মৌলভীবাজার সংবাদদাতা :::: বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদ রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল, মাঝে কিছুটা বিচ্যুতি হয়েছিল। কিন্তু এতো রক্তের বিনিময়ে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি এই সংবিধান কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতা। শুধু ধর্ম নিরপেক্ষ না। এর সঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রের যে বিধান, আইনের শাসনের যে বিধান এটার যদি প্রকৃত স্বাধীনতা নিরপেক্ষতা না থাকে তাহলে ধর্ম নিরপেক্ষতার কোনো মূল্য থাকে না। জনগণের অধিকার নিয়ে খেয়াল করি তাহলে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশ একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এবং সেটা স্বাধীনতার পর কিছু দিন আমাদের দেশে কিছুটা বিচ্যুতি হয়েছিল। এরপর আবার গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের বিচার বিভাগে যেসব অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনের বিধান রেখে দিয়েছিল সেই গুলোকে আমরা বাতিল করে দিয়েছি। এখন কিন্তু দেশ সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ একটা রাষ্ট্র।
গতকাল ১১ মার্চ শনিবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ রোডস্থ জগন্নাথ দেবের আখড়ায় শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ৫৩২তম আবির্ভাব ও শুভ দোল পূর্ণিমা উৎসব অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি বলেন, অনেক মন্দির আছে যেটা সরকারের খাস খতিয়ানে। অনেকগুলো শত শত বর্ষের আগের। অনেকে সেবায়েত ছিল যারা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা অনেকে মারা গেছেন বা যারা দান করেছে সেগুলো রক্ষিত হয়নি। অনেকেরই দেখলাম কাগজ পত্র নেই। আমি আপনাদের এইটুকু বলবো কাগজ না থাকলেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই মন্দিরও যদি না থাকে, এই মন্দির শত্র“ সম্পত্তি বা সরকারের খাস খতিয়ানে উঠে থাকে আপনাদের পূজা অর্চনা বা কোনো ধর্মীয় কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করছে না। তবে আপনাদের একটি শঙ্কা থেকে যায় যে এটা মন্দিরের নামে রেকর্ড না হয় হয়তো ভবিষ্যতে গোলমাল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আপনি যদি কোনো মন্দিরের ৬০ বৎসরের উপরে যদি অথবা যেকোনো পুকুরে আপনারা সবাই কাস্টমস অনুযায়ী সেখানে ব্যবহার করে আসেন এটা সরকারের খাস খতিয়ানে রয়েছে সেটি কাস্টমস অনুযায়ী জনগণের অধিকার থাকে। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা অধিকারের প্রণয়ন করতে পারি একাধিকভাবে ১২ বৎসরের উপরে। সরকার বা সরকারের কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আপনারা যদি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন আপনাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। সেই আলোকে আমরা বলতে পারি আপনাদের যেসব মন্দির আখড়া বা যেগুলোতে পূজা-অর্চনা করছেন ৬০ কেন শত বৎসর ধরে এটা আপনাদেরই সম্পত্তি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা খুব সুন্দর ভাবে পূজো অর্চনা বেশ বড় আকারেই করছেন। আপনারা একতা থাকেন, আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য এক থাকেন। তবে অধিকার আদায় আর একতা থাকতে গিয়ে আপনারা কোন মতেই আপনাদের পাশে যারা থাকে তাদের সাথে সংঘাতে জড়াবেন না।
ভারতের কলিকাতা থেকে আগত শাবতংশ প্রভুপাদ শ্রীমং গুরুরাজ কিশোর গোস্বামী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ্জালাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, কমলগঞ্জ উপজেলা চেযারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল ইউএনও মোবাশশেরুল ইসলাম, পিপি এসএম আজাদুর রহমান, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।