সিলেট সুরমা ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং খাবার দিয়ে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্য দূত ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি রুশনারা আলী। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন।
সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে রুশনারা আলী সফররত যুক্তরাজ্যের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই এমপি আরো বলেন, মিয়ানমার সংখ্যালঘু মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করায় যুক্তরাজ্য সরকার, পার্লামেন্ট এবং ব্রিটিশ জনগণ এর নিন্দা জানিয়েছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রিটেন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, মাতৃ-শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রুশনারা আলী বলেন, বাংলাদেশ থেকে কার্গো উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে। এখানকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ করছে। বর্তমানে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ আবার চলাচল শুরু করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে- চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিটিশ সরকার, সংসদ সদস্য এবং সে দেশের জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বিপুল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বড় বোঝা। এ জন্য দ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বড় রপ্তানি বাজার। ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের দেয়া এভ্রিথিংস বাট আর্মস (ইবিএম)-এর আওতায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করছে । যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের জন্য এ বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ যখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে, তখনও ব্রিটেন বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদান করবে।
তোফায়েল আহমেদ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহবান জানান। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৫৬৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করেছে ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের পক্ষ্যে বাণিজ্য ৩ হাজার ২৩৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বৈঠকে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিজ আলিসন ব্ল্যাক, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ডিরেক্টর রোজিনা হাসান, ডেপুটি ডিরেক্টর সুরাইয়া জাহানসহ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন। (বাসস)