হবিগঞ্জ সংবাদদাতা :
সৌদি আরবে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করা হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কায়স্থগ্রামের সেই মেয়েটিকে দেশে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরবেলা মেয়েটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছায়। সেখান থেকে সিআইডি পুলিশ তাকে ঢাকাস্থ সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে প্রাথমিকভাবে জবানবন্দী গ্রহণ করে। বিকেলে তাকে ঢাকা থেকে এনে হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম লায়লা মেহের বানু’র আদালতে হাজির করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট তার খাস কামরায় জবানবন্দী গ্রহণ করে পরিবারের জিম্মায় দেন। সন্ধ্যায় সিআইডি পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেয়েটিকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য এডভোকেট কেয়া চৌধুরী জানান, মেয়েটি দালালদের খপ্পরে পড়ে সৌদি আরবে পাচার হয়েছিল। সেখানে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। পরিবারের কাছ থেকে তার উপর নিষ্ঠুরতার ঘটনা জানতে পেরে তিনি মেয়েটিকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেন।
বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে। তাদের সহযোগিতায় সিআইডির কর্মকর্তা শাহ আলম বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টন এলাকার গ্রীণ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ ট্রাভেল এজেন্সী থেকে দালাল চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেন। এ সময় পাচারের অপেক্ষায় থাকা হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ১৩বছরের এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় ২৫টি পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রার খাতা ও মোবাইল নাম্বার। আটককৃতরা হলো গ্রীণ বেঙ্গল ইন্টান্যাশনাল লিঃ-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজানুর রহমান, পরিচালক এরশাদ উল্লাহ ও আবু তাহের। তাদের মধ্যে আবু তাহের শায়েস্তাগঞ্জের ফরিদপুর গ্রামের রমিজ আলীর ছেলে, শাহজানুর রহমান ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার বাগদানা গ্রামের মৃত সিরাজুর রহমানের ছেলে ও এরশাদ উল্লাহ কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাতালিয়ার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তারা বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছে।
তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওইদিনই সৌদি আরবের দাম্মাম থেকে নবীগঞ্জের কায়স্থগ্রামের মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর মেয়েটিকে সৌদি আরবের একটি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে বাংলাদেশে প্রেরণের আদেশ দেন। আদালতের আদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস তাকে দেশে পাঠায়।
সন্ধ্যায় মেয়েটি হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সৌদি আরবে তার উপর পাশবিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে।
এ সম্পর্কে গত ১৫ ফেব্র“য়ারি মেয়েটি তার বাবা মা’র সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে নিজেকে উদ্ধারের যে আকুতি জানিয়েছিল তাতে সৌদি আরবে তার উপর পাশবিক নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে আসে। মোবাইলে রেকর্ড করা মেয়েটির কথা থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৯ নারী সেখানে এক সাথে বন্দী রয়েছে। তাদেরকে কয়েকদিনের জন্য একেকজন সৌদি নাগরিকের কাছে ভাড়া দেয়া হয়। সেখানে তাদের উপার্জিত টাকা দালালরা নিয়ে যায়। কেউ কোন কথা বললে তাকে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে আঘাত করা হয়। কথোপকথনের এক পর্যায়ে মেয়েটি তার বাবাকে বলে ‘বাবা আমাকে বাচাও। যেভাবে পার আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নেয়ার ব্যবস্থা কর’। মায়ের সাথে কথা বলার সময় সে মাকে বলে- ‘আম্মা আম্মাগো আমাকে বাঁচাও’।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামের দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পেতে দালালের খপ্পরে পড়ে গত ৬ ডিসেম্বর গৃহকর্মীর চাকুরী নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মামে যায়। সেখানে তার উপর শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন চলছিল। এমপি কেয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সিআইডি পুলিশ সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। সেই সাথে ঢাকার নয়াপল্টন এলাকার গ্রীণ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ ট্রাভেল এজেন্সী থেকে দালাল চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করে।
সিআইডি সিলেট অঞ্চলের এসআই সুমন মালাকার জানান, গ্রেফতারকৃত ৩আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।