সিলেট সুরমা ডেস্ক : সরকার গঠনে প্রত্যেকটি ভোটকে মূল্যবান আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ভোট এবং আসনই মূল্যবান এবং আপনার একটি ভোটই আমাদের সরকার গঠনে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন থেকে একটি আসনও যদি কম হয়ে যায় তাহলেই আমরা সরকার গঠন করতে পারবো না।’
আজ সকালে ভাংগার মোড় এলাকায় একটি নির্বাচনী জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘কাজেই আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের বিজয় নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন।’
ফরিদপুর-৪ আসনের মহাজোট প্রার্থী (ভাংগা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) কাজী জাফরউল্লাহও সমাবেশে বক্তৃতা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা টুঙ্গীপাড়া থেকে রাজধানীতে ফেরার পথে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় দ্বিতীয় দিনে ভাংগায় এই জনসভা করেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই, এই উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার জন্য একটি ভোটও আমাদের কাছে মূল্যবান। ’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সরকারে এসেই সে কাজ বন্ধ করে দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় ’৯৬ পরবর্তী সময়ে তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার এসে বন্ধ করে দেওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ আপনাদের নানাকথায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আপনাদের সবাইকে যার যার নিজের ভোট দিতে হবে এবং জনমত সৃষ্টি করে ভোট কেন্দ্রগুলো পাহারা দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী পরে ফরিদপুরের কামারপুর আব্দুল আজিজ ইনষ্টিটিউশন প্রাঙ্গণেও আরেকটি জনসভায় ভাষণ দেন।
তিনি রাজধানীতে ফেরার পথে আরো ৫টি এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগ এবং জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন। এগুলোরমধ্যে রয়েছে, রাজবাড়ি মোড়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, ধামরাইয়ে রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকা।
এরআগে শেখ হাসিনা সকাল ৯ টায় টুঙ্গীপাড়া থেকে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
যাত্রা শুরুর পূর্বে তিনি জাতির পিতার সমাধি সৌধে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন, ফাতেহা পাঠ করেন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর নির্বাচনী প্রচার আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করেন এবং সেদিন বিকেলে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি ডিগ্রী কলেজ মাঠে বিশাল জননভায় ভাষণ দেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি জনসভায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশবাসীকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট প্রদানের আহবান জানান।
বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এখন দুর্নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে এবং সেজন্য বিশ্বের স্বীকৃতিও আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, একটি দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য অর্জনে নৌকা প্রতীকে আপনাদের ভোট একান্তভাবেই প্রয়োজন।
বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা বেগম মুজিব তাঁদের সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনিও বাংলার মানুষের প্রয়োজনে জীবন দিতে দ্বিধা করবেন না এবং শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তিনি চালিয়ে যাবেন।
দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আলোর পথে যাত্রা শুরু হয়েছে এবং এই অগ্রযাত্রা আর কেউ রুখতে পারবে না।’
নবীন প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তিনি তাঁর বর্তমানকে উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের এই অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখার জন্য এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, যদি জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে পুনঃনির্বাচিত করে তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে দারিদ্র ও ক্ষুধা মুক্ত, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা পাবে।
শেখ হাসিনা এ সময় নৌকায় ভোট দিবেন কিনা, জনগণের কাছে জানতে চাইলে উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে উচ্চকন্ঠে সম্মতি জানায়।
জনগণের প্রতিশ্রুতির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও প্রতিশ্রতি দিচ্ছি আপনারা ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আনলে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আপনাদেরকে উপহার দিব।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতি ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে এবং আওয়ামী লীগ পুণরায় ক্ষমতায় আসলেই কেবল ব্যাপক-উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে এ দু’টি দিবস উদযাপিত হবে। কাজেই আপনারা বুঝতেই পারছেন আপনাদের এক একটি ভোট আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশব্যাপী চলমান সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ এবং মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, যাদের মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি এই সামাজিক ব্যাধিগুলো সমাজ থেকে উচ্ছেদে এ সময় সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
তিনি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ বিশেষ করে মাতা-পিতা,অভিভাবক, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সকল শ্রেনী পেশার জনগণকে এ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহবান জানান, যাতে করে কারো সন্তান যেন ভুল করে এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের পথে পা বাড়াতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সন্তানরা কি করে, কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে সে বিষয়ে আপনাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন,‘আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা এবং যুবসমাজ সুন্দর জীবন এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। যাতে করে তাঁদের মেধাকে আমরা দেশগঠনের কাজে লাগাতে পারি।’
বিদ্যুৎসহ দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সময়োপযোগী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যথাযখভাবে বাস্তবায়নের ফলেই আজকে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হওয়ায় দেশের শতকরা ৯৩ শতাংশ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে তাহলে প্রতিটি ঘরেই আমরা বিদ্যুতের আলো জ্বালবো এবং দেশ ও সমাজকে শিক্ষিত করে আলোকিত করে গড়ে তুলবো।’
তাঁর সরকারের সময়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রসংগ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই জেলাটি একদা অবহেলিত ছিল কারণ ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো এই জেলার উন্নয়নে কিছুই করেনি।
তারা কেবল লুটপাট এবং দুর্নীতিতেই নিমজ্জিত ছিল উল্লেখ করে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ফরিদপুরকে এক সময় ‘ফকিরপুর’ বলেও অবজ্ঞা করা হত।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পরই দেশের অবহেলিত দক্ষিণ জনপদের উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই জেলার মানুষও ভাল করেই জানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই কেবল তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়।
ফরিদপুরকে বিভাগে উন্নীত করার জনগণের দাবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি প্রত্রিয়াধীন রয়েছে এবং আমরা পুণরায় নির্বাচিত হতে পারলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবো।
বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টিও এসব প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
কোমারপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দোকার মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন।