স্টাফ রিপোর্টার:::::
সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সম্পূরক চার্জশিটে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে উগ্রপন্থী ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবীকে। এরমধ্যে পলাতক তিনজন, বাকি তিনজন কারাবন্দি।এছাড়া ফটো-সাংবাদিক ইদ্রিস আলীসহ ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্পূরক চার্জশিটে অভিযুক্ত ৬ জন হচ্ছেন, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ফালজুর গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে আবুল হুসাইন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমেদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিরেন্দ্রনগর (বাগলী) গ্রামের হারুন অর রশিদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহি ওরফে মান্নান ইয়াহিয়া ওরফে ইবনে মইন (২৪), ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশিদ আহম্মেদ (২৪) ও নগরীর মুন্সিপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)। তিনি নতুন করে অভিযুক্ত। এ ছাড়া অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক। বাকি তিনজন গ্রেপ্তার।
এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট ৩০২ ও ৩০ ধারায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছিল। অভিযোগপত্রটি আদালতে উপস্থাপন করা হলে পর্যবেক্ষণ আদেশে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী ধারা যুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী গত ১৮ জানুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার জিআর শাখায় জমা দিয়েছেন। গত শনিবার যোগাযোগ করলে সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী সন্ত্রাসবিরোধী ধারা যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার জিআর শাখা সূত্র জানায়, সম্পূরক চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) সঙ্গে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩-এর ৪০ ধারায় অনুমোদনেরও আবেদন করা হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারী সিলেটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর করা আবেদন অনুমোদন করে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া দৈনিক সংবাদ-এর ফটো-সাংবাদিক ইদ্রিস আলীসহ ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছ। ইদ্রিস ছাড়া বাকি ৯ জন হচ্ছেন, কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের মোহাইমিন নোমান, ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মো. সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ওরফে গামা, আমিনুল মল্লিক, জাকিরুল্লাহ ওরফে হাসান, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আহসান, জুলহাস বিশ্বাস, মো. জাফরান হাসান ও আবুল বাসার।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে কর্মস্থলে যেতে বাসা থেকে বের হয়ে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে অনন্ত বিজয় দাশকে (৩২)। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লেখতেন। তার লেখা ও সম্পাদিত বিজ্ঞান-বিষয়ক বই রয়েছে। বিজ্ঞান-বিষয়ক ছোট-কাগজ ‘যুক্তি’ নামে একটি পত্রিকা নিয়মিত সম্পাদনা করতেন। সিলেটে পরিচালিত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অনন্ত। ঘটনার একদিন পর অনন্তের বড় ভাই রতেœশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাত চার দুর্বৃত্তকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮ আগস্ট দাখিল করা চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে উপস্থাপন হলে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ৩০২ ও ৩৪ ধারায় দায়ের করা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দাখিল করা চার্জশিটে অনন্ত বিজয় দাশকে সুকৌশলে ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নৃশংসভাবে হত্যা করার বিষয়টি এসেছে। অপরাধের প্রকৃতি ও ধরণ বিবেচনায় মামলাটির বিচার ও চার্জশিট দাখিল সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আলোকে সমীচীন।
সম্পূরক চার্জশিটে সন্ত্রাসবিরোধী ধারা যুক্ত করা প্রসঙ্গে সিআইডির পরিদর্শকের করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আদালতে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্ত আসামিদের নিষিদ্ধ-ঘোষিত উগ্রবাদী তথা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় মামলার বিচার ও চার্জশিটে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আলোকে হওয়া সমীচীন। সন্ত্রাসবিরোধী আইন (সংশোধন) ২০১৩-এর ৪০ ধারার বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হলো।