সিলেট সুরমা ডেস্ক : ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেকেই শহর ছেড়ে চলে যান গ্রামের বাড়িতে। আবার যারা ঘুরতে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন নতুন নতুন জায়গা দেখতে, তারা পরিবার বা বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে পড়েন ঘর ছেড়ে। এবারের ঈদের সরকারি ছুটি এবং সেই সাথে শুক্রবার ও শনিবারকে সামনে রেখে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই।
দেশের যে সকল পর্যটন স্থান মানুষের কাছে আকর্ষনীয়, তার মধ্যে সিলেটের কিছু স্থান উল্লেখযোগ্য। প্রতি ঈদের মতো এই ঈদেও পর্যটকরা তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন সিলেটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। লোকে লোকারণ্য সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। শহর ও শহরতলীর হোটেলগুলোকেও সামলাতে হচ্ছে পর্যটকের বাড়তি চাপ।
সিলেটের বাইরে থেকে আসা ও স্থানীয় পর্যটকদের ঘুরাঘুরির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। এই উপজেলাতেই অবস্থিত পাথর-জলের মিশ্রিত সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত জাফলং, সংগ্রামপুঞ্জি, বিছনাকান্দি, পানথুমাই ঝর্না, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, ঐতিহাসিক জৈন্তাপুর, সবুজ জলের লালাখাল ইত্যাদি। মূলত এসব জায়গাতেই বেশি যাচ্ছেন সৌন্দর্য পিপাসুরা। আবার অনেকেই যাচ্ছেন ফেঞ্চুগঞ্জের হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর আর মৌলভীবাজারের হামহাম ঝর্নায়। প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলেও।
পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে উপজেলা প্রশাসনও গ্রহণ করেছে বিশেষ উদ্যোগ। নিয়োজিত রাখা হয়েছে বাড়তি পর্যটন পুলিশ, টানিয়ে দেয়া হয়েছে নৌকা ভাড়ার তালিকা। পর্যটকদের সাবধানতা অবলম্বনের জন্য রয়েছে লিখিত নির্দেশনা, করা হচ্ছে মাইকিংও।
তবে পর্যটকদের অনেকেই অভিযোগ করছেন প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেন না নৌকা চালকরা। ঈদের অজুহাতে তারা বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন পর্যটকদের কাছ থেকে। আছে যাতায়াতে বিড়ম্বনার অভিযোগও।
মঙ্গলবার জাফলং বেড়াতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রানা বলেন, রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। এমন রাস্তায় গাড়ি চড়ে বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। পর্যটন এলাকাগুলোর রাস্তা মেরামতে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত। আর নদীতে নৌকা ভাড়া রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত। পর্যটকরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনছেন।
যারা শহরের আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে চাইছেন, তারা ভিড় করছেন শহরতলীর লাক্কাতুরা, মালনীছড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানে। উপভোগ করছেন বর্ষায় চা বাগানের বাড়তি সবুজ রূপ। এছাড়াও নিছক আনন্দ আড্ডা আর প্রিয়জন-বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে বিকেলে বা সন্ধ্যায় অনেকেই চলে যাচ্ছেন সিলেটে সম্প্রতি নির্মিত কাজীর বাজার সেতুতে।
শিশুদের কাছে প্রকৃতি যতোটা আকর্ষনীয়, তার চেয়েও বেশি আকর্ষনীয় বিনোদন কেন্দ্রগুলো। শিশুদের নিয়ে তাই বড়রা হাজির হচ্ছেন শহরের ভেতরে ও বাইরের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। যেসব পার্কে শিশুদের সমাগম বেশি হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগরীর ওসমানী শিশু উদ্যান, নগরীর অদূরে অবস্থিত ড্রিমল্যান্ড পার্ক ও অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড। এসব পার্কে আছে শিশুদের জন্য বৈচিত্র্যময় সব রাইডে চড়ার ব্যবস্থা।
এদিকে, সিলেটের বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে নগরীর হোটেলগুলো। অনেক হোটেলই সকল রুম বুকড হয়ে যাওয়ায় নতুন কোন বুকিং নিতে পারছে না। দল বেঁধে আসা পর্যটকদের অনেকেই তাই থাকা নিয়ে পড়ছেন বিড়ম্বনায়।
সিলেটের জিন্দাবাজারে অবস্থিত হোটেল গোল্ডেন সিটির মহা ব্যবস্থাপক মিষ্টু দত্ত জানান, আমাদের হোটেলের মোট কক্ষগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশি কক্ষে সিলেটে আগত পর্যটকরা অবস্থান করছেন। এমনিতে অন্যান্য বছরগুলোতে ঈদের সময়ের তুলনায় সিলেটে বিগত কিছুদিন বৈরী আবহাওয়া ছিল। তবু এবার ঈদে ছুটির পরিমান বেশি হওয়ার কারণে লোক সমাগম অনেক হচ্ছে। আগামী শুক্রবার ও শনিবারের ছুটিকে সামনে রেখে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।