• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভোলায় হাঁস পালনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি

প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮

সিলেট সুরমা ডেস্ক : ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে হাঁস পালন করে দরিদ্রকে জয় করেছেন বহু পরিবার। বিচ্ছিন্ন এসব দ্বীপগুলোতে প্রচুর বিলাঞ্চল ও সমতল জমি থাকায় এখানে হাঁস প্রতিপালন অনেকটাই সহজ। চারদিকে নদী-খাল থাকায় প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর শামুক, ঝিনুক, কচুরিপানা ও ছোট মাছ পাওয়া যায় এখানে। যা হাঁেসর প্রধান খাদ্য। এর মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে অনেকের। চরগুলোতে সম্পূর্র্ণ নিজেদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শত শত হাঁসের খামার। এসব খামারে উৎপাদিত ডিম গ্রামের হাট-বাজার হয়ে চলে যায় শহুরে দোকানগুলোতে। সাম্প্রতিক সময়ে চরাঞ্চলে বেকারত্ব দূর করতে হাঁস পালনে আগ্রহ বাড়ছে বেকারদের। চর চটকিমারা, ভেলুমিয়া চর, ভেদুরিয়া চর, চর রমেশ, চর চন্দ্রপ্রসাদ, মাঝের চর, চর গাজীসহ জেলার ৫০টিরও বেশি চরে সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও হাঁস পালনে এগিয়ে আসছে।উপজেলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর চটকিমারা গ্রাম। খেয়া নৌকার মাধ্যমে প্রায় ১০ মিনিটের তেতুলীয় নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় এ চরে। প্রায় দেড় হাজার মানুষের বসবাস এ গ্রামে। এখানে হাঁস পালন করে অনেকেই বেকারত্ব দূর করেছেন। ভাগ্য বদলেছে এখানকার বহু পরিবারের। বসত ঘরের পাশে নেট (জাল) দিয়ে গোড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। প্রতিটি খামারে ৪’শ থেকে ১ হাজার হাঁস রয়েছে। কথা হয় হাঁস খামারী মো: আলাউদ্দিন মিয়া (৪০) এর সাথে। তিনি গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঁস পালন করে আসছেন। বসত ঘরের পাশের জমিতে গোড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। প্রথমে ২’শ হাঁস দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার প্রায় ৭’শ হাঁস রয়েছে। দৈনিক প্রায় ৫’শ ডিম হয় তার খামারে। ১’শ ডিম ৯’শ টাকা মূল্য হারে তার ৪হাজার ৫’শ টাকার ডিম বিক্রি হয় দৈনিক। অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে তার ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ হয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে হাঁসগুলোকে ধান খায়ানোর পর নদী, খাল অথবা বিলের ধারে চড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে খামারে নিয়ে এসে আবার খাবার দিতে হয়।মো: মোসলেউদ্দিন (২৮) বাসস’কে বলেন, গত ৪ বছর যাবত তিনি হাঁস পালন করছেন। আগে কৃষি কাজ করলেও অধিক লাভের আশায় হাঁস পালন শুরু করেছেন। বর্তমানে তার ৫’শ হাঁস রয়েছে। দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩’শ ডিম হয় তার খামারে। ডিম বিক্রি করে তিনি স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন বলে জানান।
শুধু মোসলেউদ্দিন ও আলাউদ্দিন নয়, হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল করেছেন অনেক খামারী। এর মধ্যে আবুল কালাম (৩২) ৫’শ হাঁস রয়েছে। রুবেল (৩০) ৪’শ হাঁস, ইউসুব জমাদ্দার (৩৩) সাড়ে ৩’শ হাঁস, জসিমউদ্দিন (৩০) ৫’শ হাস, আব্দুল হাই (৩৫) ৬’শ হাঁসসহ প্রায় অর্ধশত খামারে হাজার হাজার হাঁস রয়েছে। শুধু হাঁস প্রতিপালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে এসব পরিবার। ডিমের পাশাপাশি এ শীতে হাঁস বিক্রি করেও লাভবান হয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: সিরাজ গোলদার বাসস’কে বলেন, চটকিমারায় অনেক দিন থেকেই হাঁস পালন করে আসছেন পরিবারগুলো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বানিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত হচ্ছে। হাঁস পালনে স্বল্প খরচ হওয়ায় অনেকেই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করছি।এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের বাসিন্দারা কৃষি কাজ ও মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত। আবার কেউ কেউ গবাদি পশু-পাখি পালন করেন। প্রায় অর্ধশত পরিবার হাঁস পালনের সাথে সম্পৃক্ত। প্রতিটি পরিবারই এখন অভাবকে জয় করেছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায় নিয়মিত। পারিবারিকভাবে প্রায় প্রতিটি বসত ঘরে হাঁস লালন করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে বর্তমানে হাঁস পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতে করে বদলে যাচ্ছে অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর জীবনমানসহ সার্বিক চিত্র।ইলিশা ইউনিয়নের মাঝের চরের খামারী জোছনা বেগম জানান, তার স্বামী কৃষি কাজ করেন। তার খামারে ৫’শ হাঁস রয়েছে। তিনি ছেলেকে নিয়ে খামার পরিচালনা করেন। হাঁস পালনে তেমন পরিশ্রম হয়না জানিয়ে বলেন, সকালে এসব হাঁস তার ছেলে বিল ও নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে দলবদ্ধ ভাবে শামুকসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খামার খায় তারা। সন্ধ্যের আগে আবার খামারে নিয়ে আসা হয়। তারপরেও দিনে ২বার করে তাদের খাবার হিসেবে ধান দিতে হয়। দৈনিক প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ হয় ৫’শ হাঁসের জন্য। আর লাভ হয় প্রায় ২ হাজার টাকা।জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আলমগীর বাসস’কে জানান, জেলায় বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬শতাধিক হাঁসের খামার গোড়ে উঠেছে। এসব খামারে বর্তমানে ১৭ লক্ষ হাঁস রয়েছে। একটি উন্নত জাতের হাঁস বছরে আড়াই’শ থেকে ৩’শ ডিম দেয়। এসব খামারীদের সাথে উঠোন বৈঠক, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও প্রচার পত্র বিলি মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে সব ধরনের গারিগরি সহায়তা।তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে প্রাণি সম্পদ চলতি অর্থবছরে জেলার প্রতি উপজেলায় ৫০ জন করে মোট ৭উপজেলায় ৩’শ ৫০ খামারীকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে। এছাড়া জেলায় সরকারিভাবে হ্যাচারীসহ হাঁস প্রজনন খামার রয়েছে। ফলে এখানথেকেই খামারীরা হাঁসের ডিম ও উন্নত জাতের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ (বাসস)