• ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাগীব আলীর বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত’র আরেক মামলা : সমন ইস্যু

sylhetsurma.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৩, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার :::: প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে সাজা প্রাপ্ত আসামী কথিত দানবীর রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দুই কোটি ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছেন এক লন্ডন প্রবাসি।  সোমবার সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। যাহা সিআর মামলা নং ৪৭৭/১৭ ইং। মামলায় দেশের ও লন্ডনের ৫ জন সাক্ষির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে সমন ইস্যুর নির্দেশ প্রদান করেন। তাছাড়া পরবর্তী শুনানী ও সমন ফেরতের জন্য আগামী ১৮ এপ্রিল তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
মামলা সুত্রে জানা যায়, নাবিদা ডেভলাপমেন্ট লি: সিলেট’র চেয়ারম্যান মো: আখলাকুর রহমান (গুলজার)। তার কোম্পানী বিগত ০৮/০২/২০০৫ ইংরেজী তারিখে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের মঞ্জুরীপত্র ঐঙ/ঈজ/গএ/৯৫০/২০০৫ মূলে ০৩ (তিন) কোটি টাকা লোন মঞ্জুর হয়। এর মধ্যে কোম্পানীর তিন কিস্তিতে ২,১৫,০০০,০০/- (দুই কোটি পনের লক্ষ) টাকা উত্তোলন করা হয়। কোম্পানীর বেশীর ভাগ পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার যুক্তরাজ্য প্রবাসী। বিগত ০৫/০৭/২০০৮ ইংরেজী তারিখে দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় সাউথ ইস্ট ব্যাংকে মরগেজকৃত সম্পত্তির নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। রাগীব আলীর সাথে পারিবারিক ভাবে পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় তার সাথে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন উনার সাথে যদি যোগাযোগ করে লন্ডনে লেনদেন শেষ না করা হয় তাহলে সম্পত্তি নিলাম হয়ে যাবে। তার কথায় তিনি অন্যান্য শেয়ার হোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাগীব আলীর সাথে যোগাযোগ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লেনদেন শেষ করা হবে। এক পর্যায়ে রাগীব আলী সাথে শেয়ার হোল্ডারদের সমঝোতা হয় এবং সমঝোতা অনুযায়ী রাগীব আলীর লন্ডনস্থ ব্যাংক একাউন্ট নং- ০০১৫১০৪ শর্ট কোড ৩০৯০৫৯ লয়েডস টি.এস.বি ব্যাংকে আমার কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডার তোফায়েল আলম তুহিন ৫০০০ পাউন্ডের একখানা চেক যাহার নং- ০৮১২০১, তারিখ ০৮/০৮/২০০৮ ইংরজেী তারিখে চেক প্রদান করে টাকা পরিশোধ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে রাগীব আলী বলেন যে চেকে টাকা নিতে সমস্যা আছে। তাকে নগদে টাকা দিতে। নগদ পরিশোধে রাজি না হলে রাগীব আলী আবারও বন্ধকীকৃত সম্পত্তি নিলাম হয়ে যাবে বলেন। এমতাবস্থায় সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে তার কথামত তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে এবং সর্বশেষ বিগত ৩০/০৫/২০০৯ ইং তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ২,১৫,০০০/- (দুইলক্ষ পনের হাজার) ব্রিটিশ পাউন্ড, যাহা বাংলাদেশী টাকায় আনুমানিক ২,৭৯,৫০,০০০/- (দুই কোটি উনআশি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা অনেক কষ্টে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ধার করে নগদ প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন সময়ে ১ পাউন্ডের মূল্য বাংলাদেশী টাকায় ১৩০ টাকা। তারপরে রাগীব আলীর নির্দেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী ১০/১২/২০১০ ইং তারিখে সুদ মওকুফের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং রাগীব আলীর নির্দেশে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের স্মারক নং- ঝঊইখ/খউচ/২০১০/৭৪৩ তারিখ ১৫/০২/২০১০ ইংরেজী মূলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে ২,৫৪,৫১,০০০/- (দুই কোটি চুয়ান্ন লক্ষ একান্ন হাজার) টাকায় চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং রাগীব আলীর কথা অনুযায়ী ২৯/০৬/২০১১ ইংরেজী তারিখ পর্যন্ত আমার ঋণ হিসাব নং- ০০০৫৭১৩০০০০০৬০০ এর অনুকূলে মোট ঋণ ৪,৬৬,৬৬০১৬/- (চার কোটি ছয়ষট্টি লক্ষ ছয়ষট্টি হাজার ষোল) টাকা তার মধ্যে থেকে ২,১৪,৩০,৮৪০.৮২ (দুই কোটি চৌদ্দ লক্ষ ত্রিশ হাজার আটশত চল্লিশ টাকা বিরাশি পয়সা)  সুধ মওকুফ করে পেমেন্ট হয় ২,৫২,৩৫,১৭৫/- (দুই কোটি বায়ান্ন লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার একশত পঁচাত্তোর টাকা) পরিশোধ করত: ২৯/০৬/২০১১ ইংরেজী স্মারক নং- ৯০২০৭৬২০০০৭ নং স্মারকে বাকি ০০.১৮ পয়সাও সমন্বয় করে ঋণ হিসাবে আর কোন দেনা নাই বলিয়া দেখা যায়। যাহা অনলাইন ব্যাংক স্টেইটমেন্ট পর্যালোচনা করলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে। পরবর্তীতে ১২/১২/২০১২ ইংরেজী তারিখে লোন একাউন্টের স্টেইটমেন্টের একখানা কম্পিউটার প্রিন্ট ব্যাংক হইতে আনার জন্য বলিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে উক্ত স্টেইটমেন্ট বাদীর ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ইংরেজীতে বাংলাদেশে আসিয়া তিনি জানতে পারেন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ হওয়ায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একদিকে সমঝোতা এবং অন্যদিকে টাকা গ্রহণ করার পরও অর্থঋণ মামলা নং- ০৬/২০১১ ইংরেজী একতরফা রায় ডিক্রী হাসিল করেন এবং পরবর্তীতে জারী মোকদ্দমা নং- ১৫/২০১২ ইংরেজী আমার বিরুদ্ধে দায়ের করেন। একপর্যায়ে মামলার ব্যাপারে জানার পর রাগীব আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন তোমার কোন চিন্তা করার দরকার নাই, আমি সবকিছু দেখতেছি। আমি কয়েকদিন অপেক্ষার পর কোন সদুত্তর না পেয়ে আসামী রাগীব আলীর সাথে যোগাযোগ করিলে তিনি বলেন ৮টি কিস্তিতে টাকা প্রদান করিব মর্মে আদালতে একটি আবেদন করতে বাদবাকী তিনি দেখবেন। তাহার পরামর্শ অনুযায়ী বিগত ২৪/১০/২০১৩ ইংরেজী তারিখে যুগ্ম জেলা জজ আদালত, সিলেট বরাবরে একখানা আবেদন করি। এরপর রাগীব আলীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিলে তিনি টাল বাহানা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার সাথে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেন নাই এবং কোন যোগাযোগও করেন নাই। বিগত ০৪/০৩/২০১৪ ইংরেজী তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন নং- ১৬৭৬/২০১৪ দায়ের করিলে হাইকোর্ট কর্তৃক নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ হয়। উক্ত রীট আবেদনের পর দীর্ঘ প্রায় ১৪ মাস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মহামান্য হাইকোর্ট বরাবরে রোল এর কোন জবাব বা কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। পরবর্তীতে দীর্ঘ ০১ মাস শুনানীর পর মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নিম্ন আদালতে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ হয় নাই বলিয়া আমার রোলটি ডিসচার্জ হয়। পরবর্তীতে আমি মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট লিপ টু আপীল দায়ের করা হয়। যাহার নং- ১৬৭১/২০১৫ মামলাটিও খারিজ হয়। নিরুপায় হইয়া পুনরায় বিগত ১০/০৭/২০১৬ ইং তারিখে লন্ডন হইতে রাগীব আলীর মোবাইল (যাহার মোবাইল নম্বর ০১৭১৩০৬৫২৩৬ ও ফোন নম্বর ০২৯৮৮০৫৯৪) যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাহার সাথে কোন যোগাযোগ হয় নাই। লন্ডনের নাম্বার দেখা মাত্র তিনি লাইন কেটে দেন। এতে মনে হয়  রাগীব আলী আমার ২,১৫,০০০ (দুই লক্ষ পনের হাজার) পাউন্ড বাংলাদেশী টাকায় অনুমান ২,৭৯,৫০,০০০/- (দুই কোটি উনআশি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করিয়াছেন। এনিয়ে  সোমবার আদালতে মামলা দয়েরে করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী জানান, রাগীব আলী লন্ডনে গিয়ে আখলাকুর রহমান গুলজারের কাছ থেকে ২,১৫,০০০ (দুই লক্ষ পনের হাজার) পাউন্ড বাংলাদেশী টাকায় অনুমান ২,৭৯,৫০,০০০/- (দুই কোটি উনআশি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে আদালত তা আমলে নিয়ে সমন ইস্যুর নির্দেশ প্রদান করেছেন।