সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেন এবং সুশীল সমাজের কিছু সদস্যের বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানোর কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, তারা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নেতৃত্বের অধীনে চলে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ড. কামাল হোসেন সাহেব সহ যে সুশীল বাবুরা এক জায়গায় হয়ে গেছেন সবাই অনেক নীতির কথা বলে, তাদের সেই নীতি কোথায় গেল? কার অধীনে আজকে তারা মনোনয়ন নিচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এক সময় আইনকেই মানেনি তাদের কাছ থেকে মনোনয়ন নিয়ে তারা নাকি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। তারা জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস দূর করবেন এবং দেশকে নাকি উন্নত করে দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে সশস্ত্র বাহিনীর দেড় শতাধিক সাবেক কর্মকর্তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নৌকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে দেড় শতাধিক সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল ওয়াদুদ, রিয়ার এডমিরাল (অব.) হারুনুর রশীদ, এয়ার কমোডর (অব.) কাজী দেলোয়ার হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) ডা. কানিজ ফাতেমা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসডিয়াম সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বি এম মোজাম্মেল হক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাগণ ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এর মধ্যে ১০৯ জন সেনাবাহিনীর, ১৯ জন নৌ-বাহিনী এবং ১৮ জন বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাকে দুর্নীতিবাজ বলে বক্তৃতা দিয়েছে, তাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আজকে সব ভিড়েছে গিয়ে কোথায়? গণতন্ত্র রক্ষা করতে, গণতন্ত্রের অভাব কোথায়?
এই বিএনপি’র আমলেই দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যে দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় আছে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তারা দলের সদস্যও হতে পারবে না। কাজেই যারা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের জন্য সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত সেই সাজাপ্রাপ্ত মানুষের নেতৃত্বে চলে গেছেন আমাদের এই সুশীল বাবুরা, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে, এটা বাংলাদেশের এক দুর্ভাগ্য।
তিনি এ সময় গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি প্রশ্ন তুলে বলেন, তারা কোন গণতন্ত্র দিতে চায়, তাঁর সংজ্ঞাটি কি? এটা নিশ্চই জনগণের গণতন্ত্র নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জাতির পিতার হত্যাকারী তাদের পুরস্কৃত করা, সামরিক শাসন জারি করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে পর্যন্ত কলুষিত করেছিল, দেশের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে যারা হত্যা করেছিল, একের পর এক ক্যু নিজেই সৃষ্টি করে যারা হত্যাযজ্ঞ চালায়, বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধী, ৭ খুনের আসামীদের যারা ছেড়ে দিয়ে যারা তাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের সাথে হাত মিলিয়ে কোন গণতন্ত্র তারা আনতে চায়, সেটা একটা প্রশ্ন আমার তাদের কাছে।
খালেদা জিয়ার এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলা তাঁর সরকার করেনি বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তাঁর নিযুক্ত সেনা প্রধান মইনউদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রতি ইয়াজউদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফখরুদ্দিন গং মামলা দিয়েছিল এবং ১০ বছর আদালতে মামলা চললেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার কোন রাজনৈতিক মামলা করেনি। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে এনার্জি লস করার চাইতে তিনি বরং দেশের উন্নয়নে নজর দিয়েছিলেন।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কথা বলতে চেয়েছিল এবং তারা যতবার চেয়েছে, আমরা সংলাপ করেছি। আমরা নির্বাচনের একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই তা করেছি।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে সবসময় যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের সম্পর্কে আপনাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে অনেকে আছেন যারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন এবং নীতি-নৈতিকতার বুলি আওড়ান। কিন্তু আমরা অনেক সময়ই দেখেছি যখন ব্যক্তিগত স্বার্থের কোন ব্যাপার আসে তখনই আর নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই থাকে না।
বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে তাঁর উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই তাঁকে হারিয়ে ফেলা সমগ্র দেশের জন্যই ছিল এক অপূরণীয় ক্ষতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যেই দেশকে তিনি উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পারতেন।’
জাতির পিতার আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আদর্শ এবং চেতনা বাস্তবায়নেই আমার সকল প্রচষ্টা। এর জন্য আমি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করার এবং দেশের দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার স্বপ্ন, চেতনা এবং আদর্শ নিয়ে আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু আমার একটাই চিন্তা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার মাধ্যমে তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা এবং স্বাধীনতার সুফলকে প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া, আমি এটা অবশ্যই করবো।
বিগত ১০ বছরে দেশের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশের ওপর থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, এ হারকে তাঁর সরকার আরো ৪ থেকে ৫ ভাগ কমিয়ে এনে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করতে চায়।
দেশের বর্তমান জিডিপি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ থাকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রবৃদ্ধির হারকে দুই অংকে নিয়ে যাওয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই এবং কারো সঙ্গেই কোন প্রকার যুদ্ধে জড়াতে চাই না। কিন্তু যে কোন ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে।’
সশস্ত্র বাহিনীকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেটা মাথায় রেখেই আমরা এই বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং উন্নয়ন সাধন করে যাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি চমৎকার প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন এবং আমরা এখন তাঁর সেই নীতিতেই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন করছি।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আগত সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং নির্বাচনে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে।’
ঢাকা, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) :