খলা ব্যাহত না করার জন্য পরামর্শ দেন এবং ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত করা যেতে পারে বলেও মত দেন।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণকালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবাসিক ভবনগুলোর দরজা-জানালায় মশা-মাছি রোধক নেট লাগাতে এবং বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আগুন নির্বাপণ ব্যবস্থা, গাড়ি চালকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেন। এর পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস বা এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্যও পরামর্শ দেন, কেননা এখন থেকে আর কোন গৃহ সংযোগ দেয়া হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উপকরণের দাম কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণে আইএমইডিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সভার শুরুতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফরে তিনটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ১৪ শ’ ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা প্রথম সংশোধিত ব্যয়ে ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নিতকরণ, ৪ শ’ ২১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ডোমার-চিলাহাটি-ডাউলাগঞ্জ এবং ডোমার-জলঢাকা এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্থকরণ, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা যথাযথমানে উন্নিতকরণ এবং ৭ শ’ ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে চৈনা-জাশোদল-চৌদ্দাশত বাজার সড়ক নির্মাণ।
এছাড়া একনেকে আরো কিছু উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়, প্রকল্পগুলো হলো-১৭ শ’ ১৯ কোটি ৪৫ রাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশোধিত বাজেট, ১ হাজার ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, ১ শ’ ২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রথম সংশোধিত জজদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৫ শ’ ৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আইএমআইপি) প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সিলেটে বন বিভাগের ৭০ কোটি ৪ রাখ টাকা ব্যয়ে পুনঃঅরণ্যায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন।