• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নানা সংকটের মাঝেও আশা দেখছে বিএনপি

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মার্চ ১৩, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক ::: দলের নানা বিপর্যয় ও সংকটের মাঝেও আগামী নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, এই নির্বাচন একতরফাভাবে করতে পারবে না সরকার। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানাপক্ষ এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের পথে ধীরে ধীরে এগোনোর পরামর্শও দিচ্ছে তারা। নেতাদের বিশ্বাস, সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কালীন তত্ত্বাবধায় সরকার বা কাছাকাছি কোনো প্রস্তাব মেনে নেবে। নেতারা বলছেন, সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে কথা বললেও প্রকৃত অবস্থা ভিন্ন। এমন অবস্থায় বিএনপি নেতারা ঝুকে পড়েছেন নির্বাচনের দিকে। ঠিক এ রকম সময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও তারেকের সঙ্গে দেখা করতে শিগগিরই লন্ডন যাচ্ছেন।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার দলের নেতাদের গত কয়েক মাসের বক্তব্য পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়, সামনের জাতীয় নির্বাচনের প্রকৃত অবস্থা কেমন হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা একেক সময় একেক রকমের উসকানিমূলক কথা বলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন। এতকাল তারা বিএনপিকে মাঠে নামাতে সব চেষ্টাই করেছেন। গত জানুয়ারিতে বিএনপিকে আন্দোলনে নামাতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। নেতাদের মতে, সরকার চাইছিল বিএনপি একটি যেনতেন আন্দোলনে নেমে পড়ুক। যাতে নেতাদের বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা মামলাগুলো দিয়ে দলটিকে নতুন করে পর্যুদস্ত করা যায়। এমনটা করতে পারলে সরকারের বিপক্ষে নাজুক অবস্থার মুখে পড়ত বিএনপি। কিন্তু সে ফাঁদে পা দেয়নি দলটির হাইকমান্ড। বিএনপি বরং শক্তিশালী তৃণমূল গড়তে নীরবেই কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পুনর্গঠনের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সে কাজ চলমান রেখেছেন তারা।
নেতাদের মতে, আন্দোলনে নামাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার দলের মন্ত্রীরা এখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিএনপির উল্টো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ‘শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে’, এমন কথায় বিএনপি নেতারা মোটেও হতাশ নয়। বরং দলটির নেতারা মনে করেন আগামী নির্বাচনে একটি ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে সরকার বাধ্য হবে। নির্বাচনের পরিবেশকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সরকার বরাবরই চাপের মধ্যে আছে। এমন অবস্থায় বিএনপি একটি সহায়ক সরকারের প্রস্তাব নিয়ে আসলে সরকার আরো বেশি চাপে পড়বে। নেতারা মনে করেন, একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটলে আগামী নির্বাচনও বয়কট করতে দ্বিধা করবে না বিএনপি। বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলসহ দেশের বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, নির্বাচনের পরিবেশকে সবার জন্য সহনীয় করতে হলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এমন অবস্থায় সরকারও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করতে চায় না বলে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তা মূলত বিএনপির প্রচারণার ফসল।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার বিএনপিকে নিয়ে যেভাবে কথা বলছে তা ঠিক নয়। মূলত সরকারও জানে বিএনপি কি করতে পারে। যদি বিএনপি কিছুই করতে না পারে তাহলে এত কথা কেন। একা একা নির্বাচন করে নিলেই তো হয়ে যায়। সরকারের মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। জনগণ ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে সঠিক সময়েই মাঠে নামবে। আর নিবন্ধন থাকবে না বা বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে, এমন কথার কোনোই গুরুত্ব নেই বিএনপির কাছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের দল তার নিজস্ব হিসেব নিয়েই চলে। কি করবে বা করবে না তাতো সরকার বলে দিলে হয়ে যাবে না। আর নিবন্ধন নিয়ে সরকারের এতটা বলার দরকার কি। এটা বিএনপির বিষয়।
অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়েও অতটা দুশ্চিন্তা নেই দলে। নেতারা মনে করেন, মামলাগুলো সরকারের ইচ্ছার ফসল। তাই উচ্চ আদালতে এসব মামলা টিকবে না। গতকাল দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর দুইটি মামলায় সরকারের কোনো অর্থ জড়িত নয়। তারপরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই দুইটি মামলা চলছে। তিনি আরো বলেন, কেউ যদি তার পিতার নামে বা তার স্বামীর নামে ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট করেন—এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, সেই স্ত্রী বা সন্তান তার স্বামী ও পিতার নামে যে ট্রাস্ট, তা থেকে অর্থ আত্মসাৎ করতে পারেন। এটা দেশের একটি মানুষও বিশ্বাস করে না। মামলা দুটিকে ভিত্তিহীন ও আইনবহির্ভূত মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রীকে অপমান ও হয়রানি করার জন্যই তা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এই মন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনের দুই রকম প্রয়োগ হচ্ছে। নাইকো মামলাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আসামি ছিলেন, আমাদের নেত্রীও আসামি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। আর আমাদের নেত্রীর মামলাটি চালু রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আইনের শাসন যে বাংলাদেশে নেই, এটা একটি মাত্র উদাহরণ দিলাম, আরো হাজার হাজার উদাহরণ আছে।
এদিকে, আগামী নির্বাচনে মাঠে নামতে প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি। শক্তিশালী সরকারি দলের বিপক্ষে মাঠে নামতেই দলটি শক্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের কাজে অনেকদূর এগিয়ে থাকলেও বিএনপিও বসে নেই। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপত্তি সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচনের কথা ভাবছে। গত কয়েক দিন থেকে দলটির ভেতর-বাহির পর্যালোচনা করে এমনই আভাস পাওয়া যায়।