সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথবাহিনীর নির্যাতন-প্রলোভন সত্ত্বেও আমরা পিছু হটেনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্তা ও বিশ্বাস রেখেছি। এমন কি আরেকটি জেল হত্যাকান্ডের শংকা দেখা দিলেও আমরা তাদের সাথে কোন আপোষ করেনি।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন কারা নির্যাতিত সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
২০০৭ সালের ১৪ মে সিলেট শহরতলীর বটেশ্বরস্থ চাঁদ বাগান থেকে একসাথে ৪০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতারের ১২ বছর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী।
তিনি তার বক্তব্যে ১৪ মে গ্রেফতারের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরার পথে লন্ডনে যাত্রা বিরতি করেন।
ঐ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে বাংলাদেশে আসতে বাধা সৃষ্টি করে। তবু তিনি ৭ মে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে সিলেট থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁনসহ আরো কয়েকজন।
৮ মে তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন।
তখন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী তার বটেশ্বরস্থ বাগান বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজনের আমন্ত্রণ জানান।
১৪ মে সেই আমন্ত্রণে সাঁড়া দিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও জাতীয়-স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাড়িতে উপস্থিত হন এবং মতবিনিময় করেন। গ্রেফতার শুরু প্রসঙ্গে জগলু চৌধুরী বলেন, মোটমুটি খাওয়া-দাওয়া শেষ, সবাই গল্পগুজবে যখন ব্যস্ত ঠিক তখন বাড়িটিতে উপস্থিত হন মেজর তারেক ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তারা উপস্থিত ৪০ জন নেতাকে গ্রেফতার করে বাসে নিয়ে আসে কোতোয়ালি থানায়। সেখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন করেছিল। রাত ১২টায় তাদের একটা প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। শুরু হয় অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার দিন। ১১ দিন পর ২৬ জন নেতাকে জামিন দেওয়া হলেও মিসবাহ সিরাজ, শফিকুর রহমান চৌধুরী, জগলু চৌধুরীসহ অন্য ১৪ জনকে বিভিন্ন টালবাহানা ও অজুহাতে মাসের পর মাস কারাবন্দী থাকতে হয়েছিল।
জগলু চৌধুরী বলেন, এরমধ্যে একদিন সেনাবাহিনীও মহড়ার নামে ঢুকে পড়েছিল কারাগারে। তখন কারাগারের ভেতরে-বাইরে আরেকটি জেল হত্যাকা-ের আশংকা জেগে উঠেছিল। পাশাপাশি যৌথবাহিনী বা সরকারের বিভিন্ন শর্ত মানলেই মুক্তি এমন প্রস্তাব ও প্রলোভনও তাদের দেওয়া হয়েছিল। জগলু চৌধুরী বলেন, আমরা তাদের প্রস্তাব-প্রলোভন হুমকি-প্রত্যাখান করেছি।
নেত্রীর উপর আস্তা রেখেছি। প্রায় ৫ মাস ১১ দিন বন্দী থাকার পর রমজানের শেষের দিকে আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠিনক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাফাক আহমদ, অ্যাডভোকেট জামিলুল হক জামিল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাউর, খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসর আহমদসহ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ মে গ্রেফতারকৃত নেতৃবন্দ। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।