• ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অনেক স্বপ্ন নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেছিলেন আরিফ !

sylhetsurma.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৩, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক : অনেক স্বপ্ন নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসেছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজও শুরু করেছিলেন তিনি। পাশে পেয়েছিলেন সিলেটের অভিভাবকতুল ব্যক্তি, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। প্রশংসিত হচ্ছিল মেয়র আরিফের কর্মকাÐ। পাল্টে যাচ্ছিল সিলেট মহানগরীর হতশ্রী চেহারা।

কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই ‘ঝামেলায়’ পেয়ে বসে আরিফকে। মামলার জালে জড়িয়ে কারাগারে তো যেতেই হয়, সাথে ছিল মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার দুঃসংবাদ। এরপর প্রায় দুই বছর কারান্তরীণ থাকতে হয়েছে তাকে। কারাগারে থাকাকালীন আরেক আলোচিত ঘটনার দুটি মামলায় নাম জড়ায় আরিফের। সব কয়টি মামলায় গত ৩ জানুয়ারি জামিন পান তিনি। পরে হাইকোর্টে রিট করে ফিরে পান মেয়র পদ। রবিবার যান নগর ভবনে। বসেন মেয়রের চেয়ারে। কিন্তু পৌনে তিন ঘন্টার মাথায় আরিফের জন্য আসে আরেক দুঃসংবাদ, মেয়র পদ থেকে ফের বরখাস্তের আদেশ। এ যেন আরিফের কপালে রীতিমতো ‘শনির দশা’!

সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর দিলওয়ার হোসাইন সজীব বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদ ফিরে পাওয়ায় নগর ভবনের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। নগরীর উন্নয়ন কর্মকাÐ আরো বেগবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন নগরবাসী। কিন্তু আচমকা ফের তাকে বরখাস্তের আদেশে নগরবাসীর স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে।’

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বৃহস্পতি তুঙ্গে ওঠে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর। ওই সময় সিসিকের মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আরিফ ছিলেন সিসিক কাউন্সিলর। কিন্তু কাউন্সিলর হয়েও মেয়রকে ডিঙ্গিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জেলা পরিষদ থেকে তহবিল এনে করান উন্নয়ন কাজ। সে সময় তার দাপট সমালোচিত হলেও প্রশংসিত হয় উন্নয়ন কাজ। বিএনপির আমল শেষে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নাম ওঠে আরিফের। কয়েকটি মামলার ফাঁদে পড়েন তিনি। আত্মসমর্পণ করে জেলও খাটেন। তবে ওয়ান-ইলেভেন সরকার বিদায় নেওয়ার পর আরিফের বিরুদ্ধে মামলাগুলো স্থগিত হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় ‘মামলামুক্ত’ ছিলেন তিনি। তবে মেয়রের চেয়ারে বসার পরই যেন আরিফের কপালে ‘শনি’ ভর করে! আলোচিত দুটি ঘটনায় চারটি মামলার জালে জড়িয়ে পড়েন সিলেট বিএনপির দাপুটে এই নেতা।

২০১৩ সালে সিসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার আর কাউন্সিলর নয়, মেয়র পদে লড়েন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই বছরের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে টানা দুইবারের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়রের চেয়ারে বসা নিশ্চিত করেন আরিফ। শপথ নিয়ে দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রায় বছরখানেক নির্বিঘেœ কাজ চালিয়ে যান আরিফ। এসময়ের মধ্যে সিলেট নগরীর জরাজীর্ণ চেহারা বদলে ‘মডেল নগরী’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় নামেন তিনি। নগরীর প্রধানতম সমস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে প্রশংসিত হয় আরিফের ভ‚মিকা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সহযোগিতায় নগরীর ১৩টি ছড়া-খাল দখলদারদের বিরুদ্ধে এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অ্যাকশনে নামেন আরিফ। সে অ্যাকশনে সফলতাও আসতে থাকে।

প্রধান সমস্যা দুটি নিয়ন্ত্রণে এনে আরিফ যখন অন্যদিকে মনোযোগী হচ্ছিলেন, ঠিক ওই সময়েই মামলার ফাঁদ ঘিরে ধরে তাকে। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে বোমা হামলায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ্ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে যুক্ত হয় আরিফের নাম। এরপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় তার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি; কারাগারে ঠাঁই হয় তার।

উচ্চ আদালত থেকে কিবরিয়া হত্যা মামলা এবং হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় জামিন নিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে মুক্ত হওয়ার প্রহর গুণছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু ২০ জুলাই সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা এবং বিস্ফোরক মামলায় আরিফের নাম যুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি। ২০০৪ সালের ২১ জুনের ওই ঘটনার মামলায় রুদ্ধ হয়ে যায় আরিফের মুক্তির পথ। তবে আইনী লড়াই চালিয়ে যান আরিফ। সেই ধারাবাহিকতায় সবকটি মামলায় জামিন পেয়ে গত ৪ জানুয়ারি কারামুক্ত হন তিনি।

কারামুক্ত হয়ে গত ১২ মার্চ হাইকোর্টে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে রিট করেন আরিফ। পরদিন আদালত মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। আদেশের বিরুদ্ধ আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু ২৩ মার্চ পূর্বোক্ত আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে রবিবার রীতিমতো শোডাউন করে নগর ভবনে যান আরিফ। সেখানে কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে অভ্যর্থনা জানান। দায়িত্বভার গ্রহণ করে মেয়রের চেয়ারে বসেন আরিফ, করেন কয়েকটি ফাইলে স্বাক্ষর।

কিন্তু আরিফের কপালে যেন ‘সুখ সইলো না’! মাত্র পৌনে তিন ঘন্টার মাথায় ফ্যাক্সযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশ আসে সিটি করপোরেশনে। উপ-সচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘‘আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারী মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০৪/২০০৯ এর সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে গৃহিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ (২০০৯ সনের ৬০নং আইন) এর ধারা ১২ উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।’

এমন আদেশের পর আরিফ  বলেন, ‘এ শুধু আমাকেই বরখাস্ত করা নয়, এ হচ্ছে সিলেটের মানুষকে বরখাস্ত করা। আমি সিলেটের মানুষের মেয়র ছিলাম, আছিও।’