• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলকে বিদায় দিয়ে ৩২ বছর পর সেমিফাইনালে বেলজিয়াম

প্রকাশিত জুলাই ৭, ২০১৮
বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলকে বিদায় দিয়ে ৩২ বছর পর সেমিফাইনালে বেলজিয়াম

সিলেট সুরমা ডেস্ক : ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনাল থেকে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে বিদায় দিলো বেলজিয়াম। গতরাতে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ার্টারফাইনালে বেলজিয়াম ২-১ গোলে হারায় ব্রাজিলকে। এই পরাজয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই নিয়ে পঞ্চমবারের মত কোয়ার্টারফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো ব্রাজিলকে। তবে ১৯৮৬ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো বেলজিয়াম। শেষ আটে বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। যারা গতকাল টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ার্টারফাইনালে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারায়। টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে ১০ জুলাই মুখোমুখি বেলজিয়াম-ফ্রান্স।
মুখোমুখি লড়াইয়ে বেলজিয়ামের বিপক্ষে এগিয়ে ছিলো ব্রাজিল। পাশাপাশি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই ভালো পারফরমেন্সে শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল নেইমার-মার্সেলোরা। এছাড়া গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ঐ আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের স্মৃতি মুছে ফেলার মঞ্চ হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপকে বেছে নিয়েছিলো তিতের শিষ্যরা। তাই টুর্নামেন্টের শুরুতে সুইজারল্যান্ডের কাছে হোচট খেলেও ভেঙ্গে পড়েনি। জয়ের মধ্য দিয়ে কোয়ার্টারফাইনালে পা রাখে ব্র্রাজিল।
কিন্তু বেলজিয়ামের বিপক্ষে শেষ আটের ম্যাচটি দুর্ভাগ্য দিয়ে শুরু হয় ব্রাজিলের। ৮ মিনিটেই ব্রাজিলের সামনে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় বেলজিয়ামের গোলবার। নেইমারের কর্নার থেকে বলে পা লাগিয়েছিলেন ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। কিন্তু তা সাইড পোস্টে গিয়ে আটকে যায়।
১১ মিনিটে আবারো ভালো একটি আক্রমন করে ব্রাজিল। স্ট্রাইকার উইলিয়ানের নেওয়া কর্নার থেকে বল পেয়েছিলেন মিডফিল্ডার পাওলিনহো। কিন্তু তাঁর দুর্বল ভলি বেলজিয়াম ডিফেন্ডাররা রুখে দেন।
তবে ১৩ মিনিটে ব্রাজিলের দুর্ভাগ্য বড় আকারে হাজির হয়। আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে ব্রাজিল। বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার এডেন হ্যাজার্ডের নেওয়া কর্নার রুখে দিতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনহো। তার ডান-হাতের কনুইয়ে লেগে বল চলে ব্রাজিলের জালে। ফলে আত্মঘাতি গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বেলজিয়াম।
গোল হজম করে বেশি মাত্রায় আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে ব্রাজিল। ফলে রক্ষণদূর্গ হয়ে পড়ে দুর্বল। এই সুযোগে গোলের ব্যবধান দ্বিগুন করে নেয় বেলজিয়াম। ৩১ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে স্ট্রাইকার রোমেলু লোকাকুর পাস থেকে বল নিয়ে ব্রাজিলের বক্সের বাইরে থেকে তীব্র শটে বলকে প্রতিপক্ষের জালের স্পর্শ দেন মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা। তার দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান ২-০ করে ফেলে বেলজিয়াম।
দু’গোল হজম করে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে খেলার চেষ্টা করে ব্রাজিল। কিন্তু তাদের আক্রমনগুলো ব্যর্থতায় রুপ নিচ্ছিলো বেলজিয়ামের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায়, আবার কখনো বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবাউট কর্টুইসের দুর্দান্ত নৈপুন্যে। ফলে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে ম্যাচের বিরতিতে যেতে হয় ব্র্রাজিলকে।
দুই গোল হজম করলেও বল দখলে ম্যাচের প্রথমভাগে এগিয়ে ছিলো ব্রাজিল। ৫৭ শতাংশ বল দখলে রেখেছিলো নেইমার-সিলভারা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে আক্রমনে ব্যতিব্যস্ত রাখে বেলজিয়ামকে। ৫১ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে ক্রস করেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্সেলো। কিন্তু বেলজিয়ামের গোল পোস্ট ফাঁকা থাকলেও ঐ বলে ব্রাজিলের কেউই পা ছোয়াতে পারেননি।
৬২ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে বেলজিয়ামের বক্সের ভেতর প্রবেশ করেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ডগলাস কস্তা। বক্সের ভেতর থাকা সতীর্থদের উদ্দেশ্যে পাস দেন কস্তা। তবে ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে বলকে বক্সের ভেতর থেকে সরিয়ে দেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক । গোল বঞ্চিত হয় ব্রাজিল।
পরের মিনিটেই পাল্টা ব্রাজিল সীমানায় হানা দেয় বেলজিয়াম। মধ্যমাঠ থেকে মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনার বাড়ানো পাস থেকে বল নিয়ে ব্রাজিলের বক্সের কাছাকাছি পৌঁছে গোলমুখে শট নেন এডেন হ্যাজার্ড। তার শট ব্রাজিলের বার ঘেষে চলে গেলে অল্পের জন্য তৃতীয় গোল পায়নি বেলজিয়াম।
৭০ মিনিটে আবারো আক্রমন করে ব্রাজিল। কিন্তু এবার নেইমারের শট রুখে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্টুইস।
তবে ৭৬ মিনিটে ব্রাজিলকে গোল এনে দেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামা মিডফিল্ডার রেনাটো অগাস্টো। মিডফিল্ডার ফিলিপ কুটিনহোর ক্রস থেকে হেডে গোল করেন অগাস্টো(২-১)।
ব্যবধান কমিয়ে মধ্যমাঠের দখল নিয়ে আক্রমনের ধারা বজার রাখে ব্রাজিল। ৮১ মিনিটে মিডফিল্ডার পলিনহোর পাস থেকে বেলজিয়ামের ডি-বক্সের কাছাকাছি থেকে গোলমুখে শট নেন মধ্যমাঠের আরেক খেলোয়াড় কস্তা। কিন্তু কস্তার শট বেলজিয়ামের গোলবার ঘেষে বাইরে চলে যায়।
ইনজুরি টাইমে অর্থাৎ ৯৪ মিনিটে নেইমারের শট কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্টুইস। ফলে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় ব্রাজিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হারতেই হয় ব্রাজিলকে। ফলে ৩২ বছর পর সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আনন্দে নেচে উঠে বেলজিয়াম।সূত্র: বাসস