সিলেট সুরমা ডেস্ক : ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ (শুক্রবার)। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার বিকাল তিনটায় উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এ সম্মেলন ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরই মধ্যে সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।দেশের ছাত্র রাজনীতির পাওয়ার ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ছাত্রলীগের সম্মেলন। যদিও এ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়নি নতুন কমিটি। ২৯তম জাতীয় সম্মেলনেই একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে। কারা আসছেন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এই নিয়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের জল্পনা কল্পনা। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটির শীর্ষ পদে কাদের ঠাঁই হচ্ছে, তা দেখতে কেবল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই নয়, মুখিয়ে আছে রাজনীতি সচেতন সব মহল।ছাত্রলীগের নেতৃত্বে উপযুক্ত ও মেধাবীরাই আসবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হবে। সমঝোতা না হলে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হবে।ক্ষমতাসীন দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসবেন, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের একাধিব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও এরকম একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওইসম তিনি বলেন, সম্মেলনে কোনো প্রার্থীর নাম প্রস্তাব ও সমর্থনের প্রয়োজন নেই। যোগ্যতার ভিত্তিতে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও মেধার বিবেচনায় সিলেকশন পদ্ধতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হবে।সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুডবুকে থাকা ত্যাগী ও যোগ্য নেতারাই নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে আসবেন বলে ধারণা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপিত সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।এবারের সম্মেলনে তিনশরও বেশি নেতা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী। প্রধান দুই পদ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। ২৯তম জাতীয় সম্মেলনেই একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে।আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে গঠন করা হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা বেশ আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। তারা মনে করছেন, এবার তারা দলের মূল্যায়ন পাবেন। থেমে নেই সংক্ষীপ্ত পথে নেতা তকমাধারীদের তৎপরতাও। নিজেদের তল্পিতল্পা বহালে কমিটিতে থাকাটা তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বভাবতই তদবীর-লবিংয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের মন গলানোর কসরতে সুবিধাবাদীরাই এগিয়ে। পদ প্রত্যাশীদের তদবীর-লবিংয়ে বিরক্ত আওয়ামী লীগে শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করে বলছেন, ছাত্রলীগ থাকবে ক্যাম্পাসে-দলীয় কার্যালয়ে পদের লোভেই এখন তাদের গন্তব্য হয়ে ওঠেছে নেতাদের বাসা ও অফিস।অভিযোগ ওঠেছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার ড্রাইভার-গানম্যানের সিভিও জমা পড়েছে। আবার অনেক নেতার ব্যক্তিগত স্টাফ-কর্মচারীরা কমিটিতে পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ছাত্রনেতাদের কাছে থেকে নাকি সিভি জমা নিয়েছেন। প্রার্থীরাও ধর্না দিচ্ছে নেতাদের বেতনভুক্ত এসব কর্মচারীর কাছে। তদবীর-লবিংয়ে এগিয়ে আছেন তারাই, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে রেজিস্টার বিল্ডিং- নগর ভবন- শিক্ষা ভবন- বিদ্যুৎ ভবনসহ নানা এলাকায় টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজর বিস্তর অভিযোগ। পদপ্রত্যাশীদের ভিড়ে এমন অনেকেই অাছেন যাদের ব্যাংক ব্যালেন্স-লেনদেন নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিবার বিএনপি-জামাতের সাথে যুক্ত, এমন অভিযোগও ওঠেছে। এমনকি আদম তমিজী হকও ছাত্রলীগে ভাগ চাইছেন, তার এফবি প্রোফাইলে এমনই ইঙ্গিতই চোখে পড়ে! দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা নাকি পদপ্রত্যাশীদের অনেক রকম আশ্বাসও দিচ্ছেন। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগি ছাত্রনেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। তারা বলছেন, ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার- বিভিন্ন নেতারা বানরের পিঠাভাগের মত এখন এটা ভাগ করে নিতে চাচ্ছে।ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন ,সম্মেলনের মাধ্যমে মেধাবী, পরিশ্রমী এবং রাজপথের পরীক্ষিতরাই নেতৃত্বে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ীই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।