• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কুলাউড়া হাসপাতালের সিট ছাড়ছেন না অনশনরত বিএনপি নেতা

প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮

সিলেট সুরমা ডেস্ক : টানা ৪ দিন যাবৎ অনশন পালনরত বিএনপি নেতা আবেদ রাজাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হলেও তিনি তা বারংবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী পুলিমের উপর হামলার ঘটনায় কুলাউড়া থানায় ৫১ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে বিবাদী করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় তাঁকে ২নং আসামী করায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানীর অভিযোগ এনেছেন।বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ৫দফা দাবিতে অনশনরত বিএনপি নেতা অ্যাড. আবেদ রাজা বর্তমানে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছেন।বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত আবেদ রাজা নিজের মোবাইল ফোন থেকে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে একটি সংবাদ সম্মেলনের জন্য নিমন্ত্রণ করেন। সরকারী হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিষয়টি এড়িয়ে যান । এব্যাপারে তিনি বলেন, আমার দাবি ও অনশনের বিষয়ক সংবাদটি কাভারেজের জন্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এসময় তিনি ৫দফা দাবি উত্থাপন করেন।বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সংগ্রহে উপস্থিত গণমাধ্যকর্মীদের তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ আমাকে হয়রানীর জন্য (পুলিশ) এসল্ট মামলায় জড়িয়েছে। হাসপাতালে আমাকে দেখতে আসা নেতাকর্মীদেরও হয়রানী করছে পুলিশ। তিনি বলেন, আমি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নি:শর্ত মুক্তি, গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, কুলাউড়ায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানকারী পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি ও তাদের উপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এই ৫দফা দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার এ দাবি পূরণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবো। তিনি আরও বলেন, পুলিশী হয়রানীর জন্য আমি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেনতিনি।পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য যে দাবি তিনি উত্থাপন করছেন তা কতটুকু যুক্তিসংগত এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে আমি আমার দাবি তুলতেই পারি, মানা না মানা এগুলো প্রশাসনের এখতিয়ার।তিনি ছাড়া আর কোন নেতা মাঠে নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদেশে দমন পীড়নে নেতাকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্থ। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে অবশ্যই নেতাকর্মীরা গনতান্ত্রিক দাবি আদায়ে মাঠে নামবে।কেউ কেউ বলছে এটা  লোক দেখানোর অনশন। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লোকদেখানোর জন্য অবশ্যই আমি অনশন করছি না। যারা সমালোচনা করছেন, তাঁদেরও একসময় বোধদ্বয় হবে। আমার মা জেলে, আমি এভাবে বসে থাকতে পারিনা।সারাদেশে নেতাকর্মীরা যেখানে ধরপাকরের কারনে বিব্রত সেখানে তিনি একটি চলমান মামলার আসামী অথচ এতো অতিউৎসাহী ভূমিকা (আমরণ অনশন) এর পেছনে কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত সৎ, আদর্শবাদী, কমিটেড রাজনীতি করি। আমি কোন অন্যায়ের সাথে আপোস করিনা। একজন আমরণ অনশনে থাকাবস্থায় তাঁরা (পুলিশ) আটক করবে কিনা এটা তাঁদের মানবিক বিষয়। আমি আইনানুগভাবে আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন নিব।এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কুলাউড়া স্বাধীনতা সৌধে অনশনরত বিএনপি নেতা আবেদ রাজা শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন বিকেল ৪টায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ছাড়পত্র দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি ছাড়পত্র গ্রহণ করেননি এবং সেখানেই তিনি আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক মোবাইলে বলেন, অনশনের জন্য অ্যাড. আবেদরাজা বুকে ব্যাথা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস এ ভূগছেন। এজন্য আমরা উনাকে মঙ্গলবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের জন্য ছাড়পত্র দেই। কিন্তু তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। বৃহস্পতিবার আমি ও হাসপাতালের আরএমওকে নিয়ে যাই তাঁর কাছে। এবং ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য বলি। কিন্তু তিনি ছাড়পত্র গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। “আমি স্বদিচ্ছায় হাসপাতালে অবস্থান করছি” এ মর্মে একটি তার কাছ থেকে লিখিত কাগজ সংগ্রহ করেছি। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকেও অবগত করেছি।