সিলেট সুরমা ডেস্ক : সিলেটের ওসমানীনগরে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু থাকলেও বাঁশের সাঁকোই হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা।
সেতুর কাজে অনিয়ম, সেতুর এক পাশ দেবে যাওয়া আর সেতুর দুই পাশের রাস্তার মাটি ভরাট না করার কারণে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও জনগণ কোনো সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না।
চোখের সামনে সেতুটি দাঁড়িয়ে থাকলেও ১৮ বছর ধরে জনগণের কোনো কাজে আসছে না। তাই বাধ্য হয়েই এ এলাকার জনগণকে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে নদী পার হতে হয়।
২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে সিলেট-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী উপজেলার সাদীপুর ইউপির ইসলামপুর এলাকায় কালনী নদীর ওপর প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছিলেন এ সেতুটি।
সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছিল তৎকালীন বালাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি। কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সেতু নির্মাণের এক বছরের মাথায় সেতুর পশ্চিম পাশ দেবে যায়।
সেতু দেবে যাওয়া আর সেতুর দুপাশের রাস্তায় মাটি না থাকায় গত দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে জনসাধারণের অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সুরিকোনার দিকে সেতুর পশ্চিম অংশ হেলে গিয়ে দেবে গেছে। সেতুতে ওঠার দুই পাশের সড়কের মাটি নেই। নদীর মাঝখানে অব্যবহৃত সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে।
সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার উপযোগী না থাকায় সেতুর পাশঘেঁষে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছেন।
ইসলামপুরের কালনী নদী পার হয়ে বেগমপুর-ওসমানী সড়ক কালনীচর বাবুল মার্কেট হয়ে শেরপুর হয়ে ঢাকা এবং সিলেট জেলা সদরে যাতায়াত করেন সেতুসংশ্লিষ্ট সাদীপুর ইউপির দক্ষিণ কালনীচর, ইসলামপুর, সুরিকোনা, চরতাজপুর, গালিমপুর, মাধবপুর, পূর্ব কালনীচর, উত্তর কালনিচর, নোয়াগাঁও, সম্মানপুর, গুচ্ছগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার আটঘর গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
কথা হয় গালিমপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি লাল মিয়ার (৬০) সঙ্গে। তিনি জানান, লাখ লাখ টাকা দিয়ে কালনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও এলাকার মানুষের কোনো উপকারে আসেনি।
কালনী নদী পারাপারকারী সম্মানপুর গ্রামের কওছর আহমদ বলেন, গালিমপুর বাজার যেতে হলে কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।
সেতু সংশ্লিষ্ট ১ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সোনাই গাজী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি অকেজো। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে যখন যেভাবে যেখানে পারি নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। এলাকার জনগণের দাবির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে।
সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব বলেন, সেতুটি নির্মাণের পর এক পাশ দেবে যাওয়ায় তৎকালীন সময় থেকে মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারছে না। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এত বড় একটি সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
তাই সরকারের কাছে জোর দাবি, এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবে বর্তমান অকেজো সেতুটি ভেঙে নতুন একটি সেতু নির্মাণ করার।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যদি আমাকে একটি লিখিত আবেদন দেয়া হয়, তা হলে এর ভিত্তিতে পিআইও অফিসের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।