সিলেট সুরমা ডেস্ক : বিয়ানীবাজারে লন্ডন প্রবাসী কর্তৃক ধর্ষণরে শিকার কিশোরী সিলেটের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। মাত্র ১৭দিনে তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করা হয় বলে জানায় সে। তার মা-বাবার উপর ধর্ষক সারোয়ারের নির্যাতনের কথাও সে আদালতকে অকপটে জানায়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিয়ানীবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: মোখলেছুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকালে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন। তিনি জানান, ১৭দিনে বহুবার শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রতিদিন ২-৩বার ধর্ষণ করতেন প্রবাসী সারোয়ার আহমদ। হাত-পা টিপে দেয়ার কথা বলে তাকে বিছানায় নিয়ে আসতেন তিনি। এরপর কখনো জোর করে, কখনো লন্ডন নেয়ার নাম করে আবার কখনো যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ সেবন করিয়ে শিশুটিকে পাশবিক নির্যাতন করা হত।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল বাশার বদরুজ্জামান জানান, গত কয়েকদিন থেকে সারোয়ারের স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে বসবাস করছেন। এই ক’দিনে মেয়েটির উপর বেশী নির্যাতন করা হয়।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, শিশুটি তার মায়ের কাছে ধর্ষণের কথা জানালে বিষয়টি সারোয়ারের মা ও স্ত্রীকে জানানো হয়। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সারোয়ার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়িতে। এরপর তিনি শিশুটিকে রেখে দেন তার নিজ ঘরে। শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা-মা বাড়ি চলে যেতে চাইলে তাদের ওপর নির্যাতন চালান সরোয়ার। সবশেষ নির্যাতনের মাত্রা এতটাই প্রকট হয় যে, মেয়েটিকে রেখেই পালিয়ে আসেন তারা। এরআগে একই বিষয় নিয়ে নিজের স্ত্রীকেও বেদম মারধর করেন সারোয়ার। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লন্ডন প্রবাসীর বাড়িতে একটি শিশুকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে সারোয়ারের বাড়িতে ছুটে যান স্থানীয় কুড়ারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের। এ সময় ওই বাড়িতে সারোয়ারের স্ত্রী ছিলেন না। কিন্তু তিনিও শিশুটিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় তার পিতা বাদী হয়ে সারোয়ার আহমদকে একমাত্র আসামী করে মামলা (নং ১০) দায়ের করেছেন। সোমবার র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার ওই আসামীকে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে তার মা-বাবার জিম্মায় রয়েছে।
জানা যায়, ধর্ষিত এক শিশুকে বিচার পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে আটকে রেখে তার ওপর আবারও যৌন নির্যাতন চালান লন্ডন প্রবাসী সারোয়ার আহমদ। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের দেউলগ্রামের লতই মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই প্রবাসীকে আটক করে র্যাব। আর ধর্ষকের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
কানাইঘাট উপজেলার এরালিগুল গ্রামের এক দরিদ্র পিতার ১২ বছর বয়সী মেয়েটি আগেও গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষিতার বড় ভাই একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর গ্রামের প্রভাবশালীরা তাদের গ্রামছাড়া করেন। এ সময় নির্যাতনের শিকার মেয়েকে বড় ভাইয়ের কাছে রেখে স্ত্রী ও অপর আরেক সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান হতভাগা ওই পিতা। স্ত্রী ও সাথে থাকা শিশু সন্তানটিকে নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউলগ্রামের লন্ডন প্রবাসী সারোয়ার আহমেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। আক্ষেপ করে ধর্ষিতার বাবা জানান, যার কাছে আশ্রয় নিলাম, সেই সারোয়ার কয়েক দিন পর আমার এই মেয়ের ওপরই পাশবিক নির্যাতন শুরু করেন।
এদিকে সোমবার সকালে বিয়ানীবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবী করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী তামান্না সুলতানা স্বামীর মুক্তি দাবী করেন।