সিলেট সুরমা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষকে যারা গণ্য করে না, তারা কীভাবে আবার ধানের শীষে ভোট চায় আপনারা বলেন? ধানের শীষ ভোট মানেই দুর্নীতি, ৫০০টা বোমা হামলা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা। আর নৌকা মার্কা মানে সমৃদ্ধি, উন্নতি, স্বাধীনতা, জনগণের ভাগ্য উন্নত হওয়া, এ দেশের মানুষের কল্যাণ হওয়া—যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।’
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শেখ হাসিনা গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে নির্বাচনী জনসভায় এ কথাগুলো বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পৌনে চারটার দিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভাস্থলে পৌঁছান। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এটি রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রথম জনসভা, যেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো যোগ দিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তরুণ সমাজের জন্য খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টির সঙ্গে শিক্ষার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। আপনারা দেখেছেন ক্রিকেট খেলায়, ফুটবল খেলায় এগিয়ে যাচ্ছি। তরুণদের মেধা, জ্ঞান কাজে লাগাব আগামীর দেশ গড়তে।’
জনসভায় আগত লোকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাই ও বোনেরা আমার, ২০২০ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সুবর্ণজয়ন্তী আমরা তখনই পালন করতে পারব, যখন নৌকা মার্কায় ভোট পেয়ে আমরা সরকার গঠন করে জনগণের সেবা করতে পারব, তখনই এটা সম্ভব হবে। তাই আপনাদের কাছে আবেদন, আপনারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন, আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকব। সোনার বাংলা গড়ার জন্য আপনাদের ভোট চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা ভোট দেবেন?’ তখন সমবেত লোকজন হ্যাঁ বলেন এবং হাত তুলে সমর্থন জানান।
এরপর তিনি বলেন, ‘নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, আজকে যে জোয়ার উঠেছে, ইনশা আল্লাহ নৌকা মার্কার জয় হবে। সরকার গঠন করে দেশের মানুষের সেবা করব, মানুষকে উন্নত জীবন দেব।’
বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের কোন কোন খাতে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, সেসব বিষয় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মাতৃভাষা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছে, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলে আজ সবার জীবনমান উন্নত হচ্ছে। জীবন যত উন্নত হচ্ছে, ছেলে-মেয়েরা সুযোগ পাচ্ছে, উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলে পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে, বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আপনারা পেয়েছেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।’
জনসভায় বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে দলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আমাদের প্রার্থী যারা আছেন, উত্তরে (ঢাকা উত্তর) আমি তাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই সিট (আসনে) যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা জনসভা করছি, ঢাকা-১৭, এই আসনে আমাদের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, বিশিষ্ট সিনেমার নায়ক। তিনি জনগণের সেবা করতে আপনাদের কাছে এসেছেন, নৌকা মার্কায় আপনাদের ভোট চান।’
অন্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা-১১-এর প্রার্থী এ কে এম রহমতউল্লাহ। তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রপ্তানি করেন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান কামাল, তেজগাঁও-রমনাতে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজকে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে, জঙ্গিবাদ দমন করে এই ঢাকা শহরেও আজকে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করতে পেরেছেন। কাজেই তিনি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চান। ঢাকা-১৩ সাদেক খান। তিনি আমাদের মোহাম্মদপুর এলাকার। এই ঢাকারই সন্তান। জনগণের সেবা করার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা-১৪ আসলামুল হক (যদিও তিনি জনসভায় ছিলেন না), ঢাকা-১৫-তে কামাল আহমেদ মজুমদার আর ঢাকা-১৬ মো. ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লাহ, তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আর ঢাকা-১৮, আমাদের সাহারা আপা, এই যে সাহারা আপা বাংলাদেশে সেই ১৯৬৯-এর ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আমরা একই সঙ্গে রাজপথে সংগ্রাম করেছি। কাজেই ১৯৭০-এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তার অবদান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ভোট ও ভাতের আন্দোলন এবং স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন, সব আন্দোলনে তিনি ছিলেন। কাজেই আমি তাদের জন্য ভোট চাই।’
ঢাকা-১ আসনে সালমান ফজলুর রহমানের জন্যও ভোট চান তিনি।
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়। ওই দিন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারের উদ্বোধন করেন।