• ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বেড়েছে মানবপাচার,  ৮ বছরে মানব পাচার আইনে মাত্র ৭৩ মামলা

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মে ২৪, ২০১৯
বেড়েছে মানবপাচার,  ৮ বছরে মানব পাচার আইনে মাত্র ৭৩ মামলা

সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রায় ৫ বছর আগে সিলেটের জকিগঞ্জ এলাকার ১৫ বছরের এক কিশোরকে শ্রমিকের কাজের কথা বলে সৌদি আরব পাঠায় স্থানীয় এক দালাল।

সেখানে নিয়ে তাকে উটের জকির কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। র্দীঘদিন উটের জকি হিসেবে কাজ করে এই কিশোর। একসময় সে অসুস্থ হয়ে পরে।

 

এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। পরে বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফিরে আসে সে। দেশে আসার পর সেই দালাল ও এজেন্সির উপর মামলা দায়ের করে সেই কিশোরের বাবা।

সেই মামলা এখনো বিচারাধীন আছে সিলেট নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে।

 

এই কিশোরের বাবা শেষ পর্যন্ত আদালতের আশ্রয় নিলেও সিলেটে এধরণের বেশিরভাগ ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। থেকে যায় আড়ালে।

স্বজন হারানোর ভয় আর আর্থিক সঙ্কটে পুলিশ-আদালতের দ্বরাস্থ হন না ভূক্তভোগীরা।

 

ফলে সিলেটে মানবপাচার বাড়লেও এ নিয়ে আইনের দ্বরাস্থ হতে আগ্রহী নন ভূক্তোভোগীরা। বরং এসব ঘটনায় পুলিশ-আদালত এড়িয়েই চলতে চান তারা।

ভূক্তোভোগীদের এই লোকচুরির কারণে মানবপাচারের ঘটনা আরও বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিস্টরা।

 

সর্বশেষ গত ৯মে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের আব্দুল আজিজের ভাই মফিজ উদ্দিন মানবপাচার ও মানি লন্ডারিং আইনে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।

এই মামলায় এনামুল হক নামের এক ট্রাভেলস ব্যবসায়ীকে আসামী করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় আজিজসহ এই পরিবারের আরো তিন নিকটাত্মীয় সাগরে ডুবে নিহত হন।

 

সিলেটে মানবপাচারের পৃথক টাইব্যুনাল নেই। নারী ও শিশু নির্যাতন দম ট্রাইব্যুানলেই এসংত্রান্ত মামলাগুলোর বিচার হয়। এই ট্রাইব্যুনালের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সাল মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন প্রণয়নের পর থেকে ২০১৯ সালের চলতি মাস পর্যন্ত মানব পাচারের মামলা হয়েছে মাত্র ৭৩টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৬ টি, বিচারাধীন আছে ৪৭ টি মামলা। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মানবপাচারের মামলা হয়েছে দুটি।

মানবপাচারের তুলনায় এই মামলার সংখ্যা একেবারেই যৎসামান্য বলে মনে করেন সংশ্লিস্টরা।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও মনে করেন, মানবপাচার রোধে দেশে শক্তিশালী আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। আর এর সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীচক্র।

 

গত শুক্রবার সিলেটে নিজ বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মানবপাচার রোধে ৩৬টি আইন রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। ভূক্তোভোগীরাও আইনের আশ্রয় নিচ্ছে না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন একটু তোড়জোড় হয়। এবার আশা করছি পাচারকারীদের কঠিন শাস্তি হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাচারকারীদের শাস্তি না হলে পাচার রোধ করা হঠিন হবে। এ ব্যপারে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ তারা সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে।

 

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটে অবৈধপথে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা আগের চাইতে অনেক বেড়েছে। দারিদ্রতা, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্তিরতা, শ্রমের কমমূল্যসহ নানা কারণে তরুণ ও যুবকদের একটি বড় অংশ যে কোনো উপায়ে বিদেশে বিশেষত ইউরোপ যেতে আগ্রহী। তরুণদের এই বিদেশমুখীতাকে কাজে লাগিয়ে সিলেটে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি মানবপাচারকারী চক্র। এদের মধ্যে নিয়মিতই অবৈধপথে দেশ ছাড়ছে তরুণরা। ইউরোপ ছাড়াও ইদানীং মধ্যপাচারেও বেড়েছে মানবপাচারের ঘটনা। অবৈধপথে যাচ্ছেন নারীরাও।

মাঝেমাঝে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই আলোচনায় ওঠে আসে মানবপাচারের বিষয়টি। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভ’মধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে বহু হতাহতের ঘটনায় ফের আলোচনায় উঠে আসে মানবপাচারের বিষয়টি। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্য ২০ জনই সিলেটের।

সিলেটে মানবপাচারের মামলা পরিচালনাকারী স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট

 

শাহ মোশাহিদ আলী বলেন, সিলেটে মানবপাচারের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই বিদেশ থেকে ফিরে আর মামলা করার সাহস পান না। কারণ বিদেশে যাওয়া আসায় তারা আগেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন। মামলা পরিচালনার খরচ মেটানোর সামর্থ থাকে না তাদের। তাছাড়া নতুন করে তারা ঝামেলায় জড়াতেও চান না। এছাড়া এসব মামলার আসামীরা থাকে বিভিন্ন স্থানের। তাদের ধরে এনে অনেকক্ষেত্রে আদালতে হাজির করা যায় না।

 

পুলিশও ততোটা আন্তরিকতা দেখায় না। এতে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে বেশিরভাগ ভ’ক্তভোগীই মানুষই মামলা করতে আসেন না।

 

সিলেট আদালতে চলমান একটি মামলার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের এক নারীকে দালাল ও এজেন্সির লোকজন মিলে গৃহকর্মীও কাজের কথা বলে সৌদিআরব পাঠায়। কিন্তু সেখানে নিয়ে তাকে দেহ ব্যবসার কাজে লাগানো হয়। পরবর্তিতে দেশে এসে ওই নারী দালাল ও এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তবে এমন ক্ষেত্রে মামলা করার নজির খুবই কম বলেও জানান এই আইন

জীবী।

এদিকে, মানবপাচার রোধে সিলেটে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের অভিযানের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান বলেন, সিলেটে মানবপাচার অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানবপাচারকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত যাদের বৈধতা নেই তাদের জরিমানা ও সতর্ক করে দিচ্ছে। সময় বেঁধে দিচ্ছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে মানুষেরও আরো সচেতনতা দরকার। তারা যেন প্রলোভনে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশ না যায়।

তথ্য সূত্র, সিলেট টুডে ২৪ ডটকম লিংক সংযুক্ত