• ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আগামীকাল মুখোমুখি বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা

প্রকাশিত জানুয়ারি ২৬, ২০১৮

সিলেট সুরমা ডেস্ক : ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে আগামীকাল মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। শুরু থেকেই দাপট দেখানো টাইগাররার প্রথমবারের মত ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জয়ের জন্যই মাঠে নামবে জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফাইনালে ভালো ক্রিকেট খেলে শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী শ্রীলংকাও। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি আগামীকাল শুরু হবে দুপুর ১২টায়।
ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েই এ বছর নিজেদের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ব্যাট-বল হাতে দাপট দেখায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। লিগ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিতে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তাই লিগে ফিরতি পর্বের ম্যাচগুলো নিয়মরক্ষায় পরিণত হয় বাংলাদেশের সামনে।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে এবং পরের ম্যাচে শ্রীলংকাকে ১৬৩ রানের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এই দু’জয়েই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় টাইগারদের। ফিরতি পর্বে জিম্বাবুয়েকে ৯১ রানে হারালেও, লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে লজ্জার হারের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। লংকানদের বিপক্ষে মাত্র ৮২ রানে অলআউট হয়ে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে এমন লজ্জাজনক ব্যাটিং, বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে কোন চিড় ধরেনি বলে জানান দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ফাইনালের আগে মাশরাফি বলেন, ‘ফাইনাল ম্যাচে জেতার জন্য আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে আছি। এটা সত্যি কথা। যদি হতে পারি, তবে এমন শিরোপা প্রথমবারের মতো হবে। আসলে হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকলে আমার কাছে মনে হয় বেশি চাপ এসে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ফাইনাল ম্যাচে একটা চাপ থাকেই। যদি বৃহস্পতিবার শ্রীলংকার বিপক্ষেও ম্যাচটি জিততাম তাও থাকতো। আমার কাছে মনে হয় গতকাল হারাতে চাপটা আরও কমে গেছে। চাপ সব সময়ই থাকে এবং জয়টা আমরা অবশ্যই চাই।’
নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটে এই প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জয়ের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে আনন্দের মাত্রা অনেক বেশিই হবে বলে জানান মাশরাফি, ‘প্রথমবারের মতো আমরা যদি জিততে পারি, এটা অনেক আনন্দের হবে। সব কিছু নির্ভর করছে আসলে কালকে আমরা কেমন খেলবো, কেমন শুরু করবো ম্যাচটা। আমাদের নিজেদের পরিকল্পনাগুলোর প্রতি ফোকাস রাখতে হবে।’
লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ৮২ রানে অলআউট নিয়ে আবারো কথা বলতে হয়েছে মাশরাফিকে। তবে ফাইনালে শ্রীলংকাকে জবাব দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে মনে করেন ম্যাশ, ‘তারা যেভাবে আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলেছে ও বোলিং করেছে, আমরা ঠিক পাল্টা জবাব দিতে পারিনি। আমরা হয়তোবা কোন কারণে পিছিয়ে ছিলাম। হয়তোবা কাউন্টার অ্যাটাক করতে পারলে বুঝতে পারতাম আসলে কি হয়েছে। ফাইনালেও তারা বেশ শক্তভাবে আক্রমন করবে এবং শক্তভাবে তাদের জবাব দেয়ার আশা করছি।’
ডাবল হার দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে যাত্রা শুরু করে শ্রীলংকা। জিম্বাবুয়ের কাছে ১২ রানে হারের পর বাংলাদেশের কাছে ১৬৩ রানের ব্যবধানে হার মানে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। তবে ফিরতি পর্বের শেষ দু’ম্যাচ জিতে ঠিকই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে শ্রীলংকা। তাই দলের আত্মবিশ্বাস এখন অনেক বেশি বলে জানান শ্রীলংকার অধিনায়ক চান্ডিমাল, ‘ওয়ানডের দিকে তাকালে দেখবেন আমাদের খেলোয়াড়দের ইনজুরি ছিল। সেজন্য আমাদের সঠিক কম্বিনেশনটি দাঁড় করানো সহজ ছিল না। কিন্তু সেটা কোন যুক্তি হতে পারেনা। আপনি যেখানেই খেলেন না কেন পারফর্ম করতেই হবে সবাইকে। এখন নতুন কোচ পাওয়াতে আমরা কিছু নতুন কৌশল পেয়েছি। তার ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমরা ফলাফল নিয়ে ভাবছি না। কিভাবে ভালো ক্রিকেট খেলা যায় সেটাই আমাদের মূল ভাবনা।’
লিগের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারানোতেই আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে গেছে শ্রীলংকা। এটি অনুমেয়। তবে ফাইনালের লড়াইয়ে বাংলাদেশকেই ফেভারিট বলছেন চান্ডিমাল, ‘ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খুবই ভালো দল। তাদের কিছু ভালো ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে। ফাইনালে তারাই ফেভারিট। তবে আমাদের যেটা করতে হবে ম্যাচের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে সঠিক বাস্তবায়ন করে জিততে হবে।’
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দেশের মাটিতে তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালটি ছিলো বাংলাদেশের প্রথম কোন শিরোপা লড়াই। এরপর ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল এবং ২০১৬ সালে টি-২০ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু দুভার্গ্যের কাছে মাথা নত করতে হয় তাদের। তাই তিনটি ফাইনালেই প্রতিপক্ষের কাছে হেরে রানার-আপ হয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে হয় বাংলাদেশকে।
তবে আবারো ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। তাই এবার শিরোপা জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে নিজেদের উজার করে দিবে বাংলাদেশ, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ মিথুন, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আবুল হাসান রাজু, মেহেদি হাসান মিরাজ, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও সানজামুল ইসলাম।
শ্রীলংকা দল : দিনেশ চান্ডিমাল (অধিনায়ক), উপুল তারাঙ্গা, দানুশকা গুনাথিলাকা, কুসল মেন্ডিজ, ধনানঞ্জয়া ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা, আসেলা গুনারতেœ, নিরোশান ডিকবেলা, সুরঙ্গ লাকমাল, নুয়ান প্রদীপ, দুশমন্ত চামিরা, শেহান মাদুশানাকা, আকিলা ধনঞ্জয়া, লক্ষন সান্দাকান ও বানিদু হাসারাঙ্গা  ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ (বাসস)