• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক : যোগাযোগ বন্ধে বড় অংকের লোকসানে ব্যবসায়ীরা

sylhetsurma.com
প্রকাশিত জুন ২৩, ২০১৯
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক : যোগাযোগ বন্ধে বড় অংকের লোকসানে ব্যবসায়ীরা

সিলেট সুরমা ডেস্ক : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর থাকা জরাজীর্ণ সেতুর একাংশ ভেঙে যাওয়ার ৬ দিন পরও সেটি মেরামত শেষ হয়নি।  ফলে সারা দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে ছোটখাটো যানবাহন বৃহস্পতিবার রাত থেকে স্বল্প পরিসরে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করছে।

সিলেটের সঙ্গে ঢাকার বাস, ট্রাক সরাসরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলাসহ জেলায় প্রায় শতাধিক নামীদামী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ডেলিভারি যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনি কাঁচামালও সময় মতো পৌঁছাচ্ছে না।

এ কারণে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সামগ্রী বালু, রড, সিমেন্ট না পৌঁছানোয় নির্মাণ কাজ আটকে রয়েছে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা গেছে, এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কয়েক কোটি টাকা।

ভুক্তভোগী অনেকে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটিকে সেভাবে গুরুত্ব দিলে এতটা সময় লাগার কথা ছিল না। উন্নত দেশ হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সমাধান হয়ে যেত।

তারা বলেন, আমাদের এখানে প্রধান সমস্যা হলো- সরকারি কর্মকর্তাসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে জনগণের সমস্যা নিজের সমস্যা হিসেবে দেখেন না। আবার যদি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন তাহলে দেখা যাবে রাতারাতি ভালোভাবে সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এটিই হল কঠিন বাস্তবতা।

এদিকে বিকল্প হিসেবে চান্দুরা আখাউড়া হয়ে ঢাকা যাচ্ছে অনেক পরিবহন। আবার কিছু পরিবহন মাধবপুর উপজেলার রতনপুর-ছাতিয়াইন-নাসিরনগর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড হয়ে মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে।

রতনপুর-ছাতিয়াইন-নাসিরনগর সড়কে ৫ দিন ধরে ভারি যানবাহন চলায় সড়কটির অনেক এলাকা ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। এতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়তি সময় ব্যয় হচ্ছে সড়কে।

মাধবপুর উপজেলার একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গত চার দিন কাঁচামাল নিয়ে কোনো গাড়ি কারখানায় প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রী বালু, রড ও সিমেন্ট না আসাতে কোনো কোনো ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজও আটকে আছে। ফ্যাক্টরির কাজের বালু আশুগঞ্জ থেকে আনতে হয়। শাহবাজপুর এলাকার সেতুর রেলিং ভাঙার কারণে বালুবাহী অনেকগুলো ট্রাক রাস্তায় আটকা পড়েছে।

একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার জানান, কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ তাদের কারখানা পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারাও আসতে পারেনি। মাঝপথ থেকে ফিরে গেছেন। এতে করে কোম্পানির কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সরাসরি ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এলসির বিপরীতে ডেলিভারি দেয়া যাচ্ছে না। ডেলিভারি সময় মতো না হওয়াতে বায়াররা ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক কোম্পানির এলসির মালামাল আটকা পড়েছে। এগুলো সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত আনা সম্ভব হবে না। সরাসরি যানচলাচল বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী ঢাকা ও সিলেটে যেতে ট্রেন ব্যবহার করছেন।

অপরদিকে মাধবপুর থেকে চান্দুরা ও শাহবাজপুর নৌ যোগাযোগ চালু হয়েছে। অনেক যাত্রী মাধবপুর সদর থেকে সোনাই নদী দিয়ে নৌপথে শাহবাজপুর সেতু পার হয়ে ঢাকার গাড়িতে উঠছেন। বিকল্প পথ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ সড়ক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া সড়কে শুক্রবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এতে যানবাহনে থাকা যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন।

সেতুটি মেরামত কাজও হচ্ছে ধীরগতিতে। এতে ক্ষুব্ধ এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। পাশাপাশি আটকে আছে শত শত পণ্যবাহী গাড়ী। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছতে পারছে না এই সব পণ্যবাহী গাড়ি।

সেতু এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সেতুর মেরামত কাজ করা হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। যেতে দেয়া হচ্ছে শুধু হালকা যানবাহনকে। এদিকে সরু ও আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জে লাখাই-হবিগঞ্জ সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড থেকে নাসিরনগরের ধরন্তিঘাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া আঞ্চলিক সড়কের বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। উভয়সড়কেই অত্যন্ত ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন জানান, সেতুটি মেরামতের কাজ চলছে। আশা করি ১০-১১ দিনের মধ্যে মেরামত কাজ শেষ হবে। সিলেটের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকার সুযোগে যেসব যাত্রী অতি জরুরি কাজে বিকল্প পথে ঢাকা যাচ্ছেন কিংবা ঢাকা থেকে সিলেটে আসছেন তাদের কাছে থেকে পরিবহন শ্রমিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাধবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহান জানান, সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দ্রুত সেতু মেরামতের দাবি জানান তিনি।

খাটিহাতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন সরকার জানান, সীমিত আকারে ছোট যানগুলো সেতু দিয়ে চলাচল করছে। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর থাকা পুরনো ও জরাজীর্ণ সেতুটির পূর্ব দিকের রেলিং ভেঙে সেতুর একাংশসহ নদীতে পড়ে যায়। এরপর থেকে সেতুটির উপর দিয়ে ভারি এবং মাঝারি আকারের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।