আব্দুল আহাদ ::
হাজারো ঘটনার জন্মদাতা। তুচ্ছ ঘটনায় সড়ক অবরোধ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা। আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদ পদবী ব্যবহারকারি আবু সরকার এখন পলাতক। অবশেষে আসামির তালিকায় নাম উঠেছে তার। তবে আগেও নাম এসেছেলি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের মামলায়। তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতা বলে পার পেয়ে যান। এবার ও কি পার পেয়ে যাবেন নাটের গুরু আবু সরকার? এই প্রশ্ন সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়- দীর্ঘ দিন থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরিন কোন্দল চলছে। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত রয়েছেন। একপক্ষ অন্য পক্ষকে কোণঠাসায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এসব নেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ শ্রমিকরা। কয়েকদিন পর পর পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। তাই নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সম্প্রতি নানা অজুহাতেই ধর্মঘট ডাকে নামে বেনামে বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠন। শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের প্রভাব বিস্তারই অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। সিলেটে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা একত্রিত থাকলেও সম্প্রতি ট্রাক শ্রমিক লীগ নামে একটি সংগঠন করে আলাদা হয়ে আছেন আবু সরকার। তিনি ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন (২১৫৯) এর সাবেক সভাপতি ছিলেন। শ্রমিক নেতাদের আসকারা পেয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে শ্রমিকরা। রাস্তায় অবরোধ করে, টায়ার জ্বালিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। শনিবার সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহণ ধর্মঘট চলাকালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা। এঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা ও দলীয় কর্মীরা উপশহর মাইক্রবাস কার্যালয় ভাঙচুর করে। এরপর আবু সরকারের টিলাগড়স্থ অফিসে আগুন দেয় এবং বাসায় হামলা চালায়। শফিকুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকরা বলেন এসব ঘটনার জন্য আবু সরকারই দায়ী। শনিবার সকালে পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠকে সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন (১৪১৮) এর সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন (২১৫৯) এর সভাপতি দিলু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (৭০৭) এর সভাপতি মো. জাকারিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক আজাদ মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শুধু উপস্থিত ছিলেন না আবু সরকার। বিগত দিনে সিলেটের পরিবহন শ্রমিকরা হত্যা মামলার আসামীকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য একইভাবে রাজপথে নৈরাজ্য চালালেও এবার নগরীর সুবহানীঘাট এলাকায় পুলিশের হাতে মদসহ আটক দুই শ্রমিককে ছাড়িয়ে নিতে আন্দোলনে নামে আবু সরকারের বাহিনী। এদিকে মূল ধারার শ্রমিক নেতারা আওয়ামী লীগ নেতার গাড়িতে হামলার জন্য শ্রমিক নেতা আবু সরকার কে দায়ী করছেন। তারা তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায়ও নিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। একই সাথে শ্রমিক ইউনিয়নের ঐক্য রক্ষায়‘ট্রাক শ্রমিক লীগ’‘হেলপার লীগ’ সহ শ্রমিকদের মধ্যে গড়ে উঠা ভুঁইফোড় সংগঠনের লাগাম টেনে ধরার জন্য সিলেটের শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে হামলা ও ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আবু সরকার ও তার অনুসারী ২০ জনকে আজীবন বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃত অন্যরা হলেন, মুজিবুর রহমান মুজিব, আমীর উদ্দিন, আনোয়ার খান পাঠান, সোহেল আহমদ, আব্দুস শহিদ, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল মতিন, আমিনুল ইসলাম শাহিন, আব্দুল হামিদ, আবু ছায়েম, সাব্বির আহমদ পাখি, সালেক মিয়া, সাব্বির আহমদ, শফিক আহমদ, ফয়ছল মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, কালা মিয়া, শফিক মিয়া ও আবুল মিয়া। উল্লেখ্য যে গত শনিবার দুপুরে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর আবু সরকারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের গাড়িতে হামলা হয়। আগের দিন শুক্রবার রাতে মাদকসহ দুই শ্রমিককে আটকের পর তার নেতৃত্বেই মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে হামলা ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। পরদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে দুই থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায়ও আবু সরকারের নাম এসেছে। আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হলেও ওই ঘটনায় আবু সরকার জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার রাতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে দলের শীর্ষ নেতারাও প্রকাশ্যে পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের জন্য তাকে দায়ী করে বক্তৃতা করেন। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে আবু সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।