সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীত্ব নয়, জাতির পিতার কন্যা হিসেবেই তিনি গর্ব অনুভব করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই পদটাকে কিভাবে উপভোগ করবো সেই চিন্তা করি না, মানুষের কল্যাণে নিজেকে কতটুকু নিয়োজিত করতে পারলাম আমার কাছে সেটাই বিবেচ্য।
প্রধানমন্ত্রী আজ দুপুরে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সরকারের মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।
বিদায় বেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে তিনি সরকারি কর্মচারিদেরকে তাদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি থাকি বা না থাকি, আপনাদের কাছে আবেদন এটাই থাকবে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, কারণ আপনারা সরকারি কর্মচারি। আপনাদের বেতন-ভাতা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকাতেই হয়। কাজেই তাঁদের সেবা করা, কল্যাণ করা, আপনাদের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক বেগম নাসরিন আফরোজ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, এসএসএফ-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুজিবুর রহমান, প্রটোকল অফিসার খুরশীদ আলম, সহকারি পরিচালক মো. মকবুল হোসেন, একান্ত সচিব (২) অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমি কিন্তু নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিন্তা করি না। আমি হচ্ছি বাবার কন্যা ‘ফাদারস ডটার।’ সন্তান হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। আমি জাতির পিতার কন্যা। আমি আপনাদের কাছে এটুকুই চাইবো আপনারা সবসময় আমাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবেই আপনাদের একান্ত আপনজন হিসেবে দেখবেন। সেটাই আমি চাই। সেটাইতেই আমি গর্বিত বোধ করি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীত্ব, এটা একটা দায়িত্ব পেয়েছি। কাজ করার সুযোগ পাই এর মাধ্যমে। দেশের কল্যাণ করার একটা সুযোগ পাই। সেটাই আমার কাছে বড়।’
তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘১০ বছর একটানা থাকায় অনেক কাজ করে যেতে পেরেছি। এখনও বহুকাজ বাকী। সেটাও নির্ভর করে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। আগামী ৩০ তারিখে যদি তাঁরা ভোট দেয় তাহলে আবার আসতে পারবো এবং কাজগুলোকে শেষ করতে পারবো।’
‘আর তা না হলে মানুষের ভাগ্য মানুষ বেছে নেবে। এখানে আমার কোন ক্ষোভ বা দুঃখ নেই। কেননা আমার নিজের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই,’- বলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়াই তাঁর একমাত্র চাওয়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একথা সবসময় চিন্তা করি যে, আমার বাবা এদেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তাঁর মনে যে আকাঙ্খা ছিল মানুষকে নিয়ে, সেই আকাঙ্খা যেন আমি পূরণ করে যেতে পারি। যেন তাঁর আত্মা শান্তি পায়- বাংলাদেশের মানুষ আজ আর কষ্টে নেই তাঁরা দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলেন, ১০টি বছর আপনাদের সাথে কাজ করেছি, আমরা হচ্ছি টেম্পোরারি, আপনারা পার্মানেন্ট। আমরাতো ৫ বছরের জন্যই নির্বাচিত হয়ে আসি।
তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য যে, আমরা দ্বিতীয়বার আসতে পেরেছি। তাই আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আজ দৃশ্যমান হয়েছে। আমাদের এই শাসনামলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হয়েছে।
মঙ্গা পীড়িত দেশের উত্তর জনপদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই উত্তরবঙ্গে আমি বহুবার সফর করেছি। কিন্তু এবার যখন উত্তরবঙ্গে গেলাম তাদের জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।
মানুষের জীবনমানের আরো উন্নয়ন করাই তাঁর সরকারের আগামী দিনের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতেকটি গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি। যাতে সবধরনের নাগরিক সুবিধাগুলো গ্রামের মানুষ পেতে পারে।
তাঁর সরকার উন্নয়নের সমতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে সরকারি কর্মচারি থেকে শুরু করে দলিত হরিজন শ্রেনীর জন্যও ফ্লাট করে দেওয়ার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবে বস্তিবাসীর জন্য আমরা ফ্লাট করে দেব এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেই যেন একটা সুন্দর জীবন পায় সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। কোন মানুষ অবহেলায় থাকবে না।
বিভিন্ন পেশার অধস্তন কর্মচারিদের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাম পরিবর্তন আমি এজন্য করলাম কারণ, তাদের ছেলে মেয়ে যখন শিক্ষিত হয় তখন তাদেরকে নাপিত বা সুইপার বলা অসম্মানজনক হয়। তাছাড়া এখন একটু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তারা কাজগুলো করতে পারে। তাই, এইসব পদবী পরিবর্তন করলাম। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে যখন সরকারে তখন সেনাবাহিনীর অধস্তনদের পদবীটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। এরপর আমাদের প্রশাসন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন তাদের সম্মানজনক একটা পদবী যেন হয় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিছু ব্রিটিশ আমলের পদবি ছিল যেগুলো থাকার কোন যৌক্তিকতাই ছিল না।
সকল ধর্মাবলম্বীদের বাসস্থল এই বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ যেন একটি উৎসব একত্রে উদযাপন করতে পারে সেই চিন্তা থেকেই নববর্ষে ভাতার ব্যবস্থা করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নববর্ষটা যেন সকলে মিলে উদযাপন করতে পারে সেজন্য আমরা বৈশাখি ভাতার ব্যবস্থা করেছি। যাতে সবাই মিলে নতুন বছরটি ভালভাবে উদযাপন করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৪০০ সালের নববর্ষ পালনের জন্য সে সময়ে বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতি বিএনপি জামায়াতের বাধা দেওয়ার কথাও স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আগামীতে আসম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো সেভাবে ধনী-দরিদ্রের এই ভেদাভেদটা থাকবে না। আয়-বৈষম্যটা কমিয়ে এনে সকলে যেন ভালভাবে বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করতে চাই।
বিদায় বেলায় কবি সুকান্তের ভাষায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাব- তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল? এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী পরে তাঁর কার্যালয়ের মেইন গেটের সামনের দেয়ালে স্মৃতিময় ১৯৫২ থেকে ’৭১ এর মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত বাঙালির গৌরবের ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি টেরাকেটার ম্যুরাল পরিদর্শন করেন। ছাত্রলীগ নেতা মুহম্মদ আরিফুজ্জামান নুর নবী এই ম্যুরালের ভাস্কর।