সিলেট সুরমা ডেস্ক : শরীয়তপুর জেলার ৩ হাজার ৫’শ হেক্টর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের কৃষি পণ্যের মধ্যে মরিচ একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। এখানকার জমি বালুযুক্ত পলিমাটি হওয়ায় অন্য ফসলের চেয়ে মরিচ উৎপাদন তুলনামুলক বেশি লাভজনক। মোট জমির ২৫-৩০ ভাগ জমিতেই মরিচ আবাদ করছেন কৃষকরা। কিন্তু গত মৌসুম থেকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে কাঁচা মরিচ বিক্রির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় শুকনা মরিচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ক্ষেত থেকে ৫০-৫৫ টাকা দরে পাইকারা কিনে নিচ্ছেন। এবার মরিচের ফলনও ভাল হয়েছে বলছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
গত দু’বছর আগেও চরাঞ্চলের কৃষক মরিচ আবাদ করে শুকনা মরিচ হিসেবে বিক্রি করে আসছিলে। কিন্তু নিয়ন্ত্রনহীন বাজারের ফলে গত কয়েক বছরে শুকনা মরিচে কৃষক তেমন লাভবান হচ্ছিল না। মাঝে মাঝে কিছু লাভ হলেও কিছু কিছু সময় আবাদ খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে একটু আগাম আবাদ করে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে বিঘাপ্রতি প্রায় দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। কাঁচা মরিচ শুকিয়ে শুকনা মরিচে পরিণত করলে ফলন হয় ৫ ভাগের ১ ভাগ। বিঘায় কাঁচা মরিচের ফলন হয় ৩৩ মণ। কিন্তু শ্রমিক খরচ দিয়ে ওই মরিচ শুকালে বিঘায় ফলন পাওয়া যায় ৬.৬ মণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪০ হাজার টাকা। ফলশ্রুতিতে চরাঞ্চল সহ অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকও এখন কাঁচা মরিচ তুলে বিক্রিতেই বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
জেলার সবেচেয়ে বেশী মরিচ উৎপাদকারী ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা গ্রামের কৃষক আলী বেপারী বলেন, গত তিন বছরে ২’শ শতক জমিতে মরিচ আবাদ করে শুকিয়ে বিক্রি করেছি ১ লক্ষ পনের থেকে ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু এবার একই পরিমাণ জমির কাঁচা মরিচ ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আরো ৫০-৬০ হাজার টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রি করবো। কাঁচা মরিচ শেষ হওয়ার পরে আরো ৫০-৫৫ হাজার টাকার শুকনা মরিচ বিক্রি করতে পারব।
একই ইউনিয়নের চরজিংকিং গ্রামের কৃষাণী নাজমা বেগম বলেন, কাঁচা মরিচ ক্ষেত থেকে তুলতে শ্রমিক পাওয়া খুবই দুরুহ। যাও পাওয়া যায় তাতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। ফলে খরচের তুলনায় লাভ হতো খুবই সামান্য। আবার কখনো হতোই না। কিন্তু গত বার থেকে কাঁচা মরিচ বিক্রির ফলে আমি প্রায় দ্বিগুণ লাভ পেয়েছি। এতে ফসল ঘরে তুলতে সময়ও লাগছে কম। তাছাড়া নিয়মিত পাইকার এসে ক্ষেত থেকেই কাঁচা মরিচ কিনে নিয়ে যাওয়ায় আমাদেরও শ্রমিক খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে এখন এলকার অনেক কৃষকই মরিচ একটু আগাম আবাদ করে কাঁচা মরিচই বিক্রি করছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহ মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাঁচা মরিচকে শুকিয়ে শুকনা মরিচে প্রসেস করার পরে বিঘা প্রতি যে ফলন ও দাম পাওয়া যায়, তার তুলনায় কাঁচা মরিচে সার্বিক অর্থনৈতিক লাভ বেশি হয়। তাই অনেক কৃষকরা এখন এদিকেই ঝুঁকছেন। এ পদ্ধতি এখন কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: রিফাতুল হোসাইন বলেন, মসলা ফসলের মধ্যে মরিচ জেলার অন্যতম একটি অর্থকরী ফসল। এবছর জেলায় ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছ। বিগত কয়েক বছরে শুকনা মরির আবাদ করে আনুপাতিক হারে কম লাভ হওয়ায় কৃষকগণ বিছুটা আগ্র হারিয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সংরক্ষণ পদ্ধতি, বাজারজাতকরণ সহ স্থানীয় ও জেলার বাইরের পাইকারদের সাথে সংযোগ স্থাপন সহ সার্বক্ষণিক পরামর্শের ফলে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের সুফল হিসেবে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে কৃষক এখন প্রায় দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। ফলে এটি এখন উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবে অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান দখল করে নিয়েছে। আমরা আশা করছি এর সুফল হিসেবে চরাঞ্চল সহ জেলার মরিচ চাষিরা আগামীতে অর্থনৈতিকভাবে আগের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হবেন। যা কৃষি বাণিজ্যিকরণকে আরও বেগবান করবে।৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ (বাসস)