• ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গ্রেনেড হামলার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি রিপনের সঙ্গে বাবা-মায়ের সাক্ষাৎ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত এপ্রিল ১১, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক : সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের সঙ্গে শেষ দেখা করলেন বাবা-মা ও স্বজনেরা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জঙ্গির মধ্যে রিপনকে রাখা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরের পরে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সেখানে এসে সাক্ষাৎ করে যান তার বাবা আ. ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। সাক্ষাৎকালে রিপন তার বাবা-মা ও ভাইকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করেন বলে জানিয়েছে কারাসূত্র।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়েছে জেনে তারা শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করে যান।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি মঙ্গলবার সকালে কারাগারে পৌঁছে। এরপর তা রিপনকে পড়ে শোনানো হয়। এর মধ্য দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের আগে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তার স্বজনেরা শেষ সাক্ষাৎ করে গেছেন।
তবে ফাঁসি কখন বা কোনদিন কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু না বলে জেল সুপার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এছাড়া ফাঁসি কার্যকরের জন্য জল্লাদকে অন্য কারাগার থেকে আনতে হবে না- এমনটিও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এর আগে গত রোববার (০৯ এপ্রিল) রিপনের সঙ্গে প্রথম দফায় শেষ সাক্ষাৎ করে যান তার চাচা আব্দুন নুর, চাচি আজিজুন্নেছা, চাচাতো বোন রুমেনা, ফুফাতো বোন লুৎফা বেগম ও ফুফাতো ভাই জাবির হোসেন।
জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোনাগাঁও গ্রামের আ. ইউসুফের ছেলে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দু’জন নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নান ও জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করতে স্বজনদের ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারই ডাকা হলেও সাক্ষাতের নির্দিষ্ট কোনো সময় দেওয়া হয়নি।
কাশিমপুর ও সিলেট- দুই কারা সূত্রই জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাঁসি কার্যকরের কার্যনির্বাহী আদেশ পাঠালে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখা আছে।
এদিকে তিন জঙ্গিরই ফাঁসি কার্যকরে কারাগারে প্রস্তুতি চলছে বলে রোববার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তবে প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর  ফাঁসি কার্যকরে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও বলেছেন, ‘জেলকোড অনুসারে ২১ দিনের কমে নয় এবং ২৮ দিনের ঊর্ধ্বে নয়- এ সময়সীমার মধ্যে কার্যাদেশ পালন করতে হবে। আমরা সেজন্যই অপেক্ষা করছি। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। সব ফর্মালিটি শেষ হলেই আমরা রায় কার্যকর করবো’।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিল করেন। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দুই আসামি ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুল।
গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ করে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আসামিরা এ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানালেও গত ১৯ মার্চ তা খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২১ মার্চ প্রকাশিত হলে পরদিন ২২ মার্চ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠান বিচারিক আদালত।
মৃত্যু পরোয়ানা ও সর্বশেষ রায় শোনার পর গত ২৭ মার্চ পৃথকভাবে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপন স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন।
শনিবার (০৮ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর সরকারের সিদ্ধান্তে এখন জেলকোড অনুসারে ফাঁসি কার্যকর করবে স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।