সিলেট সুরমা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান সেখানেই নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে এমন কিছু করেন যাতে চমক থাকে। কখনো সাতসকালে ভ্যানে চড়ে পিতৃভূমি ঘুরে দেখেন, কখনো আবার সমুদ্রে খালি পায়ে হাঁটেন। আবার বিদেশের মাটিতে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বরফখেলায় মেতে ওঠেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এসব চমকে দেয়ার ঘটনার ছবি তো চেপে রাখা যায় না। তাই বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।সম্প্রতি কক্সবাজার সফরে প্রধানমন্ত্রীর সমুদ্রের তীরে পা ভেজানোর ছবি ভাইরাল হয়। এবার বন্যাকবলিত হাওর অঞ্চল নেত্রকোনা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রিকশায় চড়া একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। অনেকেই তার পছন্দের এই ছবিগুলো শেয়ার করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শনে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে যান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল নয়টার দিকে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে একটি হেলিকপ্টারে করে নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টরটি খালিয়াজুরী পৌঁছায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, প্রধানমন্ত্রী খালিয়াজুরী হাসপাতালের সামনে থেকে উপজেলা ডাকবাংলা পর্যজন্ত আধা কিলোমিটারের মতো পথ রিকশায় করে আসেন। ডাকবাংলায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী রিকশাচালককে বকশিসও দিয়েছেন।
তবে কত টাকা বকশিস দিয়েছেন তা বলতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ক্রিম কালারের এবং লাল পাড়ের শাড়ি, চোখে সানগ্লাস পরে রিকশায় বসে আছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরা রিকশার সামনে পেছনে থাকলেও আশপাশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা গেছে। একটি ছবিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রিকশার ঠিক পেছনে দাঁড়ানো দেখা গেছে।
অন্যদিকে নেত্রকোনার এই রিকশাচালকেও বেশ পরিপাটি দেখা গেছে। তরুণ এই রিকশাচালককে দেখা গেছে টি-শার্ট পরা, পরনে ছিল সাদা পাজামা।
গত ২৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর ভ্যানচালক ছিলেন ওই এলাকার যুবক ইমাম হোসেন। পরে গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের চাকরি কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লজ্জায় বলতে পারেননি। এই খবর চাউর হলে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ থেকে তাকে চাকরির ব্যবস্থা করেন।
তবে নেত্রকোনার এই রিক্সাচালকের পরিচয় এবং তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথাবার্তা হয়েছে কি না সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করেছে মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। আমি এসেছি আপনারা যেন উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন সেজন্য কিছু করতে। বাবার স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নেত্রকোণার একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। হাওরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করে গৃহনির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোণার খালিয়াজুরী কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের মানুষের মাঝে ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল, ওএমএসর চাল বিতরণ করা হবে। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে, খাদ্যের কোন অভাব হবে না। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হবে। এ দেশের কোন মানুষ না খেয়ে মরা যাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। কোন মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না। হাওর অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণ করা হয় মানুষের ফসল রক্ষার জন্য। এই বাঁধ নির্মাণে কেউ যদি কোন অনিয়ম করে থাকলে হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সব বাঁধ নির্মাণে কোন ধরনের অবহেলায় ছাড় দেয়া হবে না।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট ও হত্যার রাজনীতি করে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এরা দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নেত্রকোণা জেলা যুবলীগের সভাপতি স্বপন জোয়ারদারসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে বায়তুল মোকাররমে আগুন জ্বালিয়ে শতশত কুরআন শরিফ পুড়িয়েছে। বগুড়ায় মসজিদে কুরআন পাঠরত অবস্থায় মুসল্লিদের কুপিয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে ২৭১ জনকে হত্যা করা হয়েছে । ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি ও ৭০টি সরকারি অফিস পোড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের মডেল। খাদ্য-শিক্ষা সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন আকন্দের পরিচালনায় পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিন প্রমুখ।