সিলেট সুরমা ডেস্ক ::
নিজের এবং ভাইদের উপর দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগে মামলার সঠিক তদন্ত ও হয়রানি থেকে মুক্তি চেয়েছেন ৩ সন্তানের জননী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার তুরুকখলা (সুড়িগাওঁ), গ্রামের মৃত আমির আলী মেয়ে মোছাঃ ফাহিমা আক্তার। বৃহস্পতিবার (১৬ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার উপর স্বামীর পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের নানা কাহিনী তুলে ধরেন এবং প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে ফাহিমা বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের নালিউরি গ্রামের মোঃ ওয়ারিছ আলীর পুত্র মোঃ আব্দুল মতিনের সাথে ২০০২ সালের ৩ এপ্রিল তার বিয়ে হয়। তার একে একে ৩টি সন্তান জন্মগ্রহন করে। স্বামী দুবাই থেকে ভরণপোষনের জন্য তাকে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু সেই টাকা শশুড় ওয়ারিছ আলী, শাশুড়ী আক্তারুন নেছা, ভাসুর সামছুল হক, ভাসুড়ের স্ত্রী ছালেহা বেগম ও হেতিমগঞ্জ পূর্বপাড়া গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে স্বামীর ফুফাতো ভাই খালেদ আহমদ তার কাছ থেকে জোরপূর্বক নিতে থাকেন। তারা কারণে অকারণে তাকে মারধর করে পিতার বাড়ি থেকে যৌতুক বাবদ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃস্টি করতে থাকেন। এরপর তার স্বামী লন্ডন যাওয়ার জন্যও পরিবারের সবাইকে নিয়ে তার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিতে পারায় নানাভাবে তাকে নির্যাতন করেন। এ পর্যায়ে ফাহিমা স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ও তুলেন। দুটি পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়াই ছিল আমার অপরাধ। আমার পুত্রদের পিতার ভূ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার জন্য বিবাদীরা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে করছেন। তারা আমাকে স্বামীর বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। আমি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২১ মার্চ ২০১৬ তারিখে গোলাপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-১০৫৯) করতে বাধ্য হই। এতে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এমনকি তারা ফাহিমাকে হত্যার ও চেস্টা করেন। এ প্রসঙ্গে ফাহিমা আরও বলেন, এ পর্যায়ে আমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে একটি দরখাস্ত মামলা (মামলা নং-১৭১/২০১৬ ) করলে গোলাপগঞ্জ থানার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মোঃ আশরাফুজ্জামান,(বিপি-৮৩১৩১৫৬৬৩৯)প্রতিবেদন দাখিলের সময় বিবাদীদের সাথে গোপন আঁতাত করে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি প্রদানের কথা উল্লেখ করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। চুড়ান্ত প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য সম্পর্কে ফাহিমা উপস্থিত সাংবাদিকদের আরও জানান, স্বামীর টাকায় ভাইয়ের নামে গাড়ি ক্রয়ের যে কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এ প্রতিবেদনের নারাজি প্রদান করেছি। এসব আমার প্রবাসী ভাইদের টাকায় কেনা হয়েছে। এরপর প্রবাসে থাকা অবস্থায় ৩১ মার্চ তার স্বামী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে তাকে তালাক দিয়াছেন মর্মে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত প্রদান করেন ফাহিমার ভাসুড় শামসুল হক। দরখাস্তে যে পাওনা বিষয় সম্পত্তি দাবি করা হয় তা সম্পূর্ন মিথ্যা বলে ফাহিমা আরও উল্লেখ করেন, এসব আমাদের হয়রানী ও ক্ষতিগ্রস্থ করার গভীর চক্রান্ত। পরে আমার শশুড় মোঃ ওয়ারিছ আলী সম্পূর্ন মিথ্যার আশ্রয়ে ঐ বছরের ২৮ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে আমাকেসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি সি, আর মামলা (নং ৮৪/২০১৬ ) দায়ের করেন। মামলার এজাহারে যে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা মোটেও সত্য নয়। তারা আমার ভাই রমিজ উদ্দিনকে হত্যারও হুমকী দেয়। হুমকির কারণে রমিজ উদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে বাধ্য হন। ফাহিমা নিরুপায় হয়ে হয়রানী করার অভিযোগ এনে তিনি ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন প্রদান করেন। আবেদনে ফাহিমার শশুড় মোঃ ওয়ারিছ আলী কর্তৃক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে দায়ের করা মিথ্যা তথ্য সংবলিত সি,আর মামলা এবং আদালত কর্তৃক প্রেরিত গোলাপগঞ্জ থানায় তদন্তনাধীন মামলাটির সঠিক তদন্ত ও হয়রানী থেকে মুক্তি দানের আবেদন জানান। ফাহিমা নিজের ৩ সন্তানসহ ভাইদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অযথা হয়রানী বন্ধের জন্য প্রশাসন, সাংবাদিক এবং সমাজের বিবেকবান মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার মা এবং ভাই রমিজ উদ্দিনসহ কয়েকজন আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।