সিলেট সুরমা ডেস্ক : টাইব্রেকারে ডেনমার্ককে হারিয়ে ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনালে উঠলো ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালের পর এবং নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপ আসরে দ্বিতীয়বারের মত শেষ আটের টিকিট পেল ক্রোয়েশিয়া।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও ১-১ সমতা থাকা ম্যাচে টাইব্রেকারে জয় তুলে নিয়ে কোয়ার্টারফাইনাল নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া। গতরাতে নক আউট পর্বের চতুর্থ ও দিনের শেষ ম্যাচে পেনাল্টি শুটে ক্রোয়েশিয়া ৩-২ গোলে হারায় ডেনমার্ককে। এই জয়ে ফ্রান্স, উরুগুয়ে, রাশিয়ার পর চতুর্থ দল হিসেবে চলতি বিশ্বকাপের শেষ আটে উঠলো ক্রোয়েশিয়া।
গ্রুপ পর্বে শতভাগ সাফল্য নিয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। তবে এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়েই ছিলো ডেনমার্ক। মাত্র এক জয়ে গ্রুপ রানার্স-আপ হয় তারা। তবে এসব পরিসংখ্যান যে, শেষ ষোলোর ম্যাচে কাজে আসবেনা সেটি ম্যাচের প্রথম মিনিটেই প্রমান করে ডেনমার্ক। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই আক্রমনে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিপদ সীমানায় জটলার মধ্যে ছয় গজ দূর থেকে বাঁ-পায়ের শটে গোল করেন ডিফেন্ডার ম্যাথিয়াস জর্গেনসেন। ৫৭ সেকেন্ডে জর্গেনসেনের করা গোলে ম্যাচে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ডেনমার্ক।
শুরুতেই গোল পেয়ে নিজেরাও অবাক ডেনমার্ক। অবাক ক্রোয়েশিয়াও। তবে গোল হজম করে ভড়কে যায়নি তারা। ৪ মিনিটে আক্রমন করে ডেনমার্ক সীমানায় জটলার বল পেয়ে ডান-পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত শটে বলকে জালে প্রবেশ করান ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচ। ম্যাচে ১-১ সমতা আনে ক্রোয়েশিয়া।
এরপর বল দখলের চেষ্টা করে ক্রোয়েশিয়া ও ডেনমার্ক উভয় দলই। ফলে আক্রমন-পাল্টা আক্রমনে চলে ম্যাচের প্রথমার্র্ধ।
২৭ মিনিটে মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের যোগান দেয়া বলে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন ডেনমার্ক স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রেইথওয়েট।
এরপর ৩৯ মিনিটে লুকা মড্রিচের ক্রসে ডেনমার্কের গোলবারের খুব কাছ থেকে হেড নিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ডেজান লভরেন। কিন্তু সেটি ছিলো লক্ষ্যভ্রস্ট। ৫ মিনিট পর আবারো ডেনমার্কের সীমানায় আক্রমন চালায় ক্রোয়েশিয়া। এবার মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচের শট রুখে দেন ডেনমার্কের গোলরক্ষক ক্যাসপার শেমিচেল। ফলে ১-১ সমতাতেই শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধে সমানতালে লড়াই করা ক্রোয়েশিয়া ও ডেনমার্ক পরের অর্ধের শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক ছিলো। তাই দু’দলের লড়াই উত্তেজনা ছড়ায় ম্যাচটি। যা ছিলো না স্পেন ও রাশিয়ার ম্যাচে।
৫৬ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডেনমার্কের ব্রেইথওয়েটের আচমকা শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে ৬৪ মিনিটে ভালো সুযোগ তৈরি করেছিলো ক্রোয়েশিয়া। রাকিটিচের পাস থেকে বল নিয়ে ডেনমার্কের বক্সের ভেতর ঢুকে শট নেন মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ। কিন্তু তার শট রুখে দেন ডেনমার্কের গোলরক্ষক ক্যাসপার শেমিচেল।
এরপর দু’দল আরও কয়েকবার আক্রমন শানায় গোলের জন্য। কিন্তু কাঙ্খিত গোলের দেখা পাচ্ছিলো না। ফলে দ্বিতীয়ার্ধ শেষে ম্যাচটি ১-১ সমতায় শেষ হয়। এতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে প্রথমার্ধে গোলের একটিই ভালো সুযোগ পায় ডেনমার্ক। ৯৯ মিনিটে মিডফিল্ডার লাসে শোনোরে শট ক্রোয়েশিয়ার বার ঘেষে চলে যায়। ফলে এই অর্ধেও গোলের স্বাদ নিতে পারেনি কোন দল।
তবে অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে ক্রোয়েশিয়া। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ডেনমার্কের সীমানায় ঢুকে পড়েন স্ট্রাইকার এ্যান্টে রেবিচ। গোলরক্ষককে একা পেয়ে কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টে গোলের সুযোগ পান রেবিচ। এমন সময় রেবিচকে পেছন থেকে ফাউল করেন ডেনমার্কের জাঙ্কা। ফলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি।
১১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মড্রিচ। বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়াকে গোল বঞ্চিত করেন ডেনমার্কের গোলরক্ষক শেমিচেল। এরপর বাকী সময়ে আর গোল না হলে ম্যাচটি গড়ায় ট্রাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম শট থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি কোন দলই। দু’টি শটই দু’দলের গোলরক্ষক রুখে দেন। তবে পরের দু’টি শট থেকে ঠিকই গোল করে দু’দল। চতুর্থ শটে আবারো কারিশমা দেখান ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ ও ডেনমার্কের গোলরক্ষক শেমিচেল। ফলে চতুর্থ শট থেকে গোল পায়নি দু’দল। এ অবস্থায় চারটি করে শট শেষে টাইব্রেকারে স্কোর ২-২।
নির্ধারিত পঞ্চম ও শেষ শটে ডেনমার্কের নিকোলাই জর্গেনসেন পেনাল্টি আটকে দেন ক্রোয়েশিয়ার সুবাসিচ। ফলে নিজেদের পঞ্চম ও শেষ শটে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে জয়ের স্বাদ দিয়ে কোয়ার্টারফাইনালের টিকিট এনে দেন রাকিটিচ।সূত্র:বাসস