চাঞ্চল্যকর খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয় বলে জানান পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ঘটনার পাঁচ মাসের মধ্যে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই মামলার রায় প্রদান করা হলো। গত বছরের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। বুধবার রায় প্রদানকালে বদরুলকে আদালতে হাজির করা হলেও খাদিজা উপস্থিত ছিলেন না। বদরুল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। গত ১ মার্চ এই মামলা সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ অক্টোবর বিকেলে সিলেট এমসি কলেজে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। খাদিজাকে কোপানোর দায়ে ঘটনাস্থল থেকে জনতা শাহজালাল বিশ্ববদ্যিালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। বদরুলের চাপাতির আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়। খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হামলার পর প্রথমে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় খাদিজাকে। সেখানে ৪ অক্টোবর বিকালে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয় খাদিজাকে। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন কলেজছাত্রী খাদিজা। এদিকে, ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দন্ডবিধির ৩০৭, ৩২৪ ও ৩২৬ ধারায় বদরুলকে একমাত্র আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। ওইদিনই বদরুলকে বহিষ্কার করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বদরুল। ৮ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহপরান থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন খাদিজা। এর মাধ্যমে মামলার ৩৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।