সিলেট সুরমা ডেস্ক :
কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের বনপুর এলাকার ‘এডিএম সাবর বাগান’ রক্ষায় অভিযান করেছে উপজেলা প্রশাসন। রবিবার বেলা ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অভিযানকালে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ৮টি লিস্টার মেশিন ধ্বংস করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে পাথরখেকোরা সটকে পড়ায় কাউকে আটক করা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, অভিযানের আগে কয়েকটি মেশিন পাথরের গর্ত থেকে পাথরখেকোরা সরিয়ে ফেলে। দীর্ঘদিন পাথরখেকোদের উৎপাত বন্ধ থাকার পর গত দুই মাস ধরে পাথরখেকো চক্রটি অবৈধ ও জোরপূর্বক বাগানের ভেতর গর্ত করে পাথর উত্তোলন শুরু করে। পাশাপাশি বাগানের পার্শবর্তী গুচ্ছগ্রাম এলাকায়ও মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করে তারা।
অভিযোগ রয়েছে, কাঠালবাড়ির জিন্নাত আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে বনপুরের মৃত মফিজ আলীর ছেলে আলী হোসেন, রমজান আলী, উসমান আলী, মৃত আলী হায়দারের ছেলে তোফায়েল আহমদ ও মোস্তাক তাহির আলীর ছেলে কালা মিয়া ও ফকির, মৃত নছিব উল্লাহর ছেলে আব্দুল জলিল ও খলিল, বিজয় পাড়–য়ার মঞ্জু মিয়ার ছেলে ফিরোজ আলীসহ ১৫-২০ জনের একটি চক্র পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত। এই চক্রের হোতা মোহাম্মদ আলী একই উপজেলার আলোচিত শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংসকারীদের অন্যতম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
‘এডিএম সাবর’ বাগানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় এবং মালিক পক্ষের একাধিক আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। ওই সময় বাগানের ভেতরে ৩টি মেশিন ও গুচ্ছগ্রাম এলাকায় আরও ৫টি মেশিন ধ্বংস করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জীর নেতৃত্বে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অনুপমা দাস, থানার এসআই মিজানসহ পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী বলেন, ‘সরকারি বিধি অমান্য করে যারা পাথর উত্তোলন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’ এ ধরণের অভিযান চলবে বলে তিনি জানান।
থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাথরখেকোদের কারণে এলাকা ধ্বংস হচ্ছে। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে সিলেট নগরীর মিরের ময়দান এলাকার বাসিন্দা এডিএম (পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক) সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী উৎমা সীমান্ত এলাকার বনপুর মৌজায় ২০ একর ভূমি ইজারা নিয়ে বাগান করেন। আশির দশকে তিনি মারা গেলে তার ছেলে এস আই চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত সচিব) বাগানটি দেখভাল করছেন।
ইজারার মেয়াদ থাকাবস্থায় মালিককে না জানিয়ে ২০০৪ সালে স্থানীয় ভূমি অফিস ইজারা বাতিল করে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাগান মালিক হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (নং-৩৪৮৩) করেন। রিটের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২ ফেব্র“য়ারি দীর্ঘমেয়াদী ইজারা নবায়নসহ সরকারকে খাজনা গ্রহণের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। খাজনা গ্রহণের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে জেলা প্রশাসন আপিল করে। উচ্চ আদালতের আপিলের রায় পান ইজারাদার। সুপ্রিমকোর্টে সম্প্রতি রিভিউ করে সরকার পক্ষ। রিভিউ এর শুনানী এখনো হয়নি। এই সুযোগে পাথরখেকোরা বেপরোয়া হয়ে বাগান ধ্বংস করতে নামে। তারা প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকা পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করছিল।