হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশ এর উদ্যোগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ থেকে বার্মার সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা যখন রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোন এমনকি হিন্দুদের উপর অতীতের নির্যাতনের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বর্বরোচিত আক্রমণ বৃদ্ধি করে। বিশে^র বিবেকবান সকল মানুষ স্তম্ভিত হয়। প্রতিবাদ শুরু হলো বিশ^জুড়ে ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায়। প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দায়িত্ববোধ তুলনামূলকভাবে বেশি। সে দায়িত্বানুভূতি থেকে বিভিন্ন ভাবে দলমত নির্বিশেষে আমরা সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করেছি। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী ভাবে ত্রাণ তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহর দরবারে তাদের উত্তম প্রতিদান কামনা করি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকেও মজলুম সেই মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর তওফিক দান করেন। বিবেকহীন সেই সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের লাগাম টেনে ধরা ছিল সময়ের দাবী। বিশ^ বিবেককে জাগ্রত করতে রোড মার্চ কর্মসূচী গ্রহণ করি।
গত ৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ নিয়ে গঠিত হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ব্যানারে আমরা ৬ সেপ্টেম্বর রোড মার্চের ঘোষণা করি। আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে সিলেট টু টেকনাফ রোড মার্চের আওতাভুক্ত দেশের ১০টি জেলা ও রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণি পেশা এবং প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে সফলতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাই। আলহামদুলিল্লাহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আশাতীতভাবে সফলতা পাই। সর্বশেষে নির্ধারিত তারিখে ২১ সেপ্টেম্বর যথাসময়ে সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে রোড মার্চ কাফেলা রওয়ানা দিয়ে পথিমধ্যে পুলিশী বাঁধার মুখে রোড মার্চ সিলেটের রশিদপুর এলাকায় সমাপ্ত করতে হয়। যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন, অংশ গ্রহণ করেছেন সবাইকে মোবারকবাদ।
আমাদের কর্মসূচী ছিল রোড মার্চ। ত্রাণ সংগ্রহ বা এ ব্যাপারে চাঁদা সংগ্রহের কোন সুযোগ ছিলোনা। আমাদের সবক’টি সংবাদ সম্মেলন, পোস্টার, ব্যানার, স্টিকার অথবা প্রশাসনের কাছে অবগতিপত্রের দরখাস্তের কোথাও ত্রাণ বিষয়ে কোন কথা আকারে ইঙ্গিতেও উল্লেখ ছিলো না। যেহেতু আমাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো-“রোড মার্চের কর্মসূচির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে বিশ^ বিবেক জাগ্রত করে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান”। সুতরাং এই রোড মার্চে যারা যেসব এলাকা থেকৈ হাজির হয়েছিলেন স্ব স্ব উদ্যোগে, রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে গাড়ী নিয়ে রোড মার্চ বহরে এসেছেন। কারণ বার্মার নির্যাতিত মানুষের পাশে বিবেকবানরাই এগিয়ে এসেছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে। যে কারণে আমাদের এই কর্মসূচিতে দেশ ও বিদেশের দরদী জনতা সর্বসাকুল্যে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরে যদি কেউ এক টাকা দেয়ার প্রমাণ দিতে পারেন, তাদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ দেন তিনি।
যারা দান করেছেন- ১. হাজী তখলিছ মিয়া, ডারবী ইউকে ২০ হাজার টাকা, ২. ডাঃ সৈয়দ খুররম, রাগিব রাবেয়া হাসপাতাল ৪ হাজার টাকা, ৩. মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম কামালী ও মাওলানা হাফিজ সৈয়দ জুনেদ আহমদ ১০ হাজার টাকা, ৪. হিফজুল করিম মাসুক, ইউকে ৫ হাজার টাকা, ৫. মাওলানা মিলাদ, দারুল কুরআন মাদরাসা ৫ হাজার টাকা, ৬. মাওলানা সাদিকুর রহমান, ওল্ডহ্যাম ইউকে ১০ হাজার টাকা, ৭. বাদাঘাট শিবেরবাজার সংস্থা ২৩ হাজার ৪ শত টাকা, ৮. হাজী মোহাম্মদ আলী, কাতার ২৫ হাজার টাকা, ৯. হাফিজ মাওলানা লোকমান খান ৫ হাজার টাকা, ১০. একজন পথিক গাড়ীতে ১ শত টাকা, ১১. আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম, ওমান ২৫ হাজার টাকা, ১২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ওমান শাখার পক্ষে আব্দুল হালিম সাতবাকী ৩৬ হাজার ৫ শত ৭ টাকা, ১৩. জনৈক ব্যক্তি ১৫ হাজার টাকা, ১৪. মাওলানা জহির উদ্দিন দরবস্তী, দুবাই, বিকাশে ২০ হাজার টাকা, ১৫. দারুল কুরআন মাদরাসার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের পক্ষ থেকে সংগৃহিত ৬০ হাজার টাকা, ১৬. মাওলানা কবির আহমদ খান, ৫০ হাজার টাকা। সর্বমোট ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭ টাকা।
আপনাদের অবগিতর জন্য জানাতে হচ্ছে, আমাদের মনিটরিং সেলের পক্ষ থেকে কোন গাড়ী রোড মার্চের দিন ভাড়া করা হয়নি। আমরা দু’ সপ্তাহ গণসংযোগের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সুধীদের গাড়ী নিজ উদ্যোগে ভাড়া করে নিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছি। এখন কেউ যদি দ্বীন দরদ থেকে তার সাধ্যানুযায়ী ১০/১৫ কিলোমিটার গিয়ে ফিরে আসে, তাহলে আমাদের করার কি আছে। টেকনাফ পর্যন্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছিলাম। পথিমধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়ে রোড মার্চ সমাপ্ত করতে হয়েছে। আপনারাও আমাদের সাথে ফিরে এসেছেন। রোড মার্চ সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন এবং আজও যারা কষ্ট করে এখানে এসেছেন সকলকেই ধন্যবাদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য মাওলানা আলী নূর, মিডিয়া সমন্বয়কারী মাওলানা কবির আহমদ খান, মাওলানা মোসাদ্দিক আহমদ, আকিকুর রহমান পীর, মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, সৈয়দ উবায়দুর রহমান প্রমুখ। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।