সিলেট সুরমা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ৩০ মার্চ। এই নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নৌকার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সিংহ প্রতীক। এই নির্বাচনী এলাকায় এখন বইছে ভোটের হাওয়া।
গত ১৩ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জোরেসোরে প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মীনি ড. জয়া সেন গুপ্তা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সায়েদ আলী মাহবুব হোসেন রেজু। তিনিও সমানতালে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।
এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী শেখ জাহির আলী এবং জাসদ প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। তবে তারা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এখন নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন দুইজন।
এলাকার সবখানে এখন চোখে পড়ছে এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর শুভেচ্ছা সংবলিত সাদা-কালো পোস্টার। তাদের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করছেন দলীয় নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা। তারা নিজেরাও নাগরিক প্রত্যাশা পূরণের আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।
তবে এবারের নির্বাচনে কেবল আশ্বাসে কান না দিয়ে যোগ্য, সৎ ও কর্মঠ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ভোটাররা।
দিরাই সদরের বাজার পয়েন্টের এক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী সামাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবার আরও একটি নির্বাচনের মুখোমুখি হবো আমরা। তবে এ নির্বাচন অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান জননেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের যে অসমাপ্ত কাজ রয়েছে সেগুলো সমাপ্ত করার জন্য একজন দক্ষ লোক দরকার, আমরা ৩০ তারিখে নিজেদের পছন্দের একজন যোগ্য লোকই নির্বাচিত করতে চাই।’
একই এলাকার চায়ের দোকানি নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমার দোকানে বহুত রকমের লোক বসে, তারা নির্বাচন লইয়া কথা কয়, কিন্তু সবাই খালি নিজেদের ব্যাপার নিয়া ব্যস্ত, নির্বাচন যদি সত্যিকার অর্থে মানুষ আর এলাকার উন্নয়নের জন্যই হয় তাইলে যারা ভোট চাইন তারা যেনো নির্বাচনের পরেও নিজের এলাকার মানুষের পাশে থাকইন, ওখন আর আগের দিন নাই যে মানুষ শোনা কথায় কান দিবে, আমরা এলাকার রাস্তাঘাটেরই কোন উন্নয়ন দেখি না বহুত বছর হয়।’
রিকশাচালক এজাজ উদ্দিন বলেন, ‘দিরাই-শাল্লার মানুষ যেসব রাস্তা দিয়া চলে ইতার অবস্থা খুব খারাপ, সাধারণ মাইনষে নেতা হইতে চায় না বা নেতাদের ধন সম্পদও চায় না, তারা একটু শান্তি চায়, যারা নিজেরার চিন্তা না কইরা এলাকার লাগি কাম করবা তারারেই আমরা ভোট দিমু।’
এদিকে শুক্রবার দুপুর থেকে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালিয়েছেন নির্বাচনে অংশ নেয়া দুই প্রার্থী জয়া সেন গুপ্তা ও ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন রেজু। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লায় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের প্রচারপত্র নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন তারা। চাইছেন ভোট। দিচ্ছেন ছোট বড় সমস্যা ও সংকট নিরসনের আশ্বাস। চাচ্ছেন নিজেদের প্রতি সমর্থন।
শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েদ আলী মাহবুব হোসেন সিংহ প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করেছেন। অন্যদিকে, জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা দুজনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন রেজু বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম, দেশের বাইরে থেকে আমি আমার এলাকার মানুষের দুর্দশার কথা জেনেছি, আমার এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে আমি তাই দেশে ফিরে এসেছি, আমি মানুষের কাছে যাচ্ছি, মানুষের কথা শুনছি, মানুষ এখন আর আগের দিনে বিশ্বাস করে না, তারা উন্নয়ন চায়, আমাকে এলাকার মানুষ পছন্দ করেন, তারা আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন, আমি সব বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে স্বজনপ্রীতি দূরে ঠেলে এলাকার জন্য কাজ করতে চাই, আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এবং এলাকার সাধারণ জনগণ ৩০ তারিখে তাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’
এ ব্যাপারে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মীনি ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে অনেকটাই নতুন এসেছি বলা চলে, হয়তো অনেকটা বুঝতেও পারি না। কিন্তু আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। আমি মনে করি এলাকার মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে আছেন, নৌকার পক্ষে আছেন। আমি আমার স্বামীর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে চাই, এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে চাই, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নাকি অনেক টাকাওয়ালা। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি দিরাই-শাল্লার মানুষ টাকার কাছে তাদেরকে বিক্রি করে দিতে শিখেনি এবং তারা কখনো তাদের আদর্শকে বিক্রি করতে পারে না।’
এদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন দিরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছি, আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত পোস্টারের সাইজ, নির্দিষ্ট স্থানে ক্যাম্প স্থাপন, সভা সমাবেশের ব্যাপারে নির্দেশনা সব বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। এক কথায় অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।’