• ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত জানুয়ারি ৩১, ২০১৮

    সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি এবং জনগণের অর্থ অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, জনগণের অর্থের সাথে কোন অনিয়ম বা অসততা বরদাশত করা হবে না।
    তিনি বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে গেছে এবং জীবনের অধিকাংশ সময় আমার বাবা জেলে কাটিয়েছেন সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। সেখানে দুর্নীতি বা টাকা পয়সা নিয়ে কোন রকম অনিয়ম আমরা কখনও বরদাশত করবো না।’
    এক্ষেত্রে অডিটর এন্ড কম্পট্রোলার জেলারেলের কার্যালয়ে কর্মরর্তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আরো বেশী নজরদারি করবেন। সেটাই আমি চাচ্ছি।’
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর কাকরাইলের অডিট ভবনে আন্তর্জাতিক সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউট (আইএসএআই)-এর নতুন ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
    সরকারি অর্থের অপচয়, আত্মসাৎ, জালিয়াতি, চুরি, বিধিবহির্ভূত পরিশোধ, আয়কর ও ভ্যাট আদায় না করা, আইন, বিধি, নির্বাহী আদেশ পালন না করা, সরকারি নিয়মনীতি ও আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ না করা, আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করাসহ নানা অনিয়ম উদঘাটনে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল-এর কার্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
    প্রধানমন্ত্রী জনগণের অর্থ সাশ্রয় এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টকে আরও দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার আহবান জানিয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল জোগান দেয়ার বিষয়টি তাঁর সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
    তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত অডিটের চলমান কার্যক্রমকে অভিষ্যতে সকলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ার প্রেক্ষিতে তৃণমূলে অর্থাৎ ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে।
    অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অডিট বিভাগকে আরো শক্তিশালী ও যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গতানুগতিক অডিটের বাইরে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অডিট, পারফরমেন্স অডিট, আইটি অডিট, পরিবেশ বিষয়ক অডিট পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
    অডিট কাজে খুব শিগগিরই অডিট মনিটরিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এএমএমএস) শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এটি সকল মন্ত্রণালয়কে সংযুক্ত করবে এবং মানসম্পন্ন অডিট রিপোর্ট যথাসময়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবে।
    তিনি বলেন, দেশে ইতোমধ্যে আইটি অডিট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইটি অডিট ডিরেক্টরেট নামে একটি স্বতন্ত্র ডিরেক্টরেট সৃষ্টির বিষয়টি ইতোমধ্যে পুনর্বিন্যাস প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা অনুমোদিত হলে আইটি অডিট ত্বরান্বিত হবে।
    তিনি ডিজিটল পদ্ধতি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও নজরে রাখার আহবান জানিয়ে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।
    অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। এছাড়া কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেলারেল মাসুদ আহমেদ এবং অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
    ডেপুটি কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেলারেল মো. ইকবাল হোসেন দেশে জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেলারেলের কার্যালয়ের কর্মকান্ড অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
    সরকারের কর্মপরিধি অতীতের চেয়ে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিক দু’মেয়াদে দেশে দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন অনেক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীদেরও তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
    তিনি এ সময় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্রও তুলে ধরেন।

    তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রাম ভিত্তিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য যদি গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়, সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকতা পায়, সেটাই আমাদের উন্নয়নের মূল লক্ষ্য।’
    সরকার এক্ষেত্রে খানা ভিত্তিক সেন্সাস রিপোর্ট তৈরী করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
    তিনি বলেন, তাঁর সরকার সকল অর্থনৈতিক কর্মকা-ে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করছে। যার মধ্যে রয়েছে-আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অবকাঠামো সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
    ভৌগলিক অবস্থান এবং জনগণের ব্যাপক কর্মতৎপরতার কারণে ব্যবসা-বিনিয়োগ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-এর সুনাম আঞ্চলিক সীমানা ছাড়িয়ে গেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
    সরকার প্রধান এ সময় বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
    ২০১৮ সালের মার্চে ইউএনএসক্যাপ-এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের (গ্রাজুয়েশন) যোগ্যতা অর্জন করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য প্রয়োনীয় তিনটি সূচকের সবকয়টাতেই বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। কাজেই কেউ আমাদের আর দরিদ্র বা নি¤œ আয়ের দেশ বলতে পারবে না। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে।
    আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিডিপি’র ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে এর অবস্থান ৩২তম। ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ জিডিপি ও ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বের যথাক্রমে ২৮ ও ২৩ তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। ইনশাল্লাহ আমরা তা অর্জন করতে পারবো।’
    উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার প্রধান এসময় অডিট কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘সরকারের ব্যয় সম্পাদনের পরে অডিট কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যয় হওয়ার আগে এবং ব্যয় কার্যক্রম চলাকালেও অডিট কার্যক্রম জোরদার হলে আর্থিক অপচয় ও অনিয়ম বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
    প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের যে কোন কাজের জন্য দেশের যে কেউ তাঁর কাছে আসতে পারেন এবং এজন্য ভয় পাবার কোন কারণ নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদটি সাময়িক। জনগণ ভোট দেয় আর ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসি, এটাকে আমি কখনও স্থায়ী বন্দোবস্তো মনে করি না বা অতীতের অন্য অনেকের মতো সেভাবে দেখি না যে উঠলে আর নিচে নামা যাবে না (ক্ষমতা ছাড়া যাবে না)। এটি একটি সাময়িক পদ, সুযোগ পেয়েছি জনগণের স্বার্থে কাজ করার। কাজেই আপনারা যে কেউ যে কোন সময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং কথা বলতে পারবেন।
    নিজেকে জাতির পিতার মেয়ে উল্লেখ করে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন তৃণমূলের মানুষের জন্য উন্মুক্ত বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
    ইতোমধ্যে তাঁর সরকার শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকারকে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি সবক্ষেত্রেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
    এ সময় ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং ক্ষমতায় এসে দেশের জন্য কাজ না করে নিজেদের বিত্ত-বৈভব বৃদ্ধি ও বিলাসিতার প্রতি দিকে নজর দেয়াকে মানসিক রোগ উল্লেখ করে এজন্যই দেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
    এ সমস্ত মাসসিক রোগ থেকে তিনি এবং তাঁর সরকার মুক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্তত, আমি এবং আমার পরিবার বাবা-মায়ের কাছ থেকে যে শিক্ষাটা পেয়েছি সেই শিক্ষা নিয়েই চলি। যখন যেমন তখন তেমন চলতে পারি। আমাদের কোনকিছুর জন্যই হা-হতাশা নেই।’
    দেশের কেউ না খেয়ে থাকলে বা কোন গরীব কষ্ট পেলেই কেবল তা হা-হুতাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেটাই আমাকে পীড়া দেয়, বলেন, প্রধানমন্ত্রী। ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ (বাসস)