সিলেট সুরমা ডেস্ক : ফ্ল্যাট থেকে ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ ৮০ লাখ টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মুনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
মঙ্গলবার জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পার্থ গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত কার্যকর হবে। এই সময়ে তিনি শুধু খোরাকি ভাতা পাবেন।
গত রোববার ধানমণ্ডির নর্থ রোডের (ভূতেরগলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি পার্থকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
এ ঘটনায় পরদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। গ্রেপ্তারের পর পার্থকে কারাগারে পাঠায় ঢাকার মহানগর বিশেষ জজ আদালত।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো একটি চিঠিতে পার্থকে গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে মামলা সম্পর্কে অবহিত করেছে দুদক।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সাধারণত দুর্নীতির যে কোনো মামলা দায়ের করার পর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়কে অবগত করা আইনগত একটি প্রক্রিয়া। ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে। দুদক থেকে কোনো সুপারিশ করে না।
“সরকারি কর্মচারী আইন অনুসারে মামলা ও গ্রেপ্তারের পর সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পার্থ গোপাল বণিকের বিষয়েও চিঠিতে সেসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে।”
তবে তার আগেই এই কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মামলায় পার্থের বিরুদ্ধে জব্দ করা টাকা নিজের দখলে নিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের অবস্থান গোপন ও পাচারের উদ্দেশ্যে নিজ আবাসিক বাসায় লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের দেয়াল কেবিনেটে হলুদ গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা এবং একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০ লাখ টাকা। এসব টাকার মধ্যে ১০০০ টাকার ৫৯০০টি নোট এবং ৫০০ টাকার ৪২০০টি নোট ছিল।
আটকের সময় ডিআইজি পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারা জীবনের জমানো টাকা। ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি ব্যবহার করেন। যে ফ্ল্যাটে থাকেন তাও তার শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
অন্যদিকে ওই দিন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেছেন, “পার্থের ঘোষিত আয়কর ফাইলে এসব টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত। আর আমরা মনে করি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট তার নিজেরই, সে অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে তাদের নামে ক্রয় করেছেন মাত্র।”
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।
ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী টিম রোববার পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট থেকে ওই সব টাকা উদ্ধার করা হয় বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।