প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৌশলীদের সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। কাজেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আপনারা পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন।’
শেখ হাসিনা শনিবার দুপুরে আইইবি খুলনা সেন্টারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (ইআইবি)-র ৫৮তম কনভেনশন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামত বিষয়ে প্রচুর গবেষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, বিকল্প জ্বালানি ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, স্বল্প-ব্যয়ে বাড়িঘর নির্মাণের কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডকে টেকসই করার জন্য পরিবেশ বান্ধন অবকাঠামো, ভূমিকম্প ও দুর্যোগ প্রবণ প্রযুক্তির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশের সকল নির্মাণ কাজে যেন বাইরের থেকে প্রযুক্তি ধার করতে না হয়। আমাদের প্রকৌশলীরাই সব কিছুতে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক তরুণ ও মেধাবী প্রকৌশলী পৃথিবীর কোন কোন দেশের ‘আইটি ভিলেজে’ অনেক দক্ষতা ও সুনাম অর্জন করেছে।
এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
ইআইবি’র প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর, ইআইবি খুলনা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাদিক এবং কনভেনশন আয়োজক কমিটির আহবায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
তিনি বলেন, এ কনভেনশনের মাধ্যমে আপনারা বিগত দিনের কর্মকা-ের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ, বিশ্লেষণ-পর্যালোচনা করেন। ভবিষ্যতের জন্য দিক-নির্দেশনা তৈরি করেন, যা আমাদের দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি এ সময় দেশের কীর্তিমান প্রকৌশলী ড. এম.এ. রশীদ, ড. এফ. আর. খান, আইইবি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী এম.এ. জাব্বারসহ আরও যাঁরা নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষা এবং পেশাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে প্রকৌশলীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, অতি অল্প সময়েই মধ্যেই তিনি বিধ্বস্ত রাস্তা, সেতু, কল-কারখানাসহ সকল অবকাঠামো সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা দেশকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ‘৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর থেমে যায় উন্নয়নের চাকা। দেশ আবার পিছনের দিকে যাত্রা করে।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার দেশ শাসনের দায়িত্ব নিয়ে দেশের উন্নয়নে মনোনিবেশ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই প্রকৌশলীদের পাশে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ মেয়াদে আমরা আইইবি ভবন নির্মাণের জন্য রমনায় ১০ বিঘা জমি প্রদান করি। আইইবি ভবন নির্মাণে প্রথম ৫ কোটি টাকা এবং এর উর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণের জন্য পরে আরও ২৩ কোটি টাকা অনুদান দেই। ১৯৯৭ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের জন্য ৭২ বিঘা জমি প্রতিকী মূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করি। স্টাফ কলেজের ১ম এবং ২য় পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়নের জন্যও ৪৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, খুলনা কেন্দ্রের জন্য কেডিএ-এর জায়গা বরাদ্দ, পূর্বাচলে আইইবি’র জন্য ২ বিঘা জমি, রাঙ্গাদিয়া, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, দিনাজপুর কেন্দ্র এবং ফেনী ও কক্সবাজার উপকেন্দ্রের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৭টি প্রকৌশল সংস্থার প্রধান’কে গ্রেড-১ প্রদান করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা এখন আর পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশকে ডিজিটালাইজেশন এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, আমরা ই-গভর্নেন্স চালু করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা দেশবাসীর দোরগোড়ায় বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দিতে চাই। প্রকৌশলীদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে চাই।
তিনি এ সময় বিএনপি’র কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ১৯৯১-এর বিএনপি বিনে পয়সায় আন্তঃমহাদেশীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তাদের মূর্খতা ও অজ্ঞতার কারণে ঐ বিনে পয়সার সংযোগ থেকে আমরা তখন বঞ্চিত হই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৯৬-এ দায়িত্ব গ্রহণের পর এ সংযোগ গ্রহণের উদ্যোগ নিই। আন্তঃমহাদেশীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে আমরা অংশীদার হয়েছি। এই সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ কোন কারণে কাটা পড়লে টেলি ও ইন্টারনেট সেবা বিঘিœত হয়। এজন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এর ফলে এ সঙ্কট দুর হওয়ার পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবার সার্বক্ষণিক সুবিধা পাবে দেশের মানুষ।
তিনি বলেন, টেলিফোন ও মোবাইল ফোনকে গ্রামের মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিয়েছি। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন বর্তমানে ২-৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছি।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
প্রধানমন্ত্রী ৩টায় খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে ৪৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৫২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন।
খুলনা, ৪ মার্চ, ২০১৮ (বাসস) :