দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি
ঢাকায় আদম ব্যাপরীদের হাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শাহেদ নামের এক যুবকের খুন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত শাহেদ (২৫) দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের শুরীগাঁও মোহাম্মদপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আখলিছ মিয়ার ছেলে। শাহেদ চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ছিল তৃতীয়।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২২ জুলাই শনিবার দিবাগত রাতে মুগদা থানার ব্যাংক কলোনী প্রাঙ্গণে। খবর পেয়ে পরদিন রোববার মুগদা থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। গত সোমবার ময়না তদন্ত শেষে নিহত শাহেদের লাশ পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় তেতলী ইউনিয়নের শুরীগাঁও মোহাম্মদপুর পুরাতন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহত শাহেদের নামাজ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জামে মসজিদের ইমাম আলহাজ¦ ক্বারী মাওলানা মইনউদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, তেতলী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মইনুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী রইছ আলী, নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার আকবর আলী, উপজেলা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা ইছরাব আলী, বিএনপি নেতা মইনুদ্দিন, ওয়াহিদ মিয়া, যুবদল নেতা মকসুদুল করিম নুহেল, শাহ ইমন, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহিন আলী, যুবলীগ নেতা সুমন আহমদ, আফজাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা লাভলু মিয়া, ব্যবসায়ী ফয়জুল ইসলাম, ঝানু মিয়া, জেবুল মিয়া, ইমরান আহমদ সহ এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ জানাজায় শরিক হন।
এ ঘটনায় নিহত শাহেদের ভাই শামীম আহমদ বাদি হয়ে ঢাকার মুগদা থানায় তিন জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং মামলা নং ৩৪/১৭। শাহেদ খুন হওয়ার ঘটনায় গত রোববার রাতে পল্টন এলাকা থেকে জড়িত দুইজনকে আটক করেছে মুগদা থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলো, দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই গ্রামের ধন মিয়ার ছেলে আশরাফ ও সুনামগঞ্জের দিরাই থানার আনোয়ার। আটককৃতরা খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে বলে জানান মুগদা থানার ওসি তদন্ত নাসির উদ্দিন।
এদিকে আদম ব্যাপারীদের হাতে আটককৃতদের তথ্য মতে পুলিশ জানায়, শাহেদ স্পেন যাওয়ার জন্যে শুরিগাও গ্রামের রাজ্জাকের ছেলে শাহীনসহ পাঁচ আদম ব্যাপারীর কাছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা জমা দেয়। গত ১৫ জুলাই সিলেট থেকে ঢাকায় যান শাহেদ সহ পাঁচ আদম ব্যাপারী। তারা ঢাকায় গিয়ে মুগদা থানা ব্যাংক কলোনীর একটি বাসায় উঠেন।
২২ জুলাই শনিবার দিবাগত রাতে আদম ব্যাপারীরা শাহেদকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। তার মাথার পিছনসহ শরীরেও রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। পরে শাহেদের লাশ ব্যাংক কলোনীর পাশে ফেলে যায় হত্যাকারীরা।
নিহত শাহেদের চাচাত ভাই অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার বলেন, আমার ভাইয়ের খুনের পেছনে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান পুলিশ প্রশাসনের প্রতি।
শাহেদ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মুগদা থানার ওসি (তদন্ত) নাসির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একটি আদম ব্যাপারী চক্রের হাতে শাহেদ খুন হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নিবে পুলিশ।
এদিকে শাহেদকে হারিয়ে তার মা-বাবা ও পরিবার পরিজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের মাতম। বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন তার মা বাবা। শাহেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার বাবা-মা তাকে স্পেন পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু স্পেন যাওয়ার আগেই লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে। এটা কোন ভাবেই মানতে পারছেনা তার পরিবার। হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন নিহত শাহেদের পিতা আখলিছ মিয়া।