• ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয়

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭

সিলেট সুরমা ডেস্ক :
নগরীতে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে একাধিক মোটরসাইকেল চুরি হওয়ায় নগরবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছেন। মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পরপরই খবর পেয়ে পুলিশ অভিযানে নামলেও তা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এছাড়া চুরি হওয়া এসব মোটরসাইকেল উদ্ধারে পুলিশের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। শহর থেকে প্রতিনিয়ত কারো না কারো ডিসকোবারী, পালচার, হিরো ফ্যাশনসহ দামী মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্রটি রাতে লোহার কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে কখনো বা দিনের আলোয় মোটরসাইকেলের পার্কিং থেকে শতশত লোকের ভীড়ের মধ্য থেকে সুকৌশলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এ চক্রটির টার্গেট দামী মটরসাইকেলগুলি। চুরি যাওয়া কিছু মটরসাইকেলের প্রভাবশালী মালিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদেরটা উদ্ধার করতে পারলেও বেশীরভাগই থেকে যায় অন্ধকারে। এলাকার চিহ্নিত মোটরসাইকেল চোরেরা এ এলাকা থেকে চুরি করে অন্য স্থানে নিয়ে বিক্রি করছে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু এসব চুরির ঘটনার কোন সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি চিহ্নিত কোন চোরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি পুলিশ। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন এভাবে একের পর এক মুল্যবান একাধিক মোটরসাইকেল চুরি হওয়ায় শহরবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছেন। চোরের কবল থেকে বাদ পড়ছে না সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি, পুলিশ, ব্যবসায়ি, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এনজিও কর্মী, ঠিকাদারসহ সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্র“য়ারী সোমবার রাতে আখালিয়া নেহারীপাড়া থেকে লিডিং ইউনির্ভাসিটির ছাত্র মোঃ সাহেদ আহমদের লেকসিটি সি ব্লক বাসা থেকে (সিলেট-হ-১৩-৫২৩৩) নং ফ্যাশন প্রো মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। এ ব্যাপারে ঘটনারদিন রাতেই তিনি কোতোয়ালী থানায় (নং-১০১৩) একটি জিডি এন্ট্রি করেন। গত ১৫ ফেব্র“য়ারী বুধবার দুপুরে আদালতপাড়া থেকে  সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য মো: ফজলুল হক সেলিম এডভোকেট এর মালিকানাধীন সাদা রং এর প্রাইভেট কার (ঢাকামেট্রো-ক-০৩-৫৬৪১) নং করলা টু গাড়ীটি চুরি করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে এডভোকেট মো: ফজলুল হক সেলিম বাদি হয়ে ওইদিন কোতোয়ালী থানায় (নং-১১৪৫) একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় পূবালী ব্যাংকের সামনে থেকে প্রথম আলোর সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল মেহেদীর মোটরসাইকেলটি চুরি হয়েছে। খবর পেয়ে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানাসহ কোতোয়ালি থানার পুলিশের দুটো দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষনিক সন্ধান তৎপরতা চালিয়েও চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের কোনো খোঁজ পায়নি। এ ঘটনায় রাতে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় একটি এজাহার দাখিল করা হয়েছে। উজ্জ্বল মেহেদী জানান, দুপুর একটার দিকে তিনি পেশাগত কাজে পাঠানটুলা মোড়ে যান। পূবালী ব্যাংকের পাঠানটুলা শাখার সামনে অন্যান্য মোটরসাইকেলের সঙ্গে তিনি তাঁর লাল রঙের ১০০ সিসি হিরো হোন্ডা স্পেনডার মোটরসাইকেলটি (ঢাকা মেট্টো-হ-৩৭-৮৬০৫) লক করে রেখে পূবালী ব্যাংকে যান। সেখানে মাছরাঙা টেলিভিশন সিলেটের ব্যুরোপ্রধান ও স্থানীয় একটি পত্রিকার ফটোসাংবাদিকে নিয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর মোটরসাইকেল নেই। সহকর্মী সাংবাদিকেরা তাৎক্ষনিক পুলিশকে জানালে জালালাবাদ ও কোতোয়ালি থানার টহল পুলিশের দুটো দল ঘটনাস্থলে গিয়ে চুরির সত্যতা পায়। তবে তাৎক্ষনিক খোঁজখবর করেও চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের কোনো সন্ধান পায়নি।
যোগাযোগ করলে সিলেট কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) নুরুল হুদা আশরাফী জানান, মোটরসাইকেলসহ চোরকে ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন জানান, নগরের বিভিন্ন নিরাপত্তা চৌকিতে মোটরসাইকলের বিবরণসহ তথ্য পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, নগরের বাইরেও এ ব্যাপারে তৎপরতা চালানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশের কাছে এলাকাবাসীরা জানান, পাঠানটুলা মোড় এলাকা জালালাবাদ, কোতোয়ালি ও বিমানবন্দর থানার অধীন হওয়ায় তিনটি থানার টহল পুলিশ নিয়মিত টহলে থাকে। এরপরও ঘটনাস্থল থেকে প্রায়ই মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষসহ আশপাশের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানকে পুলিশের পক্ষ থেকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হলেও ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
যোগাযোগ করলে পূবালী ব্যাংকের পাঠানটুলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. শফিক উদ্দিন ভূইয়া বলেন, সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাঠানটুলা মোড়ে নিয়মিত পুলিশ টহল থাকার পরও একের পর এক মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের।
১০ ফেব্রুয়ারী রাতে নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের খোজারখলা গ্রাম থেকে এক ব্যবসায়ীর বাসার কলাপশিপল গেইটের তালা ভেঙ্গে মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়। ঐ ব্যবসায়ী সাহেল আহমদ জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো ব্যবসা প্রতিষ্টান থেকে এসে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যান। পরদিন শুক্রবার থাকায় ঐদিন তিনি সকাল সাড়ে ৯টায় ঘুম থেকে উঠে দেখেন গ্যারেজের কলাপশিপল গেইটের তালা ভাঙ্গা এবং তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নেই। অনেক খুজাখুজির পরও আর (সিলেট-হ-১২-৭৭২৪) নং ডিসকোভারী মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর তিনি দক্ষিণ সুরমা থানায় সাধারন ডায়েরী করেছেন। যার নং ৫৮৮/১৭।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, নগরী ও আশপাশ এলাকায় রয়েছে সঙ্গবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট চক্র। এ সিন্ডিকেটের সাথে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অসৎ কিছু পুলিশ, ও প্রভাবশালী একটি মহল জড়িত রয়েছে। তারা যখনই মোটরসাইকেল চুরি করে তখনই ঐসব লোক খবর পেয়ে যায়। চুরির ঘটনা যদি প্রভাবশালী কোন ব্যক্তির হয়ে থাকে তবে একটু খোজাখুজির পর তা ফেরত দেয়া হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার জানান, ইদানিং নগরী আশপাশ এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি বেড়েছে শুনেছি। আমি সব থানার ওসি’দের নির্দেশ দিয়েছি চোর সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করার জন্য। এ জন্য নগরীতে অবৈধ মোটরযানের বিরুদ্ধে অভিযানও চলছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।