• ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি বিজ্ঞানীদের আরো গবেষণা বাড়াতে হবে : মতিয়া চৌধুরী

প্রকাশিত নভেম্বর ১, ২০১৫
কৃষি বিজ্ঞানীদের আরো গবেষণা বাড়াতে হবে : মতিয়া চৌধুরী

সিলেট সুরমা ডেস্ক : কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দেশীয় ফলজ উদ্ভিদের জাত সুরক্ষার পাশাপাশি বিদেশী উন্নত ফল চাষের ক্ষেত্রে খাপ খাওয়ানোর উপায় খুজে বের করতে আরও গবেষণা বাড়ানোর জন্য কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ফলদ বৃক্ষরোপন পক্ষ (২২ জুন- ৬ জুলাই) এবং জাতীয় ফল প্রদর্শনী ২০১৮ এর (২২-২৪ জুন) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতাকালে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “দেশীয় ফলের জাতের সুরক্ষার পাশাপাশি আমাদেরকে বিদেশী উন্নত ফলের উৎপাদন বা চাষের ক্ষেত্রে খাপ খাওয়ানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া মে থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে দেশে প্রায় যে ৬০ ভাগ ফল পাওয়া যায় তার সময়সীমা যাতে বাড়ানো যায়, সেজন্য কৃষিবিজ্ঞানীদের আরও গবেষণা বাড়াতে হবে।”
‘অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রা, ফলের পুষ্টি দেবে নতুন মাত্রা’ প্রতিপাদ্যে ২২ জুন থেকে ৬ জুলাই দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৮।
এ উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বরে ২২ থেকে ২৪ জুন তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার ফল মেলা উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৮’র উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
পরে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন পুষ্টিসমৃদ্ধ ফলের অবদান’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন। সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়া বা দূর্যোগপ্রবণ এলাকায় ফলদ গাছ কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় ও ফলদ বৃক্ষের বিস্তার ঘটাতে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণা বাড়িয়ে এর উপায় খুজে বের করতে হবে। এটা করা সম্ভব হলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করবেন বলে তিনি দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন।
মতিয়া চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাঁঠালকে জাতীয় ফল হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন উল্লেখ করে বলেন, এটি খুব সুস্বাদু ও এর পুষ্টিগুণ অপরিসীম। এক সময় গাজীপুরে প্রচুর পরিমাণে কাঠাল ও তাল গাছ দেখা যেত, কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে তা দিন দিন কমে আসছে।
তিনি বলেন, তাই কলমের মাধ্যমে কাঠাল গাছ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কাছ করছে। এটা করা সম্ভব হলে জাতীয় ফল কাঁঠালের উৎপাদন বা সম্প্রসারণ বাড়ানো সম্ভব হবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করেছে। কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিশ্বের জন্য মডেল হয়ে দাড়িয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিতে আমাদেরকে নিয়মিত ফল খেতে হবে। আর এই ফলের চাহিদা নিশ্চিতে আমাদেরকে বসত-বাড়ির আঙিনায় দেশীয় ফলদ গাছ লাগাতে হবে এবং তাদের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করেছে। এখন আমেেদর দরকার সুষম খাদ্য, আর এই সুষম খাদ্যের মূল অনুষঙ্গ ফল। এক সময় দেশে ফল শুধুমাত্র রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহার বা খাওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা ও উদ্যোগের ফলে মানুষের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ফল যুক্ত হয়েছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান এই সিনিয়র সচিব।
সেমিনারে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক নির্মিত প্রতিপাদ্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে পোস্টার, লিফলেট ও বুকলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ফলদ বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োচন করা হয়। মেলায় ৯টি সরকারি ও ৫১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট ৮১টি স্টল অংশ নিয়েছে। মেলায় আমের ৭০টির বেশি প্রজাতিসহ প্রায় ২০৩ প্রজাতির ফলের একাধিক জাত প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়াও মেলায় রয়েছে জাতীয় ফল কাঁঠালের একটি বিশেষ কর্ণার।
আয়োজকরা জানান, মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখানে আসা দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে এবং রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল কিনতে পারবেন বলে তারা জানিয়েছেন।সূত্র:বাসস